ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় ধান মাড়াই মেশিনের কদর বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২৬ মে ২০১৮

নওগাঁয় ধান মাড়াই মেশিনের কদর বাড়ছে

চলতি বোরো ধান কাটা-মাড়াই মৌসুমে নওগাঁ অঞ্চলে কামলা সঙ্কটে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ধান মাড়াইয়ের মেশিন। কৃষকদের এখন আর কাঠের পিঁড়ি বা টিনের ড্রামে ধান পেটাতে হয় না বা গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের অপেক্ষাতেও থাকতে হয় না। এক সময় বোরো ও আমন ধান কেটে মাঠ থেকে বাড়িতে আনার পর বড় পিঁড়িতে পিটিয়ে ধান বের করতে হতো। আবার তেলের ড্রাম বা গাছের গুলও ব্যবহার করা হতো। যেগুলো ছিল সময় সাপেক্ষ। এছাড়া শ্রমিকও লাগতো বেশি। এরপর এলো পা দিয়ে ব্যবহৃত মেশিনে ধান মাড়াই। পরবর্তীতে শ্যালোমেশিনে ধান মাড়াই। তবে সময়ের পরিক্রমায় দিন যতই যাচ্ছে ততই আমরা যন্ত্র চালিত হয়ে পড়ছি। স্বল্প সময়ে কম পরিশ্রমে বেশি বেশি সুফল পাবার আশা করছি। আধুনিক যুগে দেশীয় পদ্ধতিতে ধান মাড়াইয়ে যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেটি দিয়ে কম সময়ে যে কোন পরিবেশে ধান মাড়াই করা হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ এ ধান মাড়াই যন্ত্র হচ্ছে পাওয়ার থ্রেসাল মেশিন। যা গ্রামগঞ্জে ‘ভূতের মেশিন’ নামে আবার কোন কোন এলাকায় বঙ্গা নামে বেশি পরিচিত। বর্তমানে জেলার কৃষকদের কাছে ধান মাড়াইয়ে এ যন্ত্রের ব্যাপক কদর বেড়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় ধান কাটা মাড়াইয়ের আগে ঝড়-বৃষ্টিতে জেলায় কিছু অংশ ধান পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া ঝড়ের কারণে ধানগাছগুলো মাটিতে শুয়ে পড়ে। ফলে ধান পুরোপুরি পাকার আগ মুর্হূতে এক সঙ্গে কাটা মাড়াই শুরু হওয়ায় শ্রমিক (কামলা) সঙ্কটে পড়ে কৃষক। যেখানে দিনে সাড়ে ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া দায় হয়ে পড়ে। বর্তমানে এক বিঘা জমির ধান কাটতে দূরত্ব ভেদে ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। যা কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ঠিক এসময় ধান কাটা শ্রমিক সঙ্কটের কারণে আধুনিক পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ ধান মাড়াই পাওয়ার থ্রেসাল মেশিনের ব্যাপক কদর বেড়েছে কৃষকের কাছে। কোন রকম মাঠ থেকে ধান বাড়িতে বা রাস্তায় নিয়ে এসে এ মেশিন দিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। এ মেশিন দিয়ে প্রতি বিঘা ৪শ’ টাকা দরে অথবা প্রতি মণ ধানে এক কেজি করে ধান দিয়ে মাড়াই করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। এ মেশিনে ধান মাড়াইয়ে একজন লোক এ কাজ করে থাকেন। তবে পাশ থেকে ধান নিয়ে আসতে আরেকজন সহযোগীর প্রয়োজন হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে মাড়াই মেশিনের মালিকদের কাছে ধান কাটার আগেই মোবাইল ফোনে বা সশরীরে গিয়ে সিরিয়াল দিতে হচ্ছে। তবে মাঠ থেকে ধান তুলে নিয়ে এসে বেশিরভাগ রাস্তায় পাওয়ার থ্রেসাল মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে দেখা গেছে। খড়ের কথা চিন্তা না করে কোন রকমে মেশিন দিয়ে মাড়াই করে ধান বের করতে পারলেই চিন্তামুক্ত। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি ও সঙ্কটের কারণে কৃষকরা ধান ঘরে তোলার লক্ষে শ্রমিকদের দ্বিগুণ মজুরি দিয়ে ধান কাটা শুরু করলেও শ্রমিক সঙ্কটের কারণে তা পুরোদমে কাটা মাড়াই করতে পারছেন না। জেলার ১১ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উঠানে কিংবা মাঠে, রাস্তার ধারে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাওয়ার থ্রেসাল মেশিন নিয়ে কৃষকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাড়াই কাজ সম্পন্ন করছে। বাজারে নতুন ধান এখন ৭শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×