ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশ্বিক ক্ষুধা

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২৭ মে ২০১৮

বৈশ্বিক ক্ষুধা

বৈশ্বিক ক্ষুধা বাড়ছে। বাড়ারই কথা। যে কারণে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য কমারও কোন লক্ষণ নেই। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বলতা কাটাতে পারছে না। এ মুহূর্তে বিশ্বে অর্থনৈতিক খাত জোরদার হচ্ছে। যদিও সংঘাত, দুর্ভিক্ষ, শরণার্থী সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে। যা বিপর্যয়ের দিকে টেনে নিতে পারে। লক্ষ্য করা গেছে, বৈশ্বিকতাবাদ বিরোধী মনোভাবের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি মানুষ এবং জ্ঞানের প্রবাহের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে হুমকির। এমনটাই দেখা যায় যে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া, ব্রেক্সিট এবং বহু দেশে অভিবাসনবিরোধী কথাবার্তা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বিশ্ব গত কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান বৈশ্বিক সংহতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। যা দারিদ্র্য ও অপুষ্টির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন অবনতি ঘটিয়েছে। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে গত এক দশকে দীর্ঘমেয়াদে হ্রাস পাওয়ার পর বৈশ্বিক ক্ষুধা পরিস্থিতি বাড়িয়ে তুলবে। তবে শক্তিশালী কৃষি উৎপাদন ও উদীয়মান অর্থনীতিতে চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমার ফলে ২০১৭ সালের শেষ মাসগুলোতে বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য গতিশীলতার ক্ষেত্রে এই সময়ে কয়েকটি প্রধান বৈশ্বিক নীতিগত অগ্রগতি প্রতিফলিত হয়েছে। এসব আন্তর্জাতিক প্রয়াসে ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈষম্য, চাকরি এবং প্রবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য খাদ্য ব্যবস্থার ব্যবহারের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। খাদ্য ও কৃষি উৎপাদনে পানির টেকসই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন জি-টোয়েন্টির কৃষিমন্ত্রীরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন থেকে কৃষকদের আয় রক্ষা করা সঙ্গত। পারস্পরিক সংযোগ থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যথাযথ সাফল্যের মুখ দেখেনি। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির দৃঢ় অঙ্গীকার থাকার পরও ২০১৭ সালে বৈশ্বিক ঐকমত্য, সহযোগিতা এবং সংহতি থেকে বিচ্যুতি লক্ষ্য করা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বছরের প্রথম দিকে ট্রান্স প্যাসেফিক পার্টনারশিপ ট্রেড এগ্রিমেন্ট থেকে এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার মাসুল গুনতে হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্যনীতি ২০১৮ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং অপুষ্টি সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীনভাবে কমে গেছে। এর মূলে রয়েছে খাদ্য ব্যবস্থা এবং তা ভবিষ্যতেও অগ্রগতির ভিত্তি হিসেবে থাকবে। তবে বৈশ্বিক পরিবর্তন যেমন, বৈশ্বিকতাবাদ বিরোধিতা এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া বর্তমান সময়ের খাদ্য ব্যবস্থা স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সঙ্কটের ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে। অনেক স্থানেই জাতীয় খাদ্য ব্যবস্থায় অধিক লবণ, চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবারের প্রবণতা বাড়ছে। একই সঙ্গে খাদ্য ব্যবস্থায় পরিবেশগত চাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ তীব্র হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানের পরিবর্তনের এই সময়ে খাদ্য ব্যবস্থা বদলানো প্রয়োজন। তদুপরি উপলব্ধি করা জরুরী যে, বৈশ্বিক পরিবর্তন কিভাবে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে। বিশ্বব্যাপী যে অস্থিরতা বিদ্যমান তাতে প্রতিটি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেবার মতো অবস্থা বিদ্যমান নয়। আবার যে খাদ্য মিলছে তাতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও থাকছে। বাংলাদেশও এই অবস্থার বাইরে নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল বেড়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা যথাযথভাবে গড়ে ওঠেনি। জনসংযোগ বাড়ছে, কমছে আবাদী জমি। ফলে আমদানি নির্ভরতা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। এতে খাদ্যমূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সার্বিক অবস্থায় খাদ্য পরিস্থিতি উন্নতি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব বাধা পেরুতে পারবে বলে বিশ্বাস।
×