এক সময় আব্দুল লতিফ টাকার অভাবে বিএ ফরম ফিলাপ করতে পারেনি তিনি আজ মিশ্র ফসল চাষে স্বাবলম্বী। শুধু তাই নয় এলাকায় তিনি একজন মডেল কৃষকও বটে। তার খামারে এখন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা কৃষি কলাকৌশল শিক্ষা নিতে এসে ভিড় জমাচ্ছে। তার বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার আতাইকুলা ইউনিয়নের জোয়ারদহ গ্রামে।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান মোঃ আব্দুল লতিফ আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে ফি যোগাড় করতে না পারায় ১৯৯৭ সালে বিএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তিনি পরিবারিক অভাব-অনটন আর বেকারত্বের যন্ত্রণায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একদিন যুব উন্নয়ন অধিদফতরের একটি বিজ্ঞাপন তার চোখে পড়ে। তিনি যুব উন্নয়ন থেকে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, মৎস্য ও কৃষির ওপর ২০০৪ সালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত ১ বিঘা জমিতে ধানের পরিবর্তে কলা ও পেপে চাষ করেন। লতিফের ১ বিঘা জমিতে কলা ও পেঁপে আবাদের জন্য ব্যয় হয় ২০ হাজার টাকা। ওই বছরেই তার ভাগ্য খুলে যায়। খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হয় এক লাখ ৫ হাজার টাকা। ২০০৬ সালে এক বিঘা জমির পাশাপাশি অন্যের আরও তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে পেঁপে ও কলার সঙ্গে মৌসুমী ঝিঙা, শিম ও লেবু আবাদ করেন। নিজের ও বর্গাসহ তার চার বিঘা জমিতে মৌসুমী ফসলের বাম্পার ফলনে লতিফের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে ওঠে। তিনি ফসল বিক্রি করে একখ- জমি ক্রয় করে। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর একই জমিতে মিশ্র ফসল উৎপাদন করে এলাকার কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। তিনি একই জমিতে লিচু, পেঁয়ারা, আম, কলা, পেঁপে, শসা, ড্রাগন, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, ধনে পাতা, গ্লাডিয়েটর ফুল চাষ করে এ এলাকার কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন। তার এ পদ্ধতি দেখে এলাকার কৃষকরা জমিতে ধান আবাদের পরিবর্তে মৌসুমী ফসল আবাদে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। ২০১৭ সালে লতিফ ১২ বিঘা জমিতে লিচু আবাদ করে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। ওই মৌসুমে লিচু বিক্রি করে তিনি ২২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আয় করেন। কোন প্রাকৃতিক বিপর্যর না ঘটলে এবারও তার লিচু বাগানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি বাগানে মোজাফফর, বোম্বে, বেদানা, চায়না-৩, চায়না-৪ জাতের লিচু আবাদ করেছেন। এছাড়াও লতিফ এবার তার ৫ বিঘা জমিতে বিটি বেগুন, ৬ বিঘা জমিতে পেয়ারা আবাদ করেছেন। যদি কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটে তাহলে বেগুন ও পেয়ারা থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় করবেন আব্দুল লতিফ। এর পাশাপাশি ৫ বিঘা জমিতে পেঁপে, পুল্লা, বরবটি, ঝিঙা, মুগ ডাল ও গ্লাডিয়েটরস ফুল আবাদ শুরু করেছেন। এ থেকে তার আয় হবে প্রায় ৬ লাখ টাকা। তবে সার-বিষ, বীজ ও শ্রমিকের মজুরি অনেকগুণ বেড়ে যাওয়ায় তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সহজ শর্তে ঋণ বা আর্থিক অনুদানের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি এখন একজন মডেল কৃষক হিসেবে এলাকায় ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। প্রতিদিন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা কৃষি কলাকৌশল শিখতে তার খামার পরিদর্শন করছে।
-কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: