ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোজার শুরুতেই আতর টুপি জায়নামাজ কিনতে মুসল্লিদের ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২৭ মে ২০১৮

রোজার শুরুতেই আতর টুপি জায়নামাজ কিনতে মুসল্লিদের ভিড়

ওয়াজেদ হীরা ॥ সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। মুসলমানদের কাছে রমজান সংযম, আত্মশুদ্ধি এবং ত্যাগের মাসও। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইতোমধ্যেই মাসব্যাপী রোজা পালন শুরু করেছেন। রমজান শুরুর মাধ্যমে নামাজ রোজা পালনের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় বিভিন্ন মার্কেটে ভিড় লেগেছে। বিশেষ করে আতর, টুপি জায়নামাজের দোকানগুলোতে ব্যস্ত বিক্রয়কর্মীরা। এর বাইরেও ক্রেতাদের কাছে তসবিহ, মেসওয়াক ও ধর্মীয় বইপুস্তকের চাহিদা বেড়েছে। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটসহ একাধিক মার্কেটে আতর টুপি জায়নামাজ কেনার ভিড় দেখা গেছে। বিক্রেতাদেরও ফুসরত ফেলার সময় নেই। ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে আছে আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের টুপি। এসব টুপির আবার আছে বিভিন্ন নামও। টুপির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের মধ্যে গোল ও কিস্তি টুপির চাহিদাই সব থেকে বেশি। একেক টুপির একেক রকমের ডিজাইন। কোনটা লাল, কোনটা নীল। কোনটা আবার দুটো রঙের সংমিশ্রণে। তবে সব ধরনের টুপির মধ্যেই সাদা রঙের প্রাধান্যটাই বেশি। আছে নতুনত্বের ছোঁয়াও। বাহারি রঙের কাপড় ও সুতার ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন টুপিতে। কোনটা হাতে নক্সা করা, কোনটা প্রিন্ট করা, কোনটা আবার একেবারে সাদামাটা। আর এসব টুপি বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ১শ’ থেকে পনেরোশ’ টাকা পর্যন্ত। সাধারণত শুক্রবার জুমা নামাজ থাকায় মুসল্লিদের ভিড় বেশি থাকে। এবার প্রথম রমজান শুক্রবার হওয়াতে ঐদিন মুসল্লিদের ভিড় ছিল আরও কয়েকগুণ বেশি। শুরু থেকেই এসব দোকানে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে দেখা গেছে, রোজা শুরু হতে না হতেই ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে নিয়েছেন বিভিন্ন ঘরানার টুপি দিয়ে। তবে চাহিদাও যে একেবারে কম তা নয়। হাতের কাজ করা গোল টুপি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। তবে ৫০ থেকে ১৫০ টাকার টুপি কেনার চাহিদাই বেশি। আব্দুল হালিম নামের ক্রেতা বলেন, প্রতিদিনই নামাজ হয়ত পড়তে পারি না তবে রমজান আসলে চেষ্টা করি। টুপি জায়নামাজ কিনলাম। বাকিটা আল্লাহ যদি নামাজ পড়ার তৌফিক দেন। ফার্মগেট এলাকা থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য আতর আর টুপি কিনলেন হামিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার রোজার সময় এই মসজিদে এসে নামাজ পড়তে ভাল লাগে। তাই আমরা চার বন্ধু প্রতিবছরই এখানে নামাজ আদায় করি। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের টুপি বিক্রেতা ওয়াদুদ বলেন, রোজা আসলেই ব্যবসায় বিক্রি বেড়ে যায়। তবে পুরো রমজানসহ ঈদের সময় টুপি বিক্রি বাড়ে বলেও জানালেন তিনি। আরেক বিক্রেতা সালাউদ্দিন বলেন, প্রথম রোজা থেকেই বেশ ভাল বিক্রি হচ্ছে। টুপির চাহিদা বেশি। এরপর বিক্রি হচ্ছে আতর। তবে জায়নামাজের চাহিদা খুব একটা নেই বলেও জানান তিনি। বিক্রেতা সালাউদ্দিন আরও বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা মতো প্রতি বছরই টুপির নানা ডিজাইন পরিবর্তন হয়। এবারও ব্যতিক্রম নয় বলেও জানালেন তিনি। বায়তুল মার্কেটের ধর্মীয় বিভিন্ন বই বিক্রি করছে কবির উদ্দিন। তিনি বলেন আমাদের এখানে মেসওয়াক বিক্রি প্রতিদিনই বেশ ভাল। এর বাইরে কেউ কেউ ধর্মগ্রন্থ কোরানসহ অন্যান্য কিতাবও কিনছেন। এদিকে সারাবছর আতরের তেমন চাহিদা না থাকলেও রমজান ও ঈদের সময় এটি বিক্রি বেশি হয় বলে জানালেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের এক আতর বিক্রেতা। তিনি বলেন, রমজানের সময় দেশী-বিদেশী আতর দোকানে রাখার চেষ্টা করি। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, দুবাই, ভারত ও ফ্রান্সের আতর পাওয়া যাচ্ছে চাহিদা মতো। বেশিরভাগ দোকানে আতর বিক্রি হচ্ছে তোলা হিসেবে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভিন্নতার ক্ষেত্রে আতরের দামেও কিছুটা পার্থক্য দেখা গেছে। বায়তুল মোকাররম মার্কেটে এক তোলা আতরের দাম কখনো কয়েক হাজার টাকাও হাঁকা হচ্ছে। দুবাইয়ের আজমল কোম্পানির এ আতরের নাম দেহান-আল-উদ। বিক্রেতা আবদুল গাফ্ফার বলেন, বিখ্যাত আজমল এ্যান্ড কোম্পানির ২০ রকমের আতর রয়েছে এখানে। রাজধানীর কাকরাইল, নিউমার্কেট ও চকবাজারে এবার ভারত ও দুবাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানির আতরের চাহিদা বেশি বলে জানালেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে ‘মাসক ইন্ডিয়া’ নামের আতর পাওয়া যাচ্ছে প্রতি তোলা ২০ হাজার টাকায় বলে জানা গেছে। বুলগেরিয়ান গোলাপ, সুইস এরাবিয়ান, রাসাসি, উদ-আল-আনফার, সাইকো, মুশাহির আলম, হামিল আল মিসক, ভারতের মেশকে আম্বরসহ নানা নামের আতর বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। কাকরাইল মসজিদ ও এর আশপাশ এলাকার দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে রেড রোজ, লর্ড, আত্তাবফুল, মদিনা, আলিফ, গোল্ডেন নামের আতর। বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ছাড়াও বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে যেসব নামের আতর পাওয়া যায় এর মধ্যে জেসমিন, রোজ, দিদারুবা, জান্নাতুল ফেরদৌস ২শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দরবার, এনজেল ও জমজম আতর বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়। মর্নিং কুইন নামের আতর বিক্রি হয় ১৫০০-২০০০, এরাবিয়ান বেলি ১০০০-১৫০০, আসওয়াদ ১০০০-১৪০০ টাকায়। এছাড়া লাইলাতি ও মমতাজ ১৩০০-১৫০০, ভারতের বেলি ৫শ’-৭শ’, ব্লু লেডি, ব্লুু ফোরম্যান ৬শ’-৮শ’, কুলম্যান ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী আতরের মধ্যে হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, বেলি ও নাইট ফ্লাওয়ার বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটসহ অন্যান্য মসজিদের সামনে দেখা গেছে, মুরব্বিরা মেসওয়াক, সুরমা ও তসবিহ কিনছেন। জৈতন ও নিমের মেসওয়াক বিক্রি হচ্ছে ১০-৪০ টাকায়। অবশ্য একই আতর একেক মার্কেটে দামের ভিন্নতাও দেখা গেছে। কম দামের আতরের ক্রেতাদের বেশির ভাগই শ্রমজীবী, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। এদিকে বায়তুল মোকাররম ছাড়াও নিউমার্কেট, লালবাগ, কারওয়ানবাজার, মহাখালি বড় মসজিদসহ প্রতিটি মসজিদের সামনেই কমবেশি এসব পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন এই ব্যবসাটা অনেকটাই মসজিদ কেন্দ্রিক হয়। মুসলমানরা মসজিদে যাওয়া বা আসার সময় পছন্দ হলে কিনে নেন বলে মসজিদের আশপাশে এই ব্যবসা বেশি হয়। টুপি আতরের বাইরে জায়নামাজের দোকানগুলোতেও ব্যবসা জমজমাট দেখা গেছে। নিউমার্কেটে মসজিদের সামনে কথা হয় আলাউদ্দিন নামের ক্রেতার সঙ্গে। তিনি মাঝারি সাইজের একটি জায়নামাজ কিনলেন ৭০০ টাকায়। দাম নিয়ে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, আমরা সারা বছর যাই করি রোজা আসলে সবাই সংযম হই। আল্লাহ নৈকট্য লাবের সব চেষ্টাই সবাই করে। আর রমজান সেই মাসই। একই মার্কেটে মেসওয়াক বিক্রেতা মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, মেসওয়াক ব্যবহার করা নবীর সুন্নত। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ পণ্য কিনেন। মসজিদের বাইরেও অনেক সময় মার্কেটে এসব পণ্য পাওয়া গেলেও সেখানে ততটা জমজমাট দেখা যায়নি। বিভিন্ন মার্কেটে দেখা গেছে, বেশি বিক্রি হচ্ছে তুর্কী, পাকিস্তানি এবং চায়না জায়নামাজ। প্রতিটি জায়নামাজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। তসবির দাম নির্ভর করে পাথরের ওপরে। যেসব পাথর বেশি চলছে, তার মধ্যে রয়েছে আকিরা পাথর, ক্রিস্টাল, ইন্ডিয়ান, ফাইবার, রেডিয়াম, কাঠ এবং ডিজিটাল। রাজধানীর বড় বড় মসজিদ, মাদ্রাসা, মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোর সামনের ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে টুপি, জায়নামাজ, আতর, সুরমা ও তসবিহ। এ বেচাকেনা চলবে ঈদের নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। বিক্রেতারাও প্রত্যাশা করছেন সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে।
×