ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতের দাবি বিশিষ্টজনদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৬ মে ২০১৮

 ঈদে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতের দাবি বিশিষ্টজনদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নৌ খাতে বিরাজমান নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সীমাবদ্ধতাসহ চলতি দুর্যোগ মৌসুমের কারণে নৌ চলাচল এখন অনেকটাই অনিরাপদ। অন্যদিকে সারা দেশে প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। এছাড়া প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে। তাই এবার ঈদে নৌ ও সড়ক- প্রধান দুটি যাতায়াত মাধ্যমই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনের মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টে অনুষ্ঠিত এক সেমিনার ও ইফতার পার্টিতে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। ঈদে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা। বেসরকারী সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি ‘দুর্যোগ মৌসুম, ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ ও বেহাল সড়ক’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়ার সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মুর্শিকুল ইসলাম শিমুলের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আশীষ কুমার দে। আলোচনায় অংশ নেন- লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মনজুরুল আহসান খান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মীর তারেক আলী, ইসলামিক বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. ফোরকান আলী, বিশিষ্ট শিশুসংগঠক তাহমীন সুলতানা স্বাতী, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াৎ, খুলনার পাইকগাছার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশীদুজ্জামান মোড়ল, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক মোঃ নাজিমউদ্দিন, ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী তাসলিমা পারভীন কল্পনা, সাবেক সাংসদ এডভোকেট তাসনীম রানা প্রমুখ। জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে সেমিনারে নৌ ও সড়কপথের নিরাপত্তায় সাতটি করে মোট ১৪টি জরুরী সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। সুপারিশগুলো ১ জুন (১৫ রমজান) থেকে কার্যকর ও ঈদ-পরবর্তী এক সপ্তাহ বলবৎ রাখার দাবিও জানিয়েছে জাতীয় কমিটি। নৌ-নিরাপত্তায় উত্থাপিত সুপারিশগুলো হচ্ছে ॥ ১. অবৈধ ও ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু। ২. নৌ-নিরাপত্তায় উপকূলীয় জনপদের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে সম্পৃক্তকরণ। ৩. উপকূলীয় জেলাসমূহের নির্বাহী হাকিমদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান। ৪. সদরঘাটসহ সারা দেশের সকল লঞ্চ টার্মিনালে কঠোর নিরাপত্তাসহ শৌচাগার সুবিধা ও পানির ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং সকল নদীবন্দরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা। ৫. শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চসহ সব ধরনের ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল বন্ধ। ৬. রাতে বালু ও তেলবাহীসহ সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ। ৭. সকল টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটে লাউড স্পীকার ও বড় পর্দায় সার্বক্ষণিক এবং টেলিভিশন ও বেতারে প্রতিঘণ্টায় আবহাওয়া বার্তা প্রচার। সড়ক নিরাপত্তায় উত্থাপিত সাতটি সুপারিশ হলো ॥ ১. অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ বাস টার্মিনালে সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু এবং কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। ২. দূরপাল্লার সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোসহ বেআইনিভাবে ওভারটেকিং বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ। ৩. রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও রুট পারমিটবিহীন বাসসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধে জাতীয় মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিমদের সম্পৃক্তকরণ। ৪. চলন্ত অবস্থায় চালকদের মুঠো ফোন ব্যবহার, বাসের ছাদে ও ট্রাকে যাত্রী পরিবহন এবং জাল লাইসেন্সধারী চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে ক্ষমতা প্রদান। ৫. ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুঃসহ যানজট এড়াতে ১ জুনের মধ্যে এসব মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ। ৬. সড়ক পথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতকারী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের মানুষের সুবিধার্থে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটের বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার। ৭. জাতীয় মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা সড়কে অটোরিক্সা, ইজিবাইকসহ সব ধরনের তিন চাকার যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করা।
×