ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং...

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৬ মে ২০১৮

বগুড়ায় মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং...

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ায় মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে তা সাধারণে আলেচিত হচ্ছে। এমনকি পুলিশ বিভাগও বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন। পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমানের তরুণ শিক্ষার্থীরা যেভাবে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, সেভাবে সোচ্চার হচ্ছেন না সুধী সমাজের লোকজন। এমনকি যে পরিবারের সন্তান মাদকের নেশায় নিজেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার সম্পর্কে সেই পরিবারের লোকজনকেও তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এমনকি তারা সন্তানের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমাজের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন না কোন পরামর্শ নেন না। আবার এলাকার লোকজনও ওই পরিবারকে সচেতন করে তুলে সামাজিকভাবে কোন ব্যবস্থা নেয় না। বিভিন্ন স্থানে মাদকাসক্তের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের নামে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে তাদের কর্মকা- প্রশ্নবিদ্ধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের এই কথিত কর্মসূচী অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ব্যবসায় পরিণত। পুলিশ সুপার বৃহস্পতিবার সকালে একটি অনুষ্ঠানে জানালেন, গেল দুই দিনে ৪০ জনেরও বেশি মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের প্রায় সকলের বিরুদ্ধে ৬ থেকে ৭টি করে মামলা আছে। মাদকের মামলার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-েরও অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদকের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে এই যুদ্ধ দ্রুত শেষ না করে দীর্ঘ সময় ধরে চলা উচিত, এমনটি মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিষয়ে বগুড়ার সুধীজনের সঙ্গে কথা বললে সকলেই বলেন, বগুড়ায় কোন পয়েন্টে, কোথায়, কে মাদক বিক্রি করে, মাদকের গড ফাদার কে এবং কারা, এই বিষয়ে পুলিশ জানে না, এমনটি বিশ^াস করা যায় না। সাধারণ মানুষ যেখানে মাদকের গড ফাদারদের চেনে এবং যে গড ফাদাররা মাদকের ব্যবসা করে মাল্টিমিলিয়নিয়ার হয়ে আলীশান বাড়ি বানিয়ে দামী গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ান তাদের খবর পুলিশ রাখে না বা জানে না তা কি বিশ^াস করা যায়! সুধীজনেরা এমন প্রশ্নের তীর ছুড়ে দেন পুলিশের দিকে। এর আগে মিডিয়ায় বগুড়ার কত পয়েন্টে মাদক বিক্রি হয় সেই পয়েন্টও উল্লেখ করা হয়েছিল। ফলাফল ছিল এ রকম- দুই একদিনের অভিযান। তারপর অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়। তবে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক ড. জাভেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব নেয়ার পরই সারাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই মাদক আমাদের প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের রক্ষা করতে হবে। কোনভাবেই মাদককে ছাড় দেয়া হবে না। পুলিশের মহাপরিদর্শকের এই ঘোষণা সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা এনে দিয়েছে। তারপরই দেশজুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবারিদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে মাদক দুর্বৃত্তরা মারা যাচ্ছে। বগুড়ায় মঙ্গলবার গভীর রাতে শহরতলির ছিলিমপুরে মাদক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে এক মাদক সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়। মাদক সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশ প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে। তবে রাঘব বোয়াল বা মাদকের গড ফাদারদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে এক ব্যাখ্যায় বলেন, মাদক অভিযানে দু’টি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়। ১. অর্থ সরবরাহকারী। ২.পজিশন। অর্থাৎ মাদক ব্যবসার জন্য যিনি অর্থলগ্নি করেন, যিনি মাদক বেচাকেনার জন্য অর্থের জোগান দেন ও সরাসরি অর্থ বিনিয়োগ করে মাদক বেচাকেনা করেন এবং মানি লন্ডারিং। খোঁজখবর করে এই অর্থের হদিস মেলে কিন্তু এই অর্থেই যে মাদক ব্যবসা হয় তা সহজে প্রমাণ করা যায় না। আবার দেখা যাচ্ছে চিহ্নিত ব্যক্তি মাদকের বড় কারবারি কিন্তু অভিযানে তার পজিশনে কোন মাদক পাওয়া গেল না।
×