ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়ানো কিংবা চিকিৎসা অথবা ব্যবসার প্রয়োজন- যে কারণেই বিদেশ যাওয়া হোক না কেন, পকেটে করে বিদেশী মুদ্রা নিয়ে যাওয়ার চেয়ে কার্ডেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁরা। তাই এখনকার সময়ে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ক্রেডিট কার্ড। বর্তমান সময়ে নগদ ট

এই ঈদে বাজার করুন কার্ডে

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৬ মে ২০১৮

এই ঈদে বাজার করুন কার্ডে

সুমন্ত গুপ্ত ॥ ঈদ মানেই কেনাকাটার ধুম। আর এ সময়ে ব্যবসায়ীদেরও বিক্রি ব্যাপক বেড়ে যায়। এসব কেনাকাটা বা লেনদেনে বাংলাদেশে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। মাস্টারকার্ড ও ভিসাকার্ডসহ বিভিন্ন ধরনের কার্ডে কেনাকাটায় উৎসাহিত করতে বিশেষ অফারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইফতার থেকে শুরু করে ঈদের পোশাক কেনাকাটায় এসব এসব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ব্র্যান্ড ও পণ্যভেদে থাকছে বিভিন্ন পরিমাণে মূল্যছাড়। এছাড়া কার্ডের মত মোবাইল ব্যাংকিংয়েও ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে। নগদ টাকার বিকল্প হিসাবে গ্রাহকরা প্রতিটি লেনদেন ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় কিংবা ক্যাশব্যাক পাচ্ছেন। ঈদ বাজারে নগদ টাকা নিয়ে ঘোরাঘুরি করা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থাকলে এ ঝুঁকি এড়ানো যায়। আর এখন প্রায় সকল দোকানেই কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা যায়। আর এর সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা কার্ডে করলে মিলছে নানান অফার। আবার অর্থ ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এ ছাড়া ঈদে ঘরে ফেরা ও বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আকাশপথে বিমান ভাড়ায়ও ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আগামী দিনের চাহিদাকে বর্তমানে মেটানোর এক অনন্য সুযোগ করে দিয়েছে এই কার্ড। ঋণ সুবিধায় ব্যক্তিপর্যায়ে কেনাকাটা ও নগদ অর্থের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রেডিট কার্ড। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও চাহিদা বাড়ছে সেবাটির। দৈনন্দিন বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনে এখন আর নগদ টাকা নয়; কার্ডের ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন গ্রাহকরা। আর তাই কেনাকাটা, ব্যাংক থেকে টাকা তোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিদিনই বাড়ছে কার্ডের ব্যবহার। এমনকি বিদেশেও এ দেশের মানুষ এখন কার্ড ব্যবহারের প্রতি ঝুঁকছেন। বেড়ানো কিংবা চিকিৎসা অথবা ব্যবসার প্রয়োজন- যে কারণেই বিদেশ যাওয়া হোক না কেন, পকেটে করে বিদেশী মুদ্রা নিয়ে যাওয়ার চেয়ে কার্ডেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাঁরা। তাই এখনকার সময়ে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ক্রেডিট কার্ড। বর্তমান সময়ে নগদ টাকা ও চেক ব্যবহারের চেয়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি নিরাপদ। আপনার কার্ডটির ভুলত্রুটি বা জালিয়াতি হলে কিংবা চুরি হলে আপনি আপনার অর্থ ফেরত পাবেন। ধরুন, আপনার কার্ডটি চুরি হয়ে গেল। কেউ টাকা তুলে নিল। এসব ক্ষেত্রে অভিযোগ করলে কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পুরো অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য থাকে। যথাযথ প্রমাণ দিয়ে দ্রুত অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ছোট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কার্ডের পিন নম্বরটি মনে রাখতে হবে। নম্বরটি লিখে নিজের কাছে কখনও রাখা যাবে না। শুরুর কথা বলতে গেলে বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন এএনজেড গ্রিন্ডলেজ (বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংক প্রথম ক্রেডিট কার্ড সেবা নিয়ে আসে। কাছাকাছি সময়ে বেসরকারী খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক ও তৎকালীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভানিক বাংলাদেশ (বর্তমানে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স) এ সেবা চালু করে। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অন্য ব্যাংকগুলোও এ সেবায় মনোযোগী হয়। বর্তমানে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩৯টি ব্যাংকে এ সেবা রয়েছে। বর্তমানে প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় দেড় শ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে দেশের বাইরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৩০টি বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডে ঋণ সুবিধা দিচ্ছে। চালুর প্রায় দুই যুগ পর গত মে মাসে গ্রাহকদের স্বার্থে ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা করা হয়। পরবর্তীতে তা আবার সংশোধন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশোধিত নীতিমালায় বাস্তবায়নের সময় ১ জানুয়ারি ২০১৮ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নীতিমালায় সুদের হার নির্ধারণ পদ্ধতি, পরিশোধের সময়সীমাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুনে দেশে ক্রেডিট কার্ড ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৮টি। আগের বছরের জুনে এ সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ১ হাজার ৬২৪। অর্থাৎ এক বছরে ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫২৪টি। এসব কার্ডের মাধ্যমে গত জুনে লেনদেন হয়েছে ৮৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এটিএম থেকে উত্তোলন হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা, পিওএসে লেনদেন হয়েছে ৬০৯ কোটি টাকা এবং ই-কমার্সে কেনাকাটা করা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড দিয়ে দেশের বাইরে এটিএম থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ১৫ কোটি টাকা, পিওএসে লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি টাকা এবং ই-কমার্সে কেনাকাটা করা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকার। গত জুন পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এই ঈদে যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা ছাড় ঘোষণা করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স। দেশে সাধারণত ভিসা, মাস্টারকার্ড ও আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দেয় ব্যাংকগুলো। ব্র্যাক ব্যাংক তাদের সব কার্ডধারীর জন্য ৬৩টি ফ্যাশন হাউসের সব ধরনের কাপড়ের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, ৩২টি রেস্টুরেন্টে খাবারের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। পূবালী ব্যাংকের কার্ডধারীরা ২২ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন আহং, স্টাইলসেল, জারা, নাগরদোলা, লিলাবালি, সেলাই ঘর, ও নকশীতে। আর শপিং ওয়ার্ল্ড, মেলা, এসএ ওয়ার্ল্ড, ওমেন্স ওয়ার্ল্ড এবং লেদারেক্সে ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে এ ব্যাংকের কার্ডধারীদের। অনলাইন দোকানগুলোতে অ্যামেক্স কার্ডধারীরা ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাচ্ছেন। এছাড়া আমেক্স গ্রাহকরা ঢাকার শীর্ষস্থানীয় ১৬টি রেস্টুরেন্টে একটি কিনলে একটি ফ্রি সুযোগ পাচ্ছেন। ঢাকা ব্যাংক তাদের সব কার্ড হোল্ডারের জন্য আড়ংয়ে ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক ও মিনাবাজারে ৭ শতাংশ ক্যাশব্যাক দিচ্ছে। এছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা আছে ঈদ উপলক্ষে। লাইফস্টাইল, জুয়েলারি, ডাইনিং বা সাজগোজে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা রেখেছে লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স লিমিটেড। এছাড়া নির্দিষ্ট কয়েকটি রেস্টুরেন্টে একটি কিনলে একটি ফ্রি দিচ্ছে তারা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কার্ডের কেনাকাটায় বিভিন্ন দোকানে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় রয়েছে ক্রেতাদের জন্য। সাউথ ইস্ট ব্যাংক তাদের সব ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারের জন্য ৩৪টি ফ্যাশন হাউসের সব ধরনের কাপড়ের ওপর ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, ১১টি রেস্টুরেন্টে সব খাবারের ওপর একটি কিনলে একটি ফ্রি পাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। ঈদে ক্রেতাদের জন্য বিশেষ ক্যাশব্যাক সুবিধা রেখেছে বিকাশ। বিকাশ এ বছর যে কোনো বৈশাখী কেনাকাটায় ৬৭টি ব্র্যান্ডের ৬০০টির বেশি দোকানে ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক দিচ্ছে। এছাড়া ডাচ্বাংলা ব্যাংকের রকেট মোবাইল পেমেন্ট ব্যবস্থায় নানা রকম সুবিধা আছে। এছাড়া ডিজিটাল পেমেন্টকে উৎসাহিত করতে ‘লন্ডন কলিং উইথ মাস্টারকার্ড’ নামে নতুন একটি অফার ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড। এই ক্যাম্পেইনের সঙ্গে থাকছে লাইফস্টাইল এবং ই-কমার্স অফার। অফারের আওতায় আগামী ঈদুল ফিতর ও রমজানে প্রতিদিনের খরচের বিপরীতে একাধিক পুরস্কার জেতার সুযোগ পাবেন গ্রাহকরা। এ ছাড়া ক্যাম্পেইনের গ্র্যান্ড প্রাইস হিসেবে বিজয়ী দু’জন বিনা খরচে লন্ডনে চার রাত ও পাঁচ দিন থাকার সুযোগ পাবেন। এর বাইরে থাকছে আরও বিভিন্ন পুরস্কার। গত ১ মে থেকে শুরু হয়েছে এ অফারটি চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কার্ডহোল্ডার এক হাজার টাকার রিটেইল ট্রানজেকশনে দুই পয়েন্ট পাবেন। এ ছাড়া ই-কমার্স ট্রানজেকশন এবং ডেবিট কার্ড ও প্রি-পেইড কার্ড ব্যবহার করে ৩ পয়েন্ট পাবেন ক্রেতারা। নির্দিষ্ট সময় শেষে সর্বাধিক পয়েন্টের ভিত্তিতে বিজয়ী নির্বাচন করা হবে। এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্সের কার্ড ব্যবহার করে এ ক্যাম্পেইনের আওতায় পুরস্কার জেতার সুযোগ পাবেন গ্রাহকরা।
×