ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে ডাহুক

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৬ মে ২০১৮

হারিয়ে যাচ্ছে ডাহুক

ডাহুক নামটি সুন্দর হওয়ায় পল্লীকবি জসীম উদ্দীনসহ অসংখ্য লেখকের গান, গল্প, কবিতা ও নাটকে বহুবার উঠে এসেছে এই পাখির নামটি। নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, ‘মালঞ্চে পুষ্পিতা অবনতামুখী/ নিদাঘের রৌদ্রতাপে একা সে ডাহুকী/ বিজন তরুণ শাখে ডাকে ধীরে ধীরে/ বনচ্ছায়া অন্তরালে তরল তিমিরে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এই পাখির নামে নিরবধি বয়ে চলেছে ডাহুক নদী। চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যপূর্ণ জনপদ মীরসরাই উপজেলার গ্রামের তেপান্তর পুকুর, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় জলাভূমি ও পতিত পুকুরের ঝোপে-ঝাড়ে থাকা এই পাখিটি এখন দিনে দিনেই হারিয়ে যাচ্ছে। রাতে ‘কোয়াক’ ‘কোয়াক’ ডাক শুনে সহজেই চিনতে পারা যায় তাকে। ডাহুকের লেজ ছোট, লেজের নিচের অংশ লালচে আভা সমৃদ্ধ। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরী-কালো, মাথা ও বুকসাদা। পা লম্বা। ঠোঁট হলুদ, ঠোঁটের ওপরে লাল রঙের একটি ছোট দাগ আছে। দেহ কালচে। মুখম-ল, গলা, বুক ও পেট সম্পূর্ণ সাদা। মাটিতে ঝোপের তলায় এরা বাসা বাধে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজননকাল। ৬-৭টি ডিমপাড়ে। ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপী মেশানো সাদা। ডাহুক-ডাহুকী উভয়েই ডিমে তা দেয়। ডাহুক আসলে চিরবিরহী একটি পাখি। সঙ্গীহীন হলে এরা পাগল হয়ে যায়। বাচ্চাদের রং সব সময় হয় কালো। জলজ পোকা-মাকড়, উদ্ভিদের কচি ডগা, শ্যাওলা এদের প্রিয় খাবার। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। কোন কোন জায়গায় এদের ডাইক, পানপায়রা, ধলাবুক ডাহুক নামেও ডাকা হয়। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৩ লাখ ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এদের আবাস। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে ডাহুক পাখিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের অসতর্কতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পাখিটি। উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের শাহ এমরান চৌধুরী বলেন, আমাদের শেখেরতালুক গ্রামসহ পুরোজন পদই ডাহুক প্রবণ এলাকা, কথা বলতে বলতে তিনি তাঁর বাড়ির সামনের ডোবার পাশে ঝোপ থেকে বেরিয়ে নীরবে একদল ছানাসহ ডাহুক পরিবার দেখালেন। একটু শব্দ হতেই মা ডাহুকী তার বাচ্চাদের নিয়ে উধাও। চলে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে। তিনি বললেন, এখনও এখান থেকে ডাহুক ধরতে আসে কিছু পাখি শিকারি। কিন্তু আমরা এইসব শিকারির সন্ধান পেলে তাড়া করি। এরপর ও সকলের অলক্ষ্যে শিকারিরা থেমে নেই। এভাবে প্রকৃতি দিনেদিনে হারাচ্ছে সমৃদ্ধ নিজস্ব রূপ। ডাহুক খুব সতর্ক পাখি। আত্মগোপনে পারদর্শী। বাসা করে পানির কাছে ঝোপ ঝাড়ের ভেতরে অথবা ছোট গাছের ডালে। নিরাপত্তা ঠিকঠাক থাকলে মাটিতেও বাসা করে। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×