ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকবিরোধী অভিযানে এমপি বদির বেয়াইসহ নিহত ১৩

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৬ মে ২০১৮

 মাদকবিরোধী অভিযানে এমপি বদির বেয়াইসহ নিহত ১৩

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে ঢাকাসহ দশ জেলায় ১৩ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। আর নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে মারা গেছে ২ জন। কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বেয়াইসহ এ নিয়ে গত ছয় দিনে ৫৬ মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হলো। এক মাদক ব্যবসায়ীর পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত চালানো অভিযানে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। অভিযানে উদ্ধার হয়েছে বিপুল মাদকদ্রব্য ও আগ্নেয়াস্ত্র। ঢাকা ॥ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে বিজি প্রেস স্কুল মাঠের গলিতে র‌্যাবের সঙ্গে বেপরোয়া মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলিতে কামরুল ইসলাম (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। নিহত কামরুল ইসলাম অন্তত ডজনখানেক মাদক মামলার আসামি ছিল। তেজগাঁও রেললাইন বস্তি ও মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করত সে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে ১৫টি মামলা রয়েছে। লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল ইয়াবা, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। অভিযানকালে র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। সারাদেশ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর নেত্রকোনা ॥ বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে জেলা সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং গ্রামে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন খান জানান, নিহতদের পরিচয় মেলেনি। ঘটনাস্থল থেকে তিন হাজারের বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট, দুটি পাইপগান ও ৭শ’ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার হয়েছে। ময়মনসিংহ ॥ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে দুটার দিকে জেলা সদরের পুরোহিত মহল্লা রেলওয়ে কলোনির রেনু বেগমের পুকুরপারে পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রচ- গোলাগুলি হয়। এতে রাজন মিয়া (৩৪) নামে একজন নিহত হয়। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান জানান, নিহত রাজন ময়মনসিংহ শহরের পুরোহিত মহল্লার হারনি মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে নয়টি মামলা আছে। লাশ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। অভিযানে তিনি ও তার সঙ্গীয় এক কনস্টেবল আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৪শ’ পিস ইয়াবা, তিনটি গুলির খোসা ও একটি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার হয়েছে। সাতক্ষীরা ॥ বৃহস্পতিবার রাত দুটার দিকে জেলার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি গ্রামে পুলিশ ও দুই গ্রুপ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ত্রিমুখী গোলাগুলি হয়। এতে ইউনুস আলী নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানান, কলারোয়ার দক্ষিণ ভাদিয়ালি গ্রামের আব্দুল্লাহর ছেলে ছিল ইউনুস। সে মূলত মাদকের কারবারি ছিল। তার বিরুদ্ধে একাধিক মাদকের মামলা আছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শূটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। ঝিনাইদহ ॥ বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়ায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে শামীম সরদার নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, নিহত শামীম ওই এলাকার মমিন সরদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মাদক আইনে নয়টি মামলা আছে। গোলাগুলির সময় কালীগঞ্জ থানার এসআই অমিত কুমার দাশ, এ এস আই শামীম হোসেন, কনস্টেবল নাজিম উদ্দিন ও রতন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, ৫শ’ পিস ইয়াবা ও ১৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। কুমিল্লা ॥ বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের মহিষমারায় পুলিশ ও ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানকালে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলাগুলি হয়। এতে কামাল হোসেন (৫১) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী মারা যায়। বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার জানান, নিহত কামাল সদর উপজেলার রাজমঙ্গলপুর গ্রামের হিরন মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে বুড়িচং ও কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় ১২টি মাদক মামলা আছে। কামাল এলাকায় ফেনসি কামাল হিসেবে পরিচিত ছিল। অভিযানের সময় ডিবির এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার, এএসআই সাহাবুল হোসেন ও কনস্টেবল সুমন মিয়া আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে হানিফ (৪২) ও ইলিয়াস (২৮) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১ রাউন্ড কার্তুজসহ একটি পাইপগান ও ৫০ কেজি গাঁজা। শেরপুর ॥ শুক্রবার ভোর তিনটার দিকে উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র সেতুর কাছে সাতপাকিয়ায় পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আজাদ ওরফে কালু নামে একজন নিহত হয়। শেরপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, কালু সদরের মরাকান্দি খাসপাড়া গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে। কালু চরপক্ষীমারী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য মমতাজ বেগমের ভাই। কুখ্যাত ডাকাত ও মাদক চোরাকারবারি ছিল। অভিযানে শেরপুর সদর থানার এক এসআই ও দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন। যদিও কালুর স্বজনদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ কালুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শুক্রবার ভোরে তারা কালুর খবর পান। পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামের দাবি, কালু শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী ছিল। তাকে আগে গ্রেফতার করার তথ্যটি সঠিক নয়। গাইবান্ধা ॥ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার ফলিয়া সেতু ও ফুলছড়ির মদনেরপাড়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে জুয়েল মিয়া (৪৭) নিহত হয়। সদর থানার ওসি খান মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, জুয়েল জেলা শহরের ব্রিজ রোড মিস্ত্রিপাড়ার নছিম উদ্দিন ওরফে নছিম ড্রাইভারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে ১২টি মামলা আছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় পাইপগান, দুই রাউন্ড গুলি ও পাঁচ শতাধিক ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। অভিযানে তিন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। বগুড়া ॥ বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে শহরের প্রথম বাইপাস রোডের ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণ দিকে একদল মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়। এতে নয়ন নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি লাগে। নয়ন বগুড়া শহরের নিশিন্দারার আব্দুর রহমানের ছেলে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, নয়নের কাছ থেকে ২শ’ পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শূটার গান ও দুটি গুলি উদ্ধার হয়েছে। নয়নের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে দুটি ও মাদক আইনে ছয়টি মামলা আছে। কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আফরুজুল হক টুটুল জানান, রামু উপজেলার কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকা থেকে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে আক্তার কামাল (৪৮) নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ছিলেন। তিনি সাংসদ আব্দুর রহমান বদির বোনের দেবর। তার নামে টেকনাফসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় মানবপাচার ও মাদক চোরাচালানের পাঁচটি মামলা আছে। লাশের সঙ্গে এক হাজার পিস ইয়াবা, একটি দেশী বন্দুক ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। মাদক মামলা মাথায় নিয়ে আক্তার দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। ইয়াবা কারবারিদের দুপক্ষের কোন্দলের জেরে গোলাগুলিতে আক্তার নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মহেশখালীা উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের পাহাড়তলী এলাকা থেকে মোস্তাক আহমদ (৩২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, মোস্তাক ওই এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের চোরাকারবারে জড়িত অভিযোগে মহেশখালী থানায় অন্তত ৩টি মামলা আছে। পাহাড়তলী এলাকায় দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলি হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মোস্তাকের লাশ উদ্ধার হয়। ঘটনাস্থল থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা, চারটি বন্দুক ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে।
×