ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খেয়ালি প্রকৃতি

হঠাৎ স্বরূপে গ্রীষ্ম, বৃষ্টির ছাতা বাঁচাল রোদ থেকে

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৭ মে ২০১৮

হঠাৎ স্বরূপে গ্রীষ্ম, বৃষ্টির ছাতা বাঁচাল রোদ থেকে

মোরসালিন মিজান ॥ গ্রীষ্ম সেই কবে শুরু হয়েছিল! শুরু হয়েছিল বটে। প্রকৃত রূপটি দেখা যায়নি। বরং আগেভাগে নেমে এসেছিল বর্ষা। প্রতিদিন বৃষ্টি। গ্রীষ্মের কথা অনেকেই ভুলতে বসেছিলেন। কিন্তু এত সহজে ভুলে গেলে চলবে? গ্রীষ্ম যেন গোস্বা করে ছিল। শনিবারের সূর্য তাই হঠাৎ করেই উত্তাপ বাড়িয়ে দেয়। খরতাপে পুড়ে রাজধানীবাসী। ষড়ঋতুর প্রথমটি স্বরূপে সামনে আসে। বিদায় বেলায় জানান দিয়ে যায় অস্তিত্ব। এর আগে গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ সাধারণত রোদের হয়। গরমের হয়। কালবৈশাখীও আঘাত হানে। তবে সকাল বিকেল বৃষ্টি, টানা বর্ষণ খুব কম দেখা যায়। এবার তাই হচ্ছিল। গ্রীষ্মে বর্ষার রূপ দেখছিল বাঙালী। শহর ঢাকা নিত্য ডুবছিল। এমনকি শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছ সিলেট জেলায়। ময়মনসিংহে ৬২, মাদারীপুরে ৩০, চাঁদপুরে ২৩ এবং ফরিদপুর ও রাজধানী ঢাকায় ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর পরই বদলে যাওয়া। শনিবার দুপুরের আগে আগে রাস্তায় নেমে তাই অবাক হতে হলো। বাড়ির বাইরে আসতেই কড়া রোদ। সূর্য যেন কয়েক হাত নিচে নেমে এসেছে। উপরের দিকে তাকানো যায় না। আপনি বুজে আসে চোখ। গরমটাও যে সে ছিল না। ঘামে ভিজে গিয়েছিল শরীর। কবির ভাষায় বললে ঘাম ঝরে/দরদর/গ্রীষ্মের দুপুরে/খাল বিল/চৌচির,/জল নেই পুকুরে...। শহর ঢাকায় পুকুর খুঁজে জল মাপা মুশকিলের কাজ। তবে ঘামে ভেজা শরীর বার বার দেখা গেছে। জামা পিঠের সঙ্গে এমনভাবে লেপ্টে গিয়েছিল যে, সামান্য বাতাস ঢোকার সুযোগ পায়নি। এই তাহলে গ্রীষ্ম? স্বরূপে ফিরল বুঝি? গরমে হাসফাঁস করতে করতে একে অন্যকে বলছিলেন পথচারীরা। দুপুরের আগে আগে প্রেসক্লাব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একদল মানুষ ফুট ওভার ব্রিজের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। রোদ থেকে বাঁচতেই সেখানে আশ্রয় নেয়া। বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সবাই। নূরুন নবী নামের এক সরকারী কর্মচারী বললেন, এতদিন তো ভুলেই ছিলাম গ্রীষ্মের কথা। আজ হঠাৎ কী হলো বুঝতে পারছি না। গরমে গা পুড়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম। আজ রোদ সহ্য করতে না পেরে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। ফার্মগেটে পুলিশ বক্সের পাশে ছোট্ট একটি গাছ। গাছও বলা যায় না। সবে উপরের দিকে বাড়ছে। তবে পাতাগুলো বেশ বড়। ঘন পাতার নিচে দীর্ঘ ছায়া পড়েছে। সেখানে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন সাকিরা পারভীন। বললেন, কাওরান বাজারে আমার অফিস। এ জায়গাটুকু হেঁটেই চলে যাই। আজ গরমে ক্লান্ত হয়ে থেমে গেলাম। আগামী দিনগুলোতে গরম বাড়বে কী না, সে নিয়ে বেশ আতঙ্কিত বলেই মনে হলো তাকে। আহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে। ৩৮.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থাকে স্বাভাবিক বলেই ব্যাখ্যা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তাদের মতে, এতদিন যা হয়েছে সেটাই ছিল অপ্রত্যাশিত। গ্রীষ্ম কালে প্রতিদিন বৃষ্টিপাত আবহাওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এখন লা নিনো চলছে। এর কারণেই বর্ষার আগে এত বৃষ্টিপাত। অবশ্য ভ্যাপসা গরম দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। কারণ, ইতোমধ্যে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। শনিবার সকাল নয়টায় আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে দু-এক জায়গায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এর সঙ্গে বিজলি চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। অস্থায়ীভাবে বাতাসের গতি ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার হতে পারে। অবশ্য বৃষ্টি হলেও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এভাবে ভ্যাপসা গরম মনে করিয়ে দেবে গ্রীষ্মের কথা। তবে ভয়ের কিছু নেই। কয়েকদিন পরই বর্ষা। আবহাওয়া শীতল হবে। কমতে পারে দুর্ভোগ।
×