ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ হলো অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন প্রক্রিয়া

এবার কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ১৩ লাখের বেশি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৬ মে ২০১৮

  এবার কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ১৩ লাখের বেশি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বড় ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়াই শেষ হলো অনলাইন ও এসএমএসে কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া। আবেদন করেছেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৫৫৭ জন মাধ্যমিক পাস করা কলেজ ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী। এ দিকে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণদের মধ্যে এবার আড়াই লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কলেজ ভর্তির আবেদন করেননি। তবু সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিবছরই এভাবে বেশ কিছু শিক্ষার্থী কলেজ পর্যায়ে এসে শিক্ষার সাধারণ ধারায় থাকেন না। তারা হয় কারিগরি ডিপ্লোমা বা অন্যান্য ধারায় চলে যান। কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। মেয়েদের অনেকের এই সময়ে বিয়ে হয়ে যায়। ফলে তারা সাধারণ কলেজ ভর্তির বাইরে থেকে যায়। আন্তঃবোর্ডের সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জানিয়েছেন, কলেজ ভর্তির জন্য সব বোর্ড মিলিয়ে আবেদন করেছেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৫৫৭ শিক্ষার্থী। যারা আবেদন করেনি তারা আরও দুইবার আবেদন করার সুযোগ পাবে। প্রায় আড়াই লাখের বেশি শিক্ষার্থী আবেদনের বাইরে আছে। প্রতি বছর কিছু শিক্ষার্থী নানা কারণে ঝরে যায়। এবারও একই কারণে ঝরে যাবে। তবে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হতে হতে এ সংখ্যা আরও কমে আসবে বলে আশা করছেন চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে আবেদন প্রক্রিয়া। চলতি বছর এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসেবে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৪৭ শিক্ষার্থী আবেদন করেনি। ঢাকা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মনজুরুল কবির বলেছেন, ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি তা বলা যাবে না। তবে পূর্বে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বলা যায়, প্রায় লাখের ওপর শিক্ষার্থী প্রতি বছর একাদশ শ্রেণীর ভর্তির বাইরে থাকে। এবারও তাই হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। চলতি বছর নীতিমালা অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থী অনলাইন ও এসএমএসে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। এখন এই আবেদন থেকে শিক্ষার্থীর পছন্দক্রম ও যোগ্যতা অনুযায়ী ভর্তির জন্য একটি কলেজ ঠিক করে দেবে শিক্ষা বোর্ড। প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। তার আগে ২৫ থেকে ২৭ মে আবেদন যাচাই বাচাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। শুধু পুনর্নিরীক্ষণের ফল পরিবর্তনের শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করা ৫ এবং ৬ জুন। প্রথম পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কলেজ নিশ্চিত করবে ১১ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন চলবে ১৯ ও ২০ জুন। ১ম মাইগ্রেশনের ফল প্রকাশ করা হবে ২১ জুন। ২য় পর্যায়ে কলেজ নিশ্চয়ন করতে পারবে ২২ ও ২৩ জুন। ৩য় পর্যায়ে আবেদন নেয়া হবে ২৪ জুন। ২য় মাইগ্রেশন ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ জুন। একই দিনে ৩য় পর্যায়ের ফল প্রকাশ করা হবে এবং তারা কলেজ নিশ্চয়ন করতে হবে ২৬ জুনের মধ্যে। ভর্তি চলবে ২৭ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। আর ১ জুলাই একাদশের শ্রেণীর নতুন ব্যাচের ক্লাস শুরু হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম দফায় ১০টি কলেজেও যদি কোন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ না পায়, তাহলে আরও দুই দফায় সে আবেদনের সুযোগ পাবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারও ভর্তি কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থীর আবেদন না করা প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রতি বছর কিছু শিক্ষার্থী ঝরে যায় এটা সত্য। এর মধ্যে অনেকেই কারিগরি ও বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সেও ভর্তি হয়। তবে যারা প্রথম দফায় আবেদন করতে পারেনি, তারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আবেদন করতে পারবে। গত বছরও লাখ খানেক এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী আবেদন করেনি। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, মাধ্যমিকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরে যায়। এই স্তরে ৩৮ দশমিক ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসির দ্বার পার হতে পারে না। উচ্চ মাধ্যমিকে এই ঝরে পড়ার হার অনেকটা কম, ওই স্তরে এ হার ২০ দশমিক ০৮। প্রাথমিকে এই হার সবচেয়ে কম, ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। তবে বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, এ স্তরের ঝড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝরে পড়ে মেয়েরা। এর কারণ বিয়ে হয়ে যাওয়া এবং কলেজ দূরে কিংবা নিরাপত্তা ইত্যাদি কারণে মেয়েরা একাদশে ভর্তির বাইরে থেকে যায়। শিক্ষাবিদরা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় আরও বেশি বিনিয়োগ করার দাবি করে আসছে। পাশাপাশি এ স্তরের মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি বরাবর জোর দিয়ে আসছে তারা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব সাহেদুল খবীর চৌধুরী বলছিলেন, প্রতিবছরই অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারায় থাকেন না। তারা হয় কারিগরি ডিপ্লোমা বা অন্যান্য ধারায় চলে যান। কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। মেয়েদের অনেকের এই সময়ে বিয়ে হয়ে যায়। ফলে তারা কলেজ ভর্তির বাইওে থেকে যান। তবে আরও যেহেতু আবেদনের সুযোগ আছে। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না কতজন আসলে ভর্তি হচ্ছে না। এখনও সার্বিক অবস্থান সন্তোষজনক। শিক্ষার্থীরা ভালভাবে আবেদন করতে পেরেছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলছিলেন, অনেকেই আছেন এই সময়ে শিক্ষার অন্যান্য ধারায় প্রবেশ করেন। যারা সাধারণ শিক্ষায় থাকেন না তারা আর কলেজ ভর্তির আবেদন করেন না। একদিকে টাকা সাশ্রয় ছাড়াও অনলাইনে কার্যক্রম চলায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আগের মতো দৌড়াতে হচ্ছে না কলেজে কলেজে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলছিলেন, আবেদন নিয়ে কলেগুলোরও কোন চাপ নেই এখন। আমাদের কাজ শুরু হবে তালিকা প্রকাশের পর ভর্তি শুরু হলে। মতিঝিল আইডিয়াল কলেজের গবর্নিং বডির সদস্য স্থানীয় ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার গোলাম আশরাফ তালুকদার জানালেন, অনলাইনে হওয়ায় আমাদের কোন চাপ নেই। নেই কোন ভর্তির তদ্বিরও।
×