ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধন দুরভিসন্ধি ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৬ মে ২০১৮

 নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধন দুরভিসন্ধি ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারের সুযোগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি সংশোধন দুরভিসন্ধিমূলক বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। মওদুদ বলেন, আমি স্বীকার করি যে, একমাত্র আইন-আদালত করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তার একমাত্র পথ হলো রাজপথ। কোন আন্দোলন ছাড়া জনগণের কোন দাবি আদায় করা সম্ভব হয় নাই। যে পথে দাবি আদায় করা যাবে সেই পথই আমাদের বেছে নিতে হবে। রমজান মাসের পরে কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে আমাদের সেই পথ বেছে নিতে হবে। মওদুদ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেছেন। আমি আশা করি, তিনি খালি হাতে ফিরবেন না। তিস্তা পানি বণ্টনের স্বাক্ষরিত চুক্তি হাতে নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। সরকার ব্যর্থ হয়ে দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করছে। মওদুদ বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটা তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন। সরকার যা চাইছে তারা তাই করছে। এখন তারা নির্বাচনী আচরণবিধি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। যেটা করছে সেটা দুরভিসন্ধিমূলক। এই আচরণবিধি পরিবর্তন করা একটা ষড়যন্ত্রের অংশ। কারণ, ক্ষমতাসীনরা ভবিষ্যতে সাধারণ নিবাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে থেকে নিজের প্রচার যাতে করতে পারেন তার সমস্ত ক্ষমতা ও তার সমস্ত প্রভাব দিয়ে। সেটাকে মাথায় রেখে আজকে নির্বাচন কমিশন এই আচরণবিধি পরিবর্তন করছে। এরপর দেশের মাটিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মতো গাজীপুর সিটি নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মওদুদ বলেন, খুলনায় জনগণের নির্বাচন হয় নাই, পুলিশ-র‌্যাব নির্বাচন করেছে। সেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এখন ক্ষমতাসীনরা খুলনা স্টাইলে গাজীপুরে নির্বাচন করতে চায়। খুলনা স্টাইলে গাজীপুরে নির্বাচন হলে আমরাও দেখব, চেষ্টা করব এটা প্রতিহত করার জন্য। এটা আমরা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করব গাজীপুরে যাতে খুলনা স্টাইলে নির্বাচন করতে না পারে। মওদুদ বলেন, দেশে আজকে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। যাদের হত্যা করা হচ্ছে ওরা কারা? যাদের মারা হচ্ছে তারা মাদক ব্যবসায়ী কি ব্যবসায়ী না আপনি কী করে জানেন? ক’জনকে আপনারা চিনেন। খবরের কাগজে দেখি এক হাজার দুই হাজার ইয়াবা পাওয়া গেছে তাদের কাছ থেকে। এরা তো বাহক, এরা তো মালিক না। এরা তো মাদক নিয়ন্ত্রণ করে না। এরা অন্যের জন্য ব্যবসা করে সেটা বিক্রি করে ওই বসকে দেয়। সরকারের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা হলো এই মাদক ব্যবসার মালিক। আমি বলব, বিনাবিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। মাদক ব্যবসা বন্ধ করুন। আমরা চাই, মাদক ব্যবসা একেবারে উচ্ছেদ হোক। মাদক চোরাই পথে আমদানি বন্ধ হোক। মওদুদ বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটা তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন। সরকার যা চাইছে তাই করছে। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আন্দোলন ছাড়া জনগণের কোন দাবি আদায় করা সম্ভবপর হয় নাই। যে পথে দাবি আদায় করা যাবে সেই পথ আমাদের বেছে নিতে হবে। রমজান মাসের পরে কঠোর কর্মসূচীর পথ আমাদের বেছে নিতে হবে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও হুমায়ুন কবীর ব্যাপারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবেদ রাজা ও আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ। খুলনার মতো নির্বাচন গাজীপুরে করা যাবে না- মোশাররফ ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মতো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. মোশাররফ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতে গেছেন। তিনি বারবার ভারত যান। কিন্তু দেশের মানুষের বাঁচা-মরার সমস্যা হলো তিস্তার পানি। সেই পানি কোন আলোচনায় আনতে পারেন না। কোন দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পানি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন না। এজন্য মানুষের আশঙ্কা হচ্ছে ভারত গিয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো কোন ষড়যন্ত্র করছেন কিনা। এবার যদি তিস্তার পানিচুক্তি নিয়ে ভাল কোন খবর আনতে পারেন তাহলে মনে করব আপনার সফর যৌক্তিক। ড. মোশাররফ বলেন, এই সরকারের নীলনক্সা আপনারা খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখেছেন। খুলনায় দলীয় ও প্রশাসনের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করেছে। এখন গাজীপুরেও একই নীলনক্সা তারা করছে। তবে খুলনায় যা করেছে গাজীপুরে তা করতে পারবে না। কারণ, গাজীপুর আর খুলনার মানুষ এক নয়। খুলনার অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারের কূটকৌশল প্রতিহত করতে আমরা আমাদের কৌশল পরিবর্তন করে মাঠে থাকব। ড. মোশারফ বলেন, এ সরকারের পতন করা আমাদের আগামী আন্দোলনের প্রধান ইস্যু। আদালত দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। মুক্তি হবে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে। সময়ই বলে দেবে কী ধরনের আন্দোলন হবে। নরম আন্দোলন হবে না গরম আন্দোলন হবে। ড. মোশাররফ বলেন, সারাদেশে এখন একটি মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ জানে মাদকের মূল হোতা কারা। আন্তর্জাতিকভাবে কারা মাদকের ব্যবসা করে। কোন এমপি কোন মন্ত্রী এই ব্যবসা করে সব তারা জানেন। প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় সরকার দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীর ছত্রছায়া ছাড়া কোন মানুষ মাদক ব্যবসা করতে পারেন না। একই সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া কেউ মাদক ব্যবসা করতে পারে না। অথচ তাদের গ্রেফতার করছে না। ড্যাব নেতা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ড্যাবের মহাসচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, ড্যাব নেতা অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ।
×