ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তালা ইউএনও’র দুর্নীতি অনিয়মের প্রতিবাদে আলটিমেটাম

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৭ মে ২০১৮

তালা ইউএনও’র দুর্নীতি অনিয়মের প্রতিবাদে আলটিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান ও পরিষদের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, জটিলতা আর অনিয়ম প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ২৪ মে পরিষদের মাসিক সভায় এক ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে মারতে যাওয়া ও পরে পুলিশ দিয়ে সকল সদস্যদের গ্রেফতার করার চেষ্টার প্রতিবাদে নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এখন মুখোমুখি। এরই জের ধরে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদে এবং তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউপি চেয়ারম্যান বৃন্দ। উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা সাতক্ষীরা ১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহ সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত থেকে চেয়ারম্যানদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এ বিষয়ে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনদ কুমারসহ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয় ও ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রত্যাহার দাবি করে তার স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে ৩ জুন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। ৪ জুন এক সমাবেশের মাধ্যমে বৃহত্তর কর্মসূচী দেয়া হবে বলে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়া হয়। এই অভিযোগপত্রে স্থানীয় সংসদ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য সুপারিশ করেছেন। তবে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে আনা চেয়ারম্যানদের অভিযোগ অস্বীকার করে শনিবার দুপুরে বলেন, টিআর, কাবিখাসহ এডিবির প্রায় ২ কোটি টাকার কাজ না করেই এই টাকা খেয়ে ফেলতে বাধা দেয়ার কারণে চেয়ারম্যানরা তার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অপপ্রচার দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। পরিষদের মিটিংএ ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনকে মারতে উদ্যত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন এর কোন প্রমাণ নেই। তিনি পাল্টা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তাকে মারতে আসেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন বিএনপি কর্মী চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ৩টি নাশকতার মামলা থাকা অবস্থায় কি করে পরিষদের মিটিংয়ে আসেন সেটি জানার বিষয়। নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি, চেয়ারম্যানরা টিআর, কাবিখাসহ এডিবির কাজের প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেনি। এ ছাড়া টিআর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হয়নি এবং প্রকল্পের অনুমোদনও মেলেনি। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ হোসেনের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পরিষদের অন্যান্য চেয়ারম্যানদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছে গত দুবছর ধরে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সাবেক জেলা প্রশাসকও সাবেক বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে এমপিসহ পরিষদের সদস্যরা কয়েকদফা বৈঠক করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান সাংসদ মোস্তফা লুৎফুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার ও চেয়ারম্যানগণ বলেন, ২০১৬ সালের ৯ মে যোগদানের পর থেকে নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন ঘুষ গ্রহণ ও নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদকে ভীতিকর জায়গায় পরিণত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৪ মে মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি কয়েকজন চেয়ারম্যানকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে উদ্যত হন। এমন কি তাদের আটকে রেখে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ারও হুমকি দেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয় ইউএনও ফরিদ হোসেন তালা উপজেলার সাড়ে পাঁচ লাখ জনগোষ্ঠীর কাছে এখন এক আতঙ্ক হিসাবে দেখা দিয়েছেন। তার সঙ্গে বসে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার কোন পরিবেশ নেই বলেও উল্লেখ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮ জন চেয়ারম্যান ছাড়াও দুই ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইকতিয়ার হোসেন ও জেবুন্নেসা খানম এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের চার সদস্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন।
×