ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আসানসোলে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি-লিট ডিগ্রী গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী

নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা বাংলাদেশ গড়ে তুলছি

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৭ মে ২০১৮

নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা বাংলাদেশ গড়ে তুলছি

বিডিনিউজ ॥ ভারতের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট)’ ডিগ্রী নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষ সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক এই ডিগ্রী দেয়া হয়। এই ডিগ্রী দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাধন চক্রবর্তী বলেন, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এবং গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রাখার জন্য সম্মান জানানো হলো শেখ হাসিনাকে। ভারতে বাংলাদেশের জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীর দিনে তার নামে প্রতিষ্ঠিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হলো ডি-লিট ডিগ্রী। অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শেখ হাসিনা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে দেয়া এ সম্মান ‘সমগ্র বাঙালী জাতিকে উৎসর্গ’ করার ঘোষণা দেন। ‘এই সম্মান শুধু আমার নয়, এ সম্মান বাংলাদেশের জনগণের।’ জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীর দিনে ভারতে তার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া হলো সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার জন্য আজকের দিনটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে, কবির জন্মদিন উপলক্ষে আমি তার জন্মভূমিতে আসতে পেরেছি এবং তারই নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট)’ ডিগ্রী প্রদান করা হলো।’ বিশেষ সমাবর্তন ও ডি-লিট প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গওহর রিজভী, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কবি নজরুল, যিনি সব সময় আমাদের চেতনায় জাগ্রত থাকেন, কারণ আমাদের বাংলা সাহিত্যের আকাশে নতুনের কেতন উড়িয়ে ধূমকেতুর মতো ছিল বিদ্রোহী কবির আগমন এবং বাংলা সাহিত্যে তিনি সোনার ফসলে ভরিয়ে গেছেন।’ “তিনি শুধু যে কবি ছিলেন তা নয়, তিনি ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, নাট্যকার, নাট্যাভিনেতা, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সৈনিক-কোথায় না তার বিচরণ ছিল। কবি নজরুল ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী।’ হামদ-নাতের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম এবং শ্যামা সঙ্গীত, কীর্তন বৈষ্ণব গীতি রচনা করে হিন্দুধর্মের মানুষের কাছে যাওয়ার বিরল প্রতিভা কবি নজরুলের ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলা ভাগ হতে পারে, কিন্তু নজরুল-রবীন্দ্রনাথ ভাগ হয় নাই। সকলেই দুই বাংলার।’ এ সময় অন্নদাশঙ্কর রায়ের কবিতার উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে বিলকুল/ সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে /ভাগ হয়নি কো নজরুল।’ ‘সত্যিই নজরুল ভাগ হয়নি,’ বলেন শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের ‘জয় বাংলা’ সেøাগান নজরুলের কবিতা থেকে নেয়ার কথাও বলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর তরুণ বয়সে নজরুলের সঙ্গে পরিচয় এবং নজরুল সাহিত্য দ্বারা বঙ্গবন্ধুর উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একজন ছিলেন সাহিত্যের কবি, আর অন্যজন ছিলেন রাজনীতির কবি।” দুজনই অসাম্প্রদায়িক ও শোষণ-বঞ্চনাহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখার কথাও তুলে ধরেন তিনি। “কবি নজরুল অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী ছিলেন। সেই চেতনায় আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি।” শেখ হাসিনা সমাবর্তনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করার আহ্বান জানান। সকালে কলকাতা থেকে বিমানে দুর্গাপুরের কাজী নজরুল বিমানবন্দরে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সেখান থেকে সড়কপথে দুপুরে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। এরপর শুরু হয় বিশেষ সমাবর্তন ও ডি-লিট প্রদান অনুষ্ঠান। আসানসোল থেকে কলকাতায় ফিরে নেতাজী জাদুঘর পরিদর্শন এবং স্থানীয় সাংসদদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর শনিবার রাতেই ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ও বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন এবং কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে দুই দিনের সফরে ভারত পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে কলকাতা পৌঁছে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে শান্তিনিকেতন যান। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সমাবর্তনে অংশ নেয়া এবং শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের ফলক উন্মোচন করেন। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। বিকেলে কলকাতায় ফিরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা, হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং রাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন।
×