ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুর সিটি দিয়ে শুরু হবে এই বিশাল ভোটযজ্ঞ

ঈদের পরই শুরু হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের পুরোদস্তুর কর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৭ মে ২০১৮

ঈদের পরই শুরু হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের পুরোদস্তুর কর্মযজ্ঞ

শাহীন রহমান ॥ ঈদের পরই শুরু হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের টানা ভোটের যজ্ঞ। গাজীপুর সিটি নির্বাচন থেকে শুরু হবে এই যজ্ঞ। শেষ হবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন এবং আগামী বছরের উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। মাঝে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচন ছাড়াও অনেকগুলো স্থায়ী নির্বাচন রয়েছে। টানা নির্বাচনের মধ্যেই বাকি সময় পার করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনের ঘর গোছাতে শুরু করেছে তারা। আগামী ২৬ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়াও জানা গেছে আগামী জুলাইতেই রাজশাহী, বরিশাল এবং সিলেট সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে কমিশনের। এছাড়াও অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার চিন্তা-ভাবনা করছে ইসি। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাই বেশি। এছাড়াও জাতীয় নির্বাচনের পরপরই আগামী বছর দেশে প্রায় ৫শ’ উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়টি ইসি মাথায় রেখেছে। এসব নির্বাচন ঘিরেই ইসির সার্বিক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল কমিশনের বৈঠক শেষে কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আগামী অক্টোবরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তবে কত তারিখে তফসিল ঘোষণা হবে তা তিনি স্পষ্ট করেননি। তবে ইসি সূত্রে জানা গেছে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ নির্বাচন ধরে জাতীয় নির্বাচনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের কমপক্ষে ৪৫ দিন হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আদালতের আদেশে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পর আগামী ২৬ জানুয়ারি এ সিটির নির্বাচনের জন্য নতুন করে তফসিল ঘোষণা করেছে কমিশন। এর আগে গত ১৫ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সঙ্গে এ সিটির নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত এক রিটের প্রেক্ষিতে গত ৬ মে গাজীপুরের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। এরপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রার্থীদের এবং কমিশনের আপীলের প্রেক্ষিতে আপীল বিভাগের এক রায়ে এ সিটির ওপর থেকে নির্বাচনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় আদালত। ফলে এ সিটি নির্বাচনের জন্য ঈদের পর আগামী ১৮ জুন থেকে পুনরায় প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে নামবেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের এমপিদের প্রচারে বিষয়টি মাথায় রেখেই সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। রবিবার তারা আচরণবিধি সংশোধনের পর আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন ভেটিংয়ের জন্য। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর সংশোধিত আচরণবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। গেজেট হয়ে গেলেই সিটি নির্বাচনের এমপির ওপর থেকে প্রচারে অংশ নেয়ার নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাবে। এর আগে স্থানীয় যে কোন নির্বাচনেই এমপিতে প্রচারে অংশ নেয়ার নিষেধাজ্ঞা ছিল। ইসি সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর যে কোন সময়ে অথবা গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পরই রাজশাহী, বরিশাল এবং সিলেট সিটিতে তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে এসব সিটিতে নির্বাচনের সব প্রাথমিক আয়োজন সম্পন্ন করেছে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনের ঘর গোছাতে শুরু করেছে ইসি। জানা গেছে ঈদের পর জুলাইয়ের যে কোন সময়ে তিন সিটিতে একসঙ্গে নির্বাচনের জন্য তফসিল দেয়া হবে। সিটি নির্বাচনের শেষ হওয়ার পর জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনগুলোরও মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে। রাজশাহীর ৫ অক্টোবর, সিলেটের ৮ অক্টোবর ও বরিশালের ২৪ অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মেয়াদ শেষ হয়ে আসার কারণে আইন অনুযায়ী রাজশাহীতে ৯ এপ্রিল থেকে ৫ অক্টোবর, বরিশালে ২৭ এপ্রিল থেকে ২৩ অক্টোবর, সিলেটে ১৩ মার্চ থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানা গেছে, এ বছর জাতীয় নির্বাচন থাকায় নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে আগেভাগেই সিটি নির্বাচন করতে চায় ইসি। এ কারণে জুলাইতেই এ তিনটি নির্বাচন সম্পন্ন করার দিকে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ঈদের পরপরই এসব সিটিতে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এ ছাড়াও অক্টোবরে শেষ থেকে শুরু করে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য অক্টোবরেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। যদিও এ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ইসির পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে জানা গেছে ডিসেম্বর ধরেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা উল্লেখ করেছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি মধ্যে থাকলেও ইসির ভাবনায় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে। এজন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেও তারা ঘর গোছাতে শুরু করেছে আরও আগ থেকে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে তারা নির্বাচনী কেনাকাটা শুরু করেছে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজও শুরু করে দিয়েছে তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ সংসদ, সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ইসিতে। জাতীয় পরপরই উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে কমিশনের। এ লক্ষ্যে কেবল কাগজ কেনার জন্যই এর আগেই গত মার্চ মাসে নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতর। অপরদিকে কমিশনের এক চিঠিতে অধিদফতরকেও জানানো হয়েছে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসব নির্বাচন হলেও তিন ভোট সামনে রেখে নবেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য সব কাগজ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অধিদফতর জানায় অর্থ পেলে সব কার্যক্রম নেয়া হবে। জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে। যা আগামী জুন মাসের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। নির্বাচন শুরুর ৫-৬ মাস আগেই কাগজ সংগ্রহের যাবতীয় কার্যক্রম নিতে হবে। সেক্ষত্রে একাদশ সংসদ নির্বাচনের মুদ্রণ কাজ শুরুর অন্তত তিন মাস আগে কাগজের মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে আগামী বছরের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে। এ বছরের ডিসেম্বর থেকে মুদ্রণ কাজ শুরুর সম্ভাব্য সময় ঠিক করেছে ইসি। এ নির্বাচনে ১ লাখ ২০ হাজার রিম কাগজ দরকার হবে বলে জানা গেছে। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন পরিচালনা খাতে বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের পারিশ্রমিক, নির্বাচনী মালামাল (স্ট্যাম্প প্যাড, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি ইত্যাদি) কেনায় ব্যয় হবে। এছাড়াও ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, নির্দেশিকা, ম্যানুয়াল, মনিটরিং সেল, প্রচারণা, ভোটকেন্দ্র-ভোটকক্ষ নির্মাণ, কক্ষ সংস্কার, ভোট কেন্দ্রের বেষ্টনী নির্মাণ, ভোটকেন্দ্রের মনিহারি দ্রব্য কেনা, পরিবহন খরচ, কর্মকর্তাদের ডাক, তার, বার্তাবাহক, জ্বালানিসহ বিভিন্ন নির্বাচনী সামগ্রী কেনায় অর্থ ব্যয় হবে। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাচনী ফলাফল আদান প্রদান, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও মামলা পরিচালনা, বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জ্বালানি খরচ, সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের যাতায়াত খাতে ব্যয় করা হবে। এদিকে ভোটের মালামাল ক্রয়ের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসি। জানা গেছে, ইতোমধ্যে ইসির পক্ষ থেকে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন বিভাগ, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামের তালিকা সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সারাদেশে তৈরি করা হবে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র। আর এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং কর্মকর্তা। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে। এ কারণে এখন থেকেই সিটি নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন এবং আগামী বছরের উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে ঘর গোছাতে শুরু করেছে তারা।
×