ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে কুম্ভমেলা শুরু হচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৮ মে ২০১৮

মাদারীপুরে কুম্ভমেলা শুরু হচ্ছে আজ

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুরে আজ সোমবার শুরু হচ্ছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা। এক রাতের জন্য অনুষ্ঠিতব্য এ মেলায় প্রায় ২০ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে আয়োজকরা দাবি করেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি দীঘিরপাড় মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে শুরু হচ্ছে কুম্ভমেলা। ১৬৭ একর জমিতে এক রাতের জন্য আয়োজিত দেড় শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা মেলায় সমাগম ঘটবে বিভিন্ন জেলা ও পার্শ্ববর্তী দেশের ভক্ত ও সাধু-সন্ন্যাসীদের। এমন বিশাল আয়োজন বাংলাদেশের কোথাও আছে কী না তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ভিড়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে মূল মেলা আঙ্গিনায় পৌঁছতে ৫/৬ কিমি আগে যানবাহন থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, সত্য যুগে দেবতা ও অসুরদের সমুদ্র মন্থনে যে অমৃতসুধা উঠেছিল তা চারটি কুম্ভ পাত্রে ভারতের হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এর চার স্থানে রাখা হয়েছিল।এ ঘটনার পর থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরা কুম্ভ মেলার আয়োজন করে আসছেন। ১২৮৮ বঙ্গাব্দে (১৮৮১ খ্রিঃ) অর্থাৎ ১৩৭ বছর আগে ১৩ জন সাধু ১৩ কেজি চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে ১৩ জ্যৈষ্ঠ রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ির দীঘিরপাড় ভারতের কুম্ভমেলাকে অনুস্মরণ করে এ মেলার আয়োজন করেন। সেই থেকে রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় শ্রী শ্রী গনেশ পাগল সেবাশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এক রাতের মেলা হলেও চলে সকাল থেকে পরদিন ভোর রাত পর্যন্ত। প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাড়ি-ঘর, মাঠ-ঘাট ও ক্ষেত-খামারে কোন জায়গা খালি থাকে না মানুষের পদচারণায়। সকাল থেকেই দলে দলে জয় ডংকা বাজিয়ে ও জয় হরিব্বল ধ্বনি করতে করতে সাধু-সন্ন্যাসী ও ভক্তবৃন্দ বাসে, ট্রাকে, ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহন ও পায়ে হেঁটে আসতে থাকেন মেলা প্রাঙ্গণে। বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, চিটাগং, রংপুর, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, গৌরনদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে আসা মানুষের স্রোত শুধু মেলামুখী। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও নেপাল থেকেও বহু ভক্ত, সাধু-সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে এতিহ্যবাহী এ মেলায়। মেলায় আসা হাজার হাজার সাধু-সন্ন্যাসী ও ভক্তরা একতারা আর দো-তারায় সুর দিয়ে সারা রাত মেতে থাকেন । দেশ বিদেশ থেকে আসা এসব সাধু-সন্ন্যাসী ও ভক্তরা প্রার্থনা, আরাধনা, পূজা-অর্চণা, ধর্মীয় সঙ্গীত, নৃত্য-বাদ্য-বাজনা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে রাত অতিবাহিত করেন। এ মেলা উপলক্ষে ৭ দিন পূর্ব থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে দোকানিরা। বাঁশ-বেতের শিল্প কারুকাজ খচিত গৃহস্থালি মালামাল, মৃৎশিল্প বা মাটির তৈরি তৈজসপত্র, বাহারি মিষ্টি, দৃষ্টি আকর্ষণীয় খেলনা ও বাহারি প্রসাধনী পণ্য দিয়ে সাজাবে কমপক্ষে ২ সহস্রাধিক বিভিন্ন ধরনের স্টল। মেলা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণব বিশ^াস বলেন, ‘মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আগত ভক্তদের আপ্যায়নের জন্য চিড়া, গুড়, চাল, ডাল ও খিঁচুড়ি প্রসাদের আয়োজন করা হয়েছে। মেলা উদ্যাপনে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’ রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, ‘মেলা শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগ থেকেই কদমবাড়ী মেলার পুরো এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য পুলিশ প্রশাসন সজাগ রয়েছে।’ মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ বিভাগ) উত্তম প্রসাদ পাঠক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ডিএসবি, ডিবি, র‌্যাব-৮ এর সদস্য ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের তল্লাশি করাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।’
×