ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইন্টারনেট স্বাভাবিক হলেও পুরো ব্যান্ডউইথ পেতে আরও সময় লাগবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৬ মে ২০১৮

 ইন্টারনেট স্বাভাবিক হলেও পুরো ব্যান্ডউইথ পেতে আরও সময় লাগবে

ফিরোজ মান্না ॥ সাবমেরিন কেবল এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ ভারতের চেন্নাইতে ‘রিপিটার’ পরিবর্তনের পর ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হলেও পুরোপুরি ব্যান্ডউইডথ পেতে আরও সময় লাগবে। চেন্নাইতে ‘রিপিটার আপগ্রেডেশন’ করা হয়েছে। ফলে পুরো কেবলটিই আপগ্রেড হয়েছে। যেসব বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএল থেকে ব্যান্ডউইডথ নিচ্ছে-তাদেরও আপগ্রেটেশন করতে হবে। তা না হলে কেবলে ব্যান্ডউইডথ স্বাভাবিক থাকলেও সরবরাহ ব্যবস্থায় অসুবিধা হবে। চেন্নাইতে রিপিটার পরিবর্তনের জন্য টানা ৭ দিন সময় লেগেছে। এতে ১৮ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত বাংলাদেশসহ সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হয়েছে। গত ৭ দিন বিএসসিসিএল বিকল্প পথে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক রেখেছিল। এ তথ্য জানিয়েছেন বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান। মশিউর রহমান শুক্রবার জানান, ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে চেন্নাইতে পুরনো রিপিটার পরিবর্তন করে ‘আপগ্রেড ভারশন’ বা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রিপিটার স্থাপন করা হয়েছে। এতে পুরো কেবলটিই আপগ্রেড হয়ে গেছে। পুরো কেবল আপগ্রেড হলে কিছু বিষয়েরও পরিবর্তন করতে হয়। এটা বিএসসিসিএলও করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকেও আপগ্রেড হতে হচ্ছে। কেবলের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিএসসিসিএলের কাছ থেকে ব্যান্ডউইডথ নেয় তাদের সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমরা একটা সংশয়ের মধ্যে ছিলাম। কারণ, নতুন আপগ্রেড রিপিটার স্থাপন করার পর কেবলে সমস্যাও দেখা দিতে পারত। সেক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের গতি স্বাভাবিক হতে হয়ত আরও কয়েকদিন সময় লাগত। কিন্তু মধ্যরাতে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনে গতি ঠিক পাওয়ার পর আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে কেবলে আর কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। গত ১৮ মে থেকে চেন্নাইতে এসইএএমইডব্লিউই-৪ কেবলটির একটি রিপিটার পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছিল। এ কারণে কক্সবাজার-চেন্নাই-সিঙ্গাপুর পথটি ৭ দিনের বেশি সময় বন্ধ হয়ে যায়। কেবলটির পশ্চিম অংশ বন্ধ থাকলেও পূর্ব অংশ দিয়ে কিছু ব্যান্ডউইডথ পাওয়া গেছে। বিএসসিসিএল বিকল্প ব্যবস্থায় ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ব্যান্ডউইডথ আনা হয়েছে। একইভাবে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সক্ষমতা বাড়িয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে স্থলপথে ব্যান্ডউইডথ আনতে ছয়টি আন্তর্জাতিক টেরিস্টোরিয়াল কেবল (আইটিসি) চালু ছিল। ফলে দেশে ব্যান্ডউইথের খুব একটা সমস্যা হয়নি। তবে এটা ঠিক, প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা কম ব্যান্ডউইডথ পাওয়া গেছে। বিএসসিসিএল সূত্র জানিয়েছে, কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য দেশের প্রথম সাবমেরিন কেবল থেকে গত ৭ দিন ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ ২৫০ জিবিপিএসর জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ জিবিপিএস। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ অবস্থা চলেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। কেবলের কক্সবাজারের ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ভারতের চেন্নাই পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য ইন্টারনেট ডাটা সঞ্চালন ১৮ মে থেকে বন্ধ ছিল। তবে ব্যান্ডউইথের সরবরাহ ঠিক রাখতে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫) সক্ষমতা বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে কয়েকটি বিকল্প পথে প্রথম সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছিল। স্বাভাবিক সময়ে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল থেকে ১৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যায়। আপদকালীন সময়ে বাড়িয়ে ২৪০ জিবিপিএস করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিএসসিসিএলের দুটি সাবমেরিন কেবল থেকে এখন ৩২০-৩৩০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ এসেছে। স্বাভাবিক সময়ে বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ ক্ষমতা ছিল ৪০০ জিবিপিএস। সারা দেশে দৈনিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাহিদা ৬০০ থেকে ৬৫০ জিবিপিএস। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) কক্সবাজারের জিলং পর্যন্ত (প্রথম সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ল্যান্ডিং স্টেশন) এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ কেবলের মাধ্যমে দেশে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ তিন ভাগের এক ভাগে নেমে গিয়েছিল। দ্বিতীয় এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ (ব্যাকআপ) দেয়া হয়েছে। এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ (সাউথ এশিয়া-মিডেলিস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) মালিক হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিশিয়া, আলজিরিয়া ও ফ্রান্স। সিমিউই-৫ এর মালিক হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মালিকও এই ১৬ দেশ।
×