ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাপানী সাংবাদিকের স্মৃতিকথা

চার শতাধিক ফিলিস্তিনী গ্রাম নিশ্চিহ্ন করেছে ইসরাইল

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৬ মে ২০১৮

চার শতাধিক ফিলিস্তিনী গ্রাম  নিশ্চিহ্ন করেছে ইসরাইল

জাপানী সাংবাদিক রিউচি হিরোকওয়া ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের এক কিবুজে (গুচ্ছ গ্রাম) গিয়ে জাপানের এক সাংবাদিক একটি ফিলিস্তিনী গ্রাম আবিষ্কার করেন। তিনি সেখানে গিয়ে সমাজবাদী নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি কৃষক সম্প্র্রদায়ের ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হন। আলজাজিরা। রিউচি হিব্রু ভাষা শিখতে আগ্রহী হন। সেখানে পৌঁছানোর দু’সপ্তাহের মধ্যে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ লেগে যায়। সাংবাদিক রিউচি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এই যুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত কারণেই ইসরাইল আরবদের সঙ্গে জড়িয়েছে। কারণ ফিলিস্তিনী ও আরব নাগরিকেরা ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চায়।’ তিনি জানান, একদিন তিনি দেখেন, রকেটের হামলায় ভূমিগুলো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। পরে দেখা গেল, ডালিয়াত আল-রওহা গ্রামটি মানচিত্র থেকেই নিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি কিবুজের গ্রামবাসীকে গ্রামটি সমন্ধে জিজ্ঞেস করলাম, তারা আমাকে কোন উত্তর দিল না।’ পরে আসল ঘটনা কী এটি জানার জন্য রিউচি বিভিন্ন রকম অনুসন্ধান চালান এবং পুরনো ব্রিটিশ মানচিত্রগুলো ঘেটে দেখেন। এরপর মানচিত্রে তিনি পেয়ে যান সেই সাবেক ফিলিস্তিনী গ্রামের দেখা। তবে দুঃজনকভাবে সেখানে লেখা দেখেন, ‘বিধ্বংস’ শব্দটি। তিনি বলেন, ‘এটি দেখে আমি মর্মাহত হই। আমি ভেবেছিলাম, কিবুজের কোন একটি ফার্মে আমি কাজ করছিলাম। আমি বুঝতে পারলাম আসলে তা না। আমি এমন একটি জায়গায় কাজ করছি, যেখানে কোন এক সময় মানুষ বসবাস করত। যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। আমার মনে হলো, দেশটিতে এমন কিছু লোক অবশ্যই থাকবেন, যারা আমাদের মতো বলবে, যুদ্ধটি ছিল ভুল, ভূমি অধিগ্রহণ চলবে না, যাদের জমি তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। অনেকে একজন সাংবাদিকের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন, তবে আমার মনে হয়, একজন সাংবাদিকের প্রকৃত পরিচয় হলো মানুষ হিসেবে তার বড় পরিচয়।’ রিউচি জনান, তার তদন্তের মাধ্যমে তিনি নাকবা ও ইসরাইলের তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে অভিযোগ এবং ফিলিস্তিনীদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণ জানতে পারেন। জাপানে ফিরে আসার পর ও সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত থাকাকালীন রিউচি লেবানন থেকে ফিলিস্তিনীদের বের করে দেয়াসহ তাদের বিভিন্ন দুর্দশার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। তিনি বৈরুতে ১৯৮২ সালে সংঘটিত সাবরা ও সাতিলা গণহত্যার তথ্য সংগ্রহ করেন এবং ঘটনাক্রমে ওসলো ও জেনেভায় আন্তর্জাতিক শুনানীতে তার নথিপত্রগুলো উপস্থাপন করেন। তিনি আরও বলেন, ‘১৯৮২ সালের জুনে লেবাননে ইসরাইলের হামলার ঘটনা যখন শুনলাম, আমার হৃদয় ফিলিস্তিনীদের জন্য কেঁদে উঠল, যারা দীর্ঘদিন ধরে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে ছিল। ১৯৪৮ ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ করে। এরপর গত ৩০ বছর ধরে তারা শরণার্থী জীবনযাপন করছে। তাদের একটিই দাবি, তাদের দেশ তাদের ফিরিয়ে দেয়া হোক। যাহোক, ইসরাইলী হামলার শুরু থেকে এটি স্পষ্ট যে, তাদের লক্ষ্য কেবল পিএলও’কে ধ্বংস করা না। ইসরাইল সব সময়ই ফিলিস্তিনীদের বড় একটি অংশকে হত্যা চেষ্টা করে আসছে। ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪২০টি ফিলিস্তিনী গ্রাম বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ইসরাইল।
×