ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া ॥ কৃতিত্বের দাবিদার মেয়র সাঈদ খোকন

ঢাকা দক্ষিণ ধীরে হলেও সবুজ স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন বাসযোগ্য হয়ে উঠছে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৬ মে ২০১৮

 ঢাকা দক্ষিণ ধীরে হলেও সবুজ স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন বাসযোগ্য হয়ে উঠছে

মশিউর রহমান খান ॥ ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার সার্বিক চিত্র। সবুজ, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে নাগরিক সেবার মান বাড়াতে নেয়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাত্র কয়েক বছর আগের ও বর্তমান চিত্র অনেকটাই বিপরীতমুখী অবস্থান করছে। গত তিন বছরেই পাল্টে গেছে পূর্বের জীবনযাপনের অসহনীয় চিত্র। বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে ঢাকার দক্ষিণ অংশ। নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতের পরিকল্পনা অনুযায়ী তেমন সাফল্য না এলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় গৃহীত নানা উদ্যোগ ও প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা গেলে দ্রুতই পাল্টে যাবে ঢাকার বর্তমান চেহারা। নতুন যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোর সার্বিক কর্মকা- সম্পন্ন করার পর ঢাকার চিত্রই অনেকটা পাল্টে যাবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বর্তমান সরকারের আমলেই আমলা দিয়ে প্রশাসক দিয়ে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করা হতো। সে সময় ডিএসসিসির আর্থিক দুরবস্থা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি এতোটাই নি¤েœ চলে গিয়েছিল যে, খোদ নগর ভবনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রাপ্য মাসিক বেতন বকেয়া থাকতো বা সময়মতো পেতেন না। আবার পেলেও নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরই তাদের বেতন দিতে হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রকল্প ও নানা খাত থেকে টাকা এনে ডিএসসিসির বিভিন্ন বিভাগের আর্থিক চাহিদা মেটাতে হতো রাজধানীর অন্যতম সেবাদানকারী বৃহৎ সংস্থাটিকে। রাজপথ থেকে শুরু করে অলিগলি প্রায় সকল রাস্তাঘাট ভেঙে-চুরে একাকার হয়ে গিয়েছিল। যত্রতত্র রাস্তার উপরেই বর্জ্য ফেলে রাখা হতো। পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও নিয়মিত কাজ করতেন না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় একপর্য়ায়ে অনেকটা ভেঙে পড়েছিল সার্বিক বর্জ্য সংগ্রহ ও নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলার নিয়মিত কার্যক্রম। মশা মারার ওষুধের কোন মজুতই ছিল না। সন্ধ্যা হলেই নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে নেমে আসতো নীরবতা, সড়ক বাতি জ্বলত না। যেসব বাতি জ্বলতো তাদেরও অধিকাংশ খুবই কম আলো দিত। বিদ্যুত বিল বকেয়ার কারণে নগর ভবনের বিদ্যুত লাইন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। রাজস্ব আদায়ের হার সর্বনি¤েœ চলে গিয়েছিল। কয়েক শত কোটি টাকা বকেয়া থাকার পরও অর্থ আদায় না হওয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের সময়মতো বেতন ভাতা পরিশোধ করতে না পারার ফলে ডিএসসিসি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে বাধ্য হয়। যদিও নানা সীমাবদ্ধতায় তেমন একটা আর্থিক সুফল পায়নি ডিএসসিসি। এ অবস্থায় দায়িত্ব নেন সংস্থাটির নির্বাচিত প্রথম মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এসব সমস্যার স্থায়ী উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহে মেয়র সাঈদ খোকন নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক চিত্র। সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে ও তাৎক্ষণিকভাবে নাগরিকদেরকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধারকল্পে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে সমস্যা চিহ্নিত করে সহায়তার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করেন মেয়র সাঈদ খোকন। এরপর থেকে নাগরিক দুর্দশা লাঘবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহের ফলে অতি দ্রুতই পাল্টে যেতে থাকে ডিএসসিসির সার্বিক চিত্র। সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন বছরে নগরীর ভাঙাচোরা বেহাল রাস্তা, ফুটপাথ, নর্দমা সংস্কার ও মেরামত, এলইডি বাতি সংযোজন, পাবলিক টয়লেট, পার্ক, খেলার মাঠ, কবরস্থান, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন (এসটিএস) নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, রাজস্ব উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণ, নাগরিকদের সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করার মধ্য দিয়ে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছে সংস্থাটি। সময়ের ব্যবধানে ইতোমধ্যেই নানা ধরনের পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে ও আরও কিছু প্রকল্প দ্রুতই দৃশ্যমান হবে। ডিএসসিসির তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত বিভিন্ন অলিগলিতে মোট ৩৭ হাজার ৯শ ৭৯ এলইডি বাতি স্থাপন করেছে। নব সংযুক্ত ৮ ইউনিয়নেও এলইডি বাতি স্থাপন কার্যক্রম চলছে। একসময় শুধু রাস্তায় আলো না থাকায় প্রতিনিয়ত নাগরিকদেরকে ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের শিকার হতে হতো। মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে পুরো এলাকার যেখানে প্রায় ২০ ভাগ রাস্তার বাতি জ্বলতো সেখানে সকল প্রধান রাস্তার পাশাপাশি অলিগলিসহ বর্তমানে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ এলাকা স্বচ্ছ আলোতে ছেয়ে গেছে। বাসোপযোগী, পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর নগরী গড়ে তুলতে গত তিন বছরে সরকারের অর্থে ও ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ৪শ’ ৭৩ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রায় ১শ’ ১৩ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। যদিও বেশকিছু ফুটপাথ ইতোমধ্যেই দখল হয়ে গেছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ও রাস্তার পানি সরাতে প্রায় ৪ শ’ ৭০ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া সকল ওয়ার্ডের সকল ছোট-বড় রাস্তার উন্নয়নে নতুন ২শ’ ৬০ কিলোমিটার সড়ক ও ২শ’ ৬২ কিলোমিটার ড্রেন এবং প্রায় ৫২ কি.মি. ফুটপাথ নির্মাণের কাজ হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নতুন ৩০ বাস-বে বা বাস স্টপেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা নির্দিষ্ট স্থানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এছাড়া ৪ ইন্টারসেকশন উন্নয়নসহ ৭১ স্বচ্ছ পুলিশ বক্স নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮ পুলিশ বক্সের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং পাঁচটি উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের ৮ এলাকায় ৫শ ৬০ স্থানে অনস্ট্রিট পার্কিং চালু করা হয়েছে। নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য অত্যাধুনিক ১৯ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। আরও ৪৭টির মধ্যে ১৫টির নির্মাণ কাজ চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসি প্রায় ৪ শ’ কি. মি. নর্দমা পরিষ্কার করেছে। শান্তিনগর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ নির্মাণের বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। পুরান নাজিমউদ্দিন রোডে জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে কাজ চলছে। এছাড়া নগরীর অন্যান্য এলাকার বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণকল্পে ইতোমধ্যে প্রায় ২শ ৬২ কি.মি. নর্দমা, ২শ ৫৯.৬১ কি.মি. সড়ক, প্রায় ৫২ কি.মি. ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১শ ৩৫ কি. মি. রাস্তা, ২৭ কি.মি. ফুটপাথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ডিএসসিসির সঙ্গে নব যুক্ত হওয়া ৮ ইউনিয়নের উন্নয়নে প্রায় ৭শ ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়ার ৪ ইউনিয়নের প্রায় ১শ ৫৩ কি.মি. রাস্তা, ৬ কি.মি. ফুটপাথ, ১শ ৫৯ কি.মি. নর্দমা, ১শ ৪৪ কি.মি. রাস্তায় এলইডি লাইট, ৭ হাজার ৬৩ বৃক্ষরোপণসহ নানা অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ডিএসসিসি জানায়, ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সমস্ত কাজ শেষ করা হবে। এছাড়া মান্ডা, ডেমরা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও-এ ৪টি ইউনিয়নের জন্য ৪শ ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬৬ কি.মি. রাস্তা, ৪৮ কি.মি. নর্দমা, প্রায় ৮ কি.মি. ফুটপাথ, ১৭ আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। নাগরিকদের সুবিধার্থে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য এবং বিনোদনের জন্য ‘জলসবুজে ঢাকা’ শীর্ষক কর্মসূচীর মাধ্যমে একটি গোস্যা পার্কসহ আন্তর্জাতিক মানের ৩১ পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন করা শুরু করা হয়েছে। নিরাপদে সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে কেস প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৯টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে ও মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে আরও নতুন ৭টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ১৬টি ফুটওভার ব্রিজের সংস্কার করেছে। ডিএসসিসি মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ২৭নং রাপা প্লাজা হতে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত সড়কটি আদর্শ সড়কে রূপান্তর করতে কাজ করছে। ঢাকাকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে নগরবাসীদের নিজ নিজ বসতবাড়ির ছাদে বা আঙিনায় বাগান করার জন্য শতকরা ১০ ভাগ ট্যাক্স রিবেট প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। ফুটওভার ব্রিজগুলোকে সবুজ বৃক্ষশোভিত করে সৌন্দর্য বর্ধন করেছে। এছাড়া মতিঝিলসহ বিভিন্ন সড়কের মিডিয়ানে বিউটিফিকেশন করেছে। উন্নয়ন কাজে গতিশীলতা আনতে সংস্থাটি অত্যাধুনিক কোল্ড মিলিং মেশিন, জেট এ্যান্ড সাকার মেশিন এনেছে। কোল্ড মিলিং মেশিন দিয়ে পুরনো ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে মাত্র ৭ ঘণ্টায় ১ কি.মি. সড়ক নির্মাণ করা যায়। যা দিয়ে ব্যয়ও ৪০ ভাগ অর্থ সাশ্রয়ী হয়। জেট এ্যান্ড সাকার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন নর্দমাতে জমে থাকা শক্ত ময়লা পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে। নগরীর ৪৫নং ওয়ার্ডে অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত ৬ তলাবিশিষ্ট মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সেন্টার নির্মাণসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ৬টি কমিউনিটি সেন্টারের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া কর্পোরেশনের আওতাধীন ২১টি ব্যায়ামাগার ও ১২টি সঙ্গীত শিক্ষা কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হচ্ছে। সংস্কৃতি বিকাশে যা সহায়তা করবে। রাজধানীতে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৫ শ’ বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত ফ্ল্যাট-বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, আজিমপুর ও জুরাইন কবরস্থানে স্থান সংরক্ষণ, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার অর্ধেক ভাড়ায় ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছে সংস্থাটি। যা এর আগে কখনও হয়নি। পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন ও সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় ২২ শ’ টি বিলবোর্ড অপসারণ করেছে বলে জানা গেছে। নগরীর সৌন্দর্য বজায় রেখে ব্যবসায়ীদের পণ্যের প্রচারের সুবিধার্থে পান্থকুঞ্জ পার্ক, গাউছিয়া মোড়, রাসেল স্কয়ার, তাঁতিবাজার মোড় ইত্যাদি এলাকায় ৯টি ডিজিটালাইজড এলইডি বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৯শ’ ৫০টি বক্স এলইডি বোর্ড বসানো হয়েছে। ফলে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতকল্পে ডিজিটাল হাজিরা, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম, টেন্ডারিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় শতভাগ ই-টেন্ডারিং চালু, সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম সরেজমিন দেখার জন্য ডিএসসিসি লাইভ মনিটরিং চালু করা হয়েছে। এছাড়া জনগণের দোরগোড়ায় নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নগর ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। গত তিন বছরে মান্ডা খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। ডিএসসিসির অবৈধ দখলে থাকা প্রায় ১শ’ ২০ একর জমি উদ্ধার করেছে। মশার বংশবিস্তার রোধকল্পে ফগিং এবং লার্ভিসাইডিং-এর নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ, ডেঙ্গু মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীদের রক্ষাকল্পে ও মশার বংশবিস্তার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক টিভিসি সম্প্রচার, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, লিফলেট বিতরণ, মাইকিংসহ সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সেমিনার করেছে। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য কল সেন্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে ঔষধসহ স্বাস্থ্য সেবা প্রদান এবং ডেঙ্গু পরবর্তী শারীরিক অসহ্য যন্ত্রণা নিরসনে বাড়িতে ডাক্তার পাঠিয়ে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান ও প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শীতকালীন সর্দি, কাশি, জ্বরের সেবা প্রদানসহ কল সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করেছে। খাদ্যে ভেজালবিরোধী কার্যক্রমে ১৩ সরকারী ও ১৯টি বেসরকারী কাঁচাবাজারকে ফরমালিনমুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি ডিএসসিসির। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দশটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন (এসটিএস) নির্মাণ করা হয়েছে আরও তেরোটির নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া ডিএসসিসি ও প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিদিন নগরীর প্রায় ৮ শ’টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০ টন ক্ষতিকর বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিবেশ সম্মতভাবে পরিশোধন করছে। দৃষ্টির বাইরে রাখতে বর্জ্যবাহী কন্টেনারগুলোকে ফেন্সিং করা হয়েছে। নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার লক্ষ্যে সংস্থার ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫ হাজার ৭শ’টি ওয়েস্টবিন স্থাপন করা হয়। তবে এদের অধিকাংশই চুরি হয়ে গেছে। কিছু ওয়েস্টবিন নষ্ট হয়ে গেছে। গত ঈদুল আজহায় অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটের ও কোরবানির বর্জ্য মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংস্থাটি অপসারণ করতে সক্ষম হয়। ল্যান্ডফিলে বর্জ্য অপসারণ করতে ও বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর তথা বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যে ৭শ’ ২৫ কোটি টাকার “মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন” নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ৮১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ধলপুর, লালবাগ ও গণকটুলীতে ছয় তলাবিশিষ্ট ৬টি ক্লিনার কলোনি নির্মাণ করা হয়েছে। গণকটুলিতে আরও ৬টি ও মিরন জলঢাকা ক্লিনার কলোনিতে ৩টি ছয়তলা ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া ধলপুর ক্লিনার কলোনিতে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলছে। এলজিইডির মাধ্যমে ১৩ দশ তলা বিশিষ্ট ভবনে সর্বমোট ১ হাজার ২শ’ ১৮ ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি শীর্ষক এক ব্যতিক্রমধর্মী জবাবদিহিমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ওয়াসা, ডেসা, তিতাস, রাজউক, ডিএমপিসহ ২৮টি সেবা সংস্থার প্রতিনিধিসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। এলাকাবাসীর বিভিন্ন সমস্যার শোনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। ডিএসসিসি চানখারপুল, ঢাকেশ্বরী মার্কেটের উন্নয়ন কাজ করছে। অটোমেশন পদ্ধতিতে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নেরও ব্যবস্থা নিচ্ছে সংস্থাটি। এছাড়া করদাতাগণ ঘরে বসেই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য ও আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যা দেশে প্রথম। বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনসহ পুরাতন ঢাকা বিশেষ করে কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, সূত্রাপুর, নয়াবাজারসহ গুলিস্তান, খিলগাঁও, মুগদা, বাসাবো সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম করতে ঢাকা আরবান আপগ্রেডিং প্রজেক্ট’ নামে নতুন প্রকল্প সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে এসব এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। গত তিন বছরের নাগরিকসেবা তথা উন্নয়ন কর্মকা- সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জনকণ্ঠকে বলেন, গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সহায়তায় আর আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় দশ বছরের উন্নয়ন কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, নাগরিক সুবিধা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। যা সকলের দৃশ্যমান। রাস্তাঘাট, পার্ক, খেলার মাঠ, ড্রেন নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গতি আনা, অলিগলিতে আধুনিক স্বচ্ছ সড়কবাতি স্থাপন, মশক নিধন, নাগরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনামূল্যে ডাক্তারসহ ওষুধ প্রদানসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রমে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ ও পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার সরাসরি সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী। সার্বিক দিক বিবেচনায় গৃহীত নানা উদ্যোগ ও প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা গেলে দ্রুতই পাল্টে যাবে ঢাকার বর্তমান চেহারা। এছাড়া নতুন যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোর সার্বিক কর্মকান্ড সম্পন্ন করার পর ঢাকার চিত্রই অনেকটা পাল্টে যাবে। নির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগে কিছুটা ব্যর্থতা স্বীকার করে মেয়র বলেন, আশা করি নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যেই ঢাকাকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন আধুনিক বাসযোগ্য ঢাকা উপহার দিতে সক্ষম হব। এর মাধ্যমে নতুন ঢাকা হবে আগামী প্রজন্মের ঢাকা।
×