ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিয়ে নেয়া টাকা পেতে রূপালী ব্যাংকের মামলা যান্ত্রিক ত্রুটির সুযোগে ৩ বছরে ৩ শাখার ৮ হিসাবের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে এই টাকা

কয়েক কোটি টাকা লুট ॥ রূপালী ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৬ মে ২০১৮

কয়েক কোটি টাকা লুট ॥ রূপালী ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকদের এটিএম সেবা দেয়ার সূত্র ধরে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। যান্ত্রিক ত্রুটির সুযোগে ব্যাংকটির তিনটি শাখার মাত্র আট জন গ্রাহকই হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। এটিএম নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা আরও ৪১টি শাখার অনেক গ্রাহক একইভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তার পরিমাণ কম হওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় তিন বছর এমন যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যেই ব্যাংকটির এটিএম সেবাদান চালু ছিল। তারপরেও অল্পের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ভয়াবহ আর্থিক কেলেঙ্কারির হাত থেকে রক্ষা হয়েছে। রূপালী ব্যাংক বলছে, হাতিয়ে নেয়া টাকা তাদের নয়। আবার ব্র্যাক ব্যাংকও হাতিয়ে নেয়া রূপালী ব্যাংকের কাছে দাবি করছে। ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে রূপালী ব্যাংকের সিগন্যাল পাওয়ার পরেই তারা তাদের এটিএম বুথ থেকে রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক টাকা সরবরাহ করেছে। এমন ঘটনার পর ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গ্রাহকদের এটিএম সেবা দিয়ে যাচ্ছে রূপালী ব্যাংক। চুক্তি বাতিল হলেও ব্র্যাক ব্যাংকের পাওনা হিসেবে রূপালী ব্যাংকের কাছে দাবি করা প্রায় চার কোটি টাকার বিষয়ে কোন সুরাহা হয়নি। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। রূপালী ব্যাংকের একজন গ্রাহকের ব্যাংকটির বর্তমান ও সাবেক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং একজন মহাব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা দায়েরের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে সামনে চলে আসে রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকদের এটিএম সেবাদানের সূত্রধরে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনাটি। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখার তৎকালীন উপ-মহাব্যবস্থাপক খান ইকবাল হোসেন (বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে মতিঝিল স্থানীয় শাখায় কর্মরত) স্বাক্ষরিত ২০১৬/৪৯১ নম্বর ওই পত্রটি জাকী আহমেদ নামে রূপালী ব্যাংকের এক গ্রাহকের কাছে পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, ১৯৮২ সাল থেকে জাকী আহমেদ রূপালী ব্যাংকের গ্রাহক। ব্যাংকটিতে তার নামে ১০০০৮৮৫৪৮ নম্বর একটি সঞ্চয়ী হিসাব ও এই হিসাবের সঙ্গে যুক্ত ১৪০০০০০৩৪০০০১৯৪ নম্বর একটি এটিএম কার্ড ইস্যুকৃত রয়েছে। এ ছাড়া তার মালিকাধীন মাসিক দোয়েল নামের একটি ম্যাগাজিনের নামে ২০০০৮০২৯৪ নম্বর একটি সঞ্চয়ী হিসাব এবং এরসঙ্গে ১৪০০০০০৩৪০০১৭৫৪ নম্বর একটি এটিএম কার্ড ও মেসার্স দোয়েল নামে ২০০০৭২৩৯৬ নম্বরের একটি সঞ্চয়ী এ্যাকাউন্ট এবং এর সঙ্গে যুক্ত ১৪০০০০০৩৪০০০২০২ নম্বর একটি এটিএম কার্ড চালু আছে। তিনটি এ্যাকাউন্টে জমা ছিল ৬ লাখ ২ হাজার ৬শ’ টাকা। তার তিনটি এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে জমার অতিরিক্ত ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৯শ’ টাকা তুলে নেয়া হয়। তাকে অতিরিক্ত অর্থ তুলে নেয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে এবং সুদে আসলে অতিরিক্ত উত্তোলিত টাকা ফেরত দিতে বলে রূপালী ব্যাংক। জানা যায়, জাকী আহমেদের (৭০) পিতার নাম মৃত আব্দুল লতিফ। স্থায়ী ঠিকানা খুলনা জেলার খালিশপুর থানাধীন ৩ নম্বর বিআইডিসি রোডের খোশ মহলে। তার মতিঝিলের ২৪-২৫ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার পিপলস ট্রেডিং ভবনের চতুর্থ তলায় অফিস আছে। এখান থেকে তিনি মাসিক দোয়েল নামের একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। তিনি ম্যাগাজিনটির সম্পাদক ও প্রকাশক। স্ত্রী ফারহানা জাকীসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকার মুগদা থানাধীন বাসাবোর দক্ষিণ মুগদাপাড়ার ১৪৫ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন। পত্রের প্রেক্ষিতে জাকী আহমেদ রূপালী ব্যাংক বরাবর ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ একটি চিঠি দিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ব্যাংক স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করা হয়। রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, বুয়েট ও পুলিশের পিবিআইয়ের তদন্তে তা ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। এরপর থেকেই তাকে বার বার উত্তোলিত বাড়তি টাকা ফেরত দেয়ার তাগাদা দিলেও কোন সুফল মেলেনি। বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঘটনাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগিটি এন্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগকে জানায় রূপালী ব্যাংক। জানা গেছে, ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণœ হওয়া, গ্রাহকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়া ও সর্বোপরি অব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয় সামনে চলে আসার ভয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জাকী আহমেদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গোপনে দেনদরবার চালাতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল, ২২ এপ্রিল ও ১ জুন রূপালী ব্যাংক জাকী আহমেদকে উত্তোলিত বাড়তি টাকা ফেরত দিতে উকিল নোটিসসহ নানাভাবে চাপ দেয়া এবং টাকা না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে চাপ অব্যাহত রাখে। শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত না পেয়ে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঢাকার ৫ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে জাকী আহমেদের বিরুদ্ধে তিনটি মানি মোকদ্দমা দায়ের করে। মামলা তিনটি বিচারাধীন। বিষয়টি সম্পর্কে রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখার তৎকালীন উপ-মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে মতিঝিলে অবস্থিত স্থানীয় শাখায় মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত) খান ইকবাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটনাটি ঘটে। এটিএম কার্ড রূপালী ব্যাংকে হিট না করায় তারা বিষয়টি জানতে পারেনি। সেই সুযোগে কতিপয় গ্রাহক অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রায় দুই বছর পর ব্র্যাক ব্যাংক তাদের কাছে চিঠি দিয়ে টাকা দাবি করলে বিষয়টি সামনে চলে আসে। হাতিয়ে নেয়া টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকের নয়। সেগুলো ব্র্যাক ব্যাংকের টাকা। রূপালী ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত জাকী আহমেদ জনকণ্ঠের কাছে দাবি করেন, তিনি বাড়তি টাকা উত্তোলন করেননি। তারপরেও ব্যাংক তাকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করায় তিনিও রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। পাশাপাশি ব্যাংকের দুর্বলতাসহ পুরো বিষয়টি ২০১৭ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে মৌখিক ও লিখিতভাবে অবহিত করেন। নথিপত্র মোতাবেক, ২০১৭ সালে ঢাকার ১২ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে দায়ের করা মানহানির ওই মামলাটিতে রূপালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আতাউর রহমান প্রধান (৫৫), ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এম ফরিদ উদ্দিন জমাদ্দার (৬৫) ও ব্যাংকটির সাবেক কম্পিউটার (বর্তমানে আইসিটি অপারেশনস ডিভিশন) বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক বিষ্ণু চন্দ্র সাহাকে (৫৬) অভিযুক্ত করা হয়। বিচারক সত্যব্রত শিকদার পেনাল কোডের ১৮৬০ সালের ৫০০/৫০১/১০৯ ধারায় দায়েরকৃত মানহানির ২০৫৬/২০১৭ নম্বর সিআর মামলাটি আমলে নেন। পরবর্তীতে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটির তদন্তের নির্দেশ দেয়। জানা গেছে, মামলার প্রধান অভিযুক্ত আতাউর রহমান প্রধানের (৫৫) পিতা মৃত আবতাব উদ্দিন। মাতা মৃত আকলিমা। বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামের উফারমারা বানিয়াবাড়ি গ্রামে। তিনি রূপালী কুটির, ইস্পাহানী কলোনি, ২৮ ক্যাপ্টেন শহীদ মনসুর আলী সরণি, মগবাজার, রমনা, ঢাকায় বসবাস করেন। দ্বিতীয় অভিযুক্ত রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এম ফরিদ উদ্দিন জমাদ্দার (৬৫)। পিতা মৃত আসমত আলী জমাদ্দার। মাতা মৃত বেগম রোকেয়া। বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভা-ারিয়া থানাধীন চড়াইল গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা গার্ডেনিয়া ফ্ল্যাট নং-বি/৫, ২০ ইস্কাটন গার্ডেন রোড, রমনা, ঢাকা। তৃতীয় নম্বর অভিযুক্ত ব্যাংকটির তৎকালীন কম্পিউটার বিভাগের (বর্তমানে আইসিটি অপারেশনস বিভাগ) মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বিষ্ণু চন্দ্র সাহা (৫৬)। পিতা মৃত ব্রজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, মাতা মৃত বকুল রাণী সাহা। সাং-দেশওয়ালীপট্টি, থানা- কোতোয়ালি, জেলা- কুমিল্লা। বর্তমান ঠিকানা ফ্ল্যাট নং-৬/এ, বাড়ি ২৫২/৪, সড়ক নং-৬, মোহাম্মদী হাউজিং লিমিটেড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইয়ের প্রধান পুলিশের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, মামলাটির তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। প্রকাশ পায় রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য। ব্র্যাক ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সফটওয়্যার কোম্পানিটির অবহেলা এবং সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবের সুযোগ নিয়ে গ্রাহকরা টাকা হাতিয়ে নেয়। মামলাটির সার্বিক তদারকির দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, ব্র্যাক ও রূপালী ব্যাংক এবং ইনফিনিটি টেকনোলজি নামের সফটওয়্যার তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম, গাফিলতি, অবহেলা ও মনিটরিংয়ের অভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটি ঘটে। সময় মতো ঘটনাটি ধরা না পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো আরেকটি আলোচিত অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটা বিচিত্র ছিল না। এই ঘটনার পর ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে রূপালী ব্যাংকের এটিএম চুক্তি বাতিল হয়। নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে তাল মেলাতে তাদের ৫৬৩টি শাখার গ্রাহকদের এটিএম সেবা দেয়ার উদ্যোগ নেয়। ওই সময় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. আহমেদ আল কবির। ওই সময় রূপালী ব্যাংকের নিজস্ব কোন এটিএম বুথ ছিল না। সেজন্য ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ২০ লাখ টাকা সংরক্ষিত রেখে দুই চুক্তি হয়। ব্র্যাক ব্যাংক পরীক্ষামূলকভাবে রূপালী ব্যাংকের ৫৭টি শাখার গ্রাহকদের এটিএম সেবা দেয়ার উদ্যোগ নেয়। চুক্তি মোতাবেক সেবা দেয়ার জন্য এটিএম মেশিন, এটিএম কার্ড, কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও মেশিন ক্যাশ ফিডিংসহ সকল কারিগরি সহায়তা দিবে ব্র্যাক ব্যাংক। গ্রাহকরা যে টাকা তুলবেন, তা রূপালী ব্যাংক আনুষঙ্গিক খরচসহ ব্র্যাক ব্যাংককে পরিশোধ করবে। ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম সেবা দিয়ে থাকে ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ইন্টারফেস নামের একটি সফটওয়ার তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান। চুক্তি মোতাবেক রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে সেবা নিচ্ছিলেন। রূপালী ব্যাংকও সেই টাকা নিয়মিত পরিশোধ করছিল। বিপত্তি দেখা দেয় ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট। রূপালী ব্যাংকের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক পাওনা হিসেবে প্রায় চার কোটি টাকা দাবি করে। রূপালী ব্যাংক ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত করে দেখতে পায়, সেসব গ্রাহকরা ব্র্যাক ব্যাংক থেকে প্রায় চার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন, তাদের এ্যাকাউন্টে সেই পরিমাণ টাকা জমা ছিল না। রূপালী ব্যাংক বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে মেসার্স অরুণ অর্জুন চার্টার্ড এ্যাকাউনটেন্ট ফার্মের মাধ্যমে অডিট করায়। ফার্মটি ২০১১ সালের ৮ জুন থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এটিএম গ্রাহকদের লেনদেন অডিট করে। অডিটে দেখা যায়, আটজন গ্রাহক অতিরিক্ত প্রায় তিন কোটি টাকা তুলেছে। ওইসব গ্রাহকের এ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার মতো জমা ছিল। রূপালী ব্যাংক এই টাকা দিতে রাজি হলেও ব্র্যাক ব্যাংক পুরো প্রায় চার কোটি টাকাই দাবি করে আসছে। রূপালী ব্যাংক বলছে, অতিরিক্ত টাকা যেহেতু গ্রাহকের এ্যাকাউন্টে জমা ছিল না, তাই তারা সেই টাকা পরিশোধ করতে পারবে না। এরপর ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি কিছু হিসাব সম্পর্কে তথ্য চাইলে রূপালী ব্যাংক তা দেয়। তাতে দেখা যায়, রূপালী ব্যাংকের ৫৭টি শাখার মধ্যে মূলত ৪৪টি শাখা এটিএম বুথের সেবার আওতায় ছিল। বাকি ১৩টি শাখা এটিএম বুথের সেবার বাইরে ছিল। এটিএম বুথের সেবার মধ্যে থাকা তিনটি শাখার আটজন গ্রাহক অতিরিক্ত টাকা তুলে নিয়েছে বলে তথ্য বের হয়। বুয়েটের তদন্ত দলও এটিএম সেবার মধ্যে থাকা ৪৪টি শাখার লেনদেনের প্রযুক্তিগত তদন্ত করে। তাতে দেখা যায়, মতিঝিলে অবস্থিত রূপালী সদন শাখার আকাশ দাশ তার একটি সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে জমা থাকা ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত ১২ লাখ সাড়ে ৭৮ হাজার, একই শাখার শাহনাজ বেগম তার একটি সঞ্চয়ী হিসাবে নম্বরে জমা থাকা ১ লাখ সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত ১১ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং একই শাখার শিল্পী আক্তার তার একটি সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে জমা থাকা ১ লাখ সাড়ে ১৮ হাজার টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত ৯ লাখ সাড়ে ৩৪ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, পরবর্তীতে এই তিনজন অতিরিক্ত উত্তোলিত টাকা রূপালী ব্যাংকের কাছে ফেরত দিয়ে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হয়নি। বুয়েটের তদন্তে আরও ধরা পড়ে, মতিঝিল করপোরেট শাখার গ্রাহক রবিউল ইসলামের এ্যাকাউন্টে কোন টাকাই ছিল না। অথচ তিনি এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ১ কোটি ৩৭ লাখ সাড়ে ৮৬ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। আর নিউ মার্কেট শাখার গ্রাহক নিউমার্কেটের একটি দোকানের কর্মচারী শিকদার শহীদুল ইসলাম তার এ্যাকাউন্টে থাকা ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকার বিপরীতে তিনি ৫০ লাখ ৫১ হাজার টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করেন। রূপালী ব্যাংক ও তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, এ দুজনের ব্যাংকে জমা দেয়া ঠিকানা মোতাবেক উকিল নোটিস পাঠানো থেকে শুরু করে অভিযান পর্যন্ত চালানো হয়েছে। তাদের আজও কোন হদিস মেলেনি। তারা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি এ দুজনের মধ্যে রবিউলের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অর্থ আইনে একটি এবং শিকদার শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথমে নিউমার্কেট থানায় একটি জিডি, পরে ঢাকার সিএমএম আদালতে অর্থ আইনে একটি মামলা এবং টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ফৌজদারি আইনেও একটি মামলা দায়ের করে রূপালী ব্যাংক। নিউমার্কেট শাখার তৎকালীন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একই পদে কর্মরত) জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন শিকদার শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনিই একটি জিডি ও দুইটি মামলা করেছেন। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় রূপালী ব্যাংক জাকী আহমেদের বিরুদ্ধে ৩টি, রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ১টি ও শিকদার শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২টিসহ মোট ছয়টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মানহানির মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, মতিঝিল করপোরেট শাখায় জাকী আহমেদের দুইটি ও মাসিক ম্যাগাজিন দোয়েলের বিপরীতে মেসার্স দোয়েল নামে একটিসহ মোট তিনটি সঞ্চয়ী হিসাবে মোট ৬ লাখ ২ হাজার ৬শ’ টাকা জমা ছিল। এই টাকা ছাড়াও তিনটি এটিএম কার্ডের মাধ্যমে ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৯শ’ টাকা অতিরিক্ত উত্তোলিত হয়। যেসব এটিএম বুথ থেকে জাকী আহমেদ ও তার ছেলে টাকা তুলেছেন, সেসব বুথ থেকে তাদের টাকা তোলার ছবিও সিসি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা তোলার অকাট্য প্রমাণাদি থাকার পরেও জাকী আহমেদ রূপালী ব্যাংকে উত্তোলিত বাড়তি টাকা ফেরত দেননি। এমনকি নিজের দোষ স্বীকার না করে উল্টো রূপালী ব্যাংকের তিন জন উর্ধতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলাটি ঠুকে দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শামীম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের তদন্তে এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের তদন্তেও এটিএম বুথের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধরা পড়েছে। তিনি বলছেন, রূপালী ব্যাংকের এটিএম কার্ডধারী ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম কার্ডের বুথে কার্ড প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে তা রূপালী ব্যাংকে হিট করার কথা। এরপর গ্রাহক নির্ধারিত টাকা তোলার জন্য বাটন চাপবেন। এটিএম বুথের স্বয়ংক্রিম সুইচ রূপালী ব্যাংকের সুইচের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। গ্রাহক যে পরিমাণ টাকা চাচ্ছে, তা আছে কিনা তা জানতে চাইবে। রূপালী ব্যাংকের তরফ থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেলেই বুথ থেকে টাকা বের হবে। কার্ডধারীর অতিরিক্ত টাকা তোলার কোন সুযোগ নেই। এটিএম বুথের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেটি হয়নি। তদন্তে জানা গেছে, হয়তো কোন দিন ভুলবশত কোন গ্রাহক ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০ হাজার টাকা উত্তোলনের বাটনে চাপ দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিমাণ টাকা বেরিয়ে এসেছে। আর তাতেই গ্রাহক আরও উৎসাহিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহকদের মধ্যে লোভ জন্মেছে। তারা ঘন ঘন এটিএম বুথে গিয়ে ইচ্ছেমতো টাকা তুলে নিয়েছেন। এভাবেই অভিযুক্ত গ্রাহকরা হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, রূপালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সফটওয়্যার কোম্পানি কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলার কারণেই বছরের পর বছর ধরে রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। জাকী আহমেদ মানহানির মামলাটি না করলে হয়তো কোন দিনই এমন অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা প্রকাশই পেতো না। পরিকল্পিতভাবে অর্থ হাতিয়ে নিতেই দুই ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তা ও সফটওয়্যার কোম্পানিটি এমন কারসাজি করেছিল বলে বিভিন্নভাবে অভিযোগ উঠলেও তদন্তে তার সত্যতা মেলেনি। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন থাকা ঢাকার ২১ নম্বর সিএমএম আদালতে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে ইনফিনিটি টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ইন্টারফেস নামক ওই সফটওয়ার তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রহমত উল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকদের অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের জন্য মূলত ব্র্যাক ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের গাফিলতি দায়ি। কারণ তারা নিয়মিত মনিটরিং করতেন না। আমরাও বিষয়টি জানতাম না। ব্র্যাক ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের মধ্যে অর্থ লেনদেন নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি এবং একজনের দায়ের করা মানহানির মামলার পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি। ব্র্যাক ব্যাংকের সুইচের ত্রুটির সুযোগে আর রূপালী ব্যাংকের মনিটরিংয়ের অভাবের কারণে গ্রাহকরা বুথ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে বছরের পর বছর ধরে ত্রুটিপূর্ণ সফটওয়্যার চলেছে, সেটি ব্র্যাক বা রূপালী ব্যাংকের নজরে না আসাটাও অস্বাভাবিক। এ ব্যাপারে রূপালী ব্যাংকের আইসিটি অপারেশনস বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কাওসার মোস্তাফিজ জনকণ্ঠকে বলেন, এমন ঘটনার পর ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম সেবা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের মার্চে রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বর্তমানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সারাদেশের ৫৬৪টি শাখার গ্রাহকদের এটিএম সেবা দিয়ে তারা লাভবান। তারা সর্বনিম্ন রেটে সেবা দিচ্ছেন। দেশের সবকটি ব্যাংকের সঙ্গে তাদের এটিএম সেবা চালু আছে। রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ টাকা টাকা তুলতে পারছেন। আবার অন্য ব্যাংকের গ্রাহকরাও রূপালী ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারছেন। এটিএম কেলেঙ্কারির বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের আইসিটি অপারেশনস বিভাগের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বিষ্ণু চন্দ্র সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটনাটি ঘটেছিল বলে তাদের, বুয়েট ও পুলিশের পিবিআইয়ের তদন্তেও ধরা পড়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় সঠিকভাবে মনিটরিং করা সম্ভব না হওয়ায় ঘটনাটি ঘটে। এটিএম সেবার নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা অন্য ৪১টি শাখা থেকে কোন টাকা খোয়া যায়নি। ব্র্যাক ব্যাংক যে টাকা দাবি করছে, সেই টাকা রূপালী ব্যাংকের নয়। এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এম ফরিদ উদ্দিন জমাদ্দার জনকণ্ঠকে বলেন, উত্তোলিত বাড়তি টাকা রূপালী ব্যাংকের নয়। যেসব গ্রাহক অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করেছেন, তারা রূপালী ব্যাংকের গ্রাহক হওয়ায় তাদের রূপালী ব্যাংকের তরফ থেকে নোটিস দিতে হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, চুক্তি মোতাবেক রূপালী ব্যাংকের কাছে তাদের পাওনা প্রায় চার কোটি টাকা। দীর্ঘ দিন হয়ে গেলেও রূপালী ব্যাংক সেই পাওনা এখনও পরিশোধ করেনি। আদালতের রায়ের পরেই বিষয়টির সুরাহা হবে। বিষয়টি সম্পর্কে ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেইলিং ব্যাংকিংয়ের প্রধান নাজমুর রহিম জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রাহক যখন এটিএম কার্ডটি বুথে প্রবেশ করাবেন, তখন সেটি প্রথমেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে রূপালী ব্যাংককে নক করবে। এরপর গ্রাহক যখন টাকার জন্য চাপ দেবেন, তখন ব্র্যাক ব্যাংকের সুইচ রূপালী ব্যাংকের সুইচকে ওই গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা রূপালী ব্যাংকে তার এ্যাকাউন্টে জমা আছে কি না তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানতে চাইবে। রূপালী ব্যাংক যখন ওই গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে, তখনই গ্রাহক এটিএম বুথ থেকে চাহিদা মোতাবেক টাকা পাবেন। এ ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। গ্রাহক চাইলেও তার এ্যাকাউন্টে থাকা টাকার অতিরিক্ত টাকা তুলতে পারবেন না। মূলত রূপালী ব্যাংকের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে টাকা না থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক ওই গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা এ্যাকাউন্টে জমা আছে বলে গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছে। তখন ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা সরবরাহ করেছে। এভাবেই রূপালী ব্যাংকের আটটি এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটি ঘটে। সফটওয়্যারের দুর্বলতার কারণে ব্র্যাক ব্যাংকের সুইচের গ-গোলের সুযোগ নিয়ে গ্রাহকদের অতিরিক্ত টাকা তুলে নেয়ার যে অভিযোগ ইনফিনিটি টেকনোলজি ও রূপালী ব্যাংকের তরফ করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। কারণ ব্র্যাক ব্যাংকের সুইচের গ-গোল কোন সময়ই ছিল না। এখনও নেই। তিনি বলছেন, উত্তোলিত বাড়তি টাকা রূপালী ব্যাংকের নয় বলে ব্যাংকটি দাবি করছে। এ সব টাকা দৃশ্যমান ব্র্যাক ব্যাংকের হলেও রূপালী ব্যাংক অনুমতি দেয়ার পরেই গ্রাহকরা এসব টাকা এটিএম বুথ থেকে তুলতে পেরেছেন। তাই উত্তোলিত টাকা চুক্তি মোতাবেক রূপালী ব্যাংকের উচিত ব্র্যাক ব্যাংকে পরিশোধ করা। তিনি আরও জানান, এটিএম নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা আরও ৪১টি শাখা থেকে একইভাবে গ্রাহকরা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে তাদের তদন্ত মোতাবেক এসব শাখা থেকে কোন টাকা খোয়া যায়নি। রূপালী ব্যাংকের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, রূপালী ব্যাংকের এটিএম নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা ৪৪টি শাখার গ্রাহকরাই টাকা লুটপাট করেছে। তিনটি শাখার মাত্র আটটি এ্যাকাউন্টের পাঁচ ব্যক্তি বেশি টাকা তুলে নেয়ায় এবং মামলা হওয়ার কারণে তা আলোচনায় এসেছে। বাকি ৪১টি শাখার এটিএম কার্ডধারী অনেক গ্রাহক ব্র্যাক ব্যাংকের বুথ থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নিয়েছে। হাতিয়ে নেয়া টাকার পরিমাণ তুলনামূলক কম হওয়ায় রূপালী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক গ্রাহকদের কাছে আস্থা সঙ্কটে পড়ার ভয়ে এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয়ে এ নিয়ে আর আলোচনা করেনি। হাতিয়ে নেয়া অর্থের পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকার বেশি। প্রকৃত চিত্র আরও বেশি হতে পারে। এ সব ঘটনায় কোন মামলা না হওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। এমনকি তিনটি এ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেয়া প্রায় তিন কোটি টাকা আদায়ে রূপালী ব্যাংকের তরফ থেকে দায়ের করা ৬টি মামলাও হিমাগারে ছিল। জাকী আহমেদ নামের এক গ্রাহক মানহানির মামলা দায়ের করার পর রূপালী ব্যাংকের তরফ থেকে দায়ের করা ওই ছয়টি মামলা আলোচনায় আসে। জাকী আহমেদের দায়ের করা মানহানির মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত রূপালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আতাউর রহমান প্রধান জনকণ্ঠকে বলেন, এটিএম বুথের কেলেঙ্কারির সময় তিনি সোনালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান করার চেষ্টা করেছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এবং পদে থাকার কারণে তাকে মানহানির মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলছেন, তবে এটি সত্য, ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহার করে রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকদের অতিরিক্ত টাকা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই টাকা রূপালী ব্যাংকের না ব্র্যাক ব্যাংকের তা মন্তব্য করার এখনও সময় আসেনি। আদালত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
×