কবি হিসেবে শাহীন রেজার প্রথম ও প্রধান সুর-‘প্রেম’। অবশ্য এটা শুধু তার একার বিষয় নয়। আমাদেরসহ পৃথিবীর বহু কবিরই কবিতার প্রধান ধ্বনি প্রেম। প্রেমের পরেই তারা সমর্পিত প্রকৃতি ও ঈশ্বরে। শাহীন রেজাতেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ‘না ক্রোধ না অগ্নি’ গ্রন্থে শাহীন রেজা পূর্বেকার গ্রন্থগুলো থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। এই গ্রন্থে তিনি যেমন ছন্দবন্ধ কবিতার প্রবেশ ঘটিয়েছেন ঠিক তেমনি এতে বর্ণনাধর্মী নিরেট গদ্যসহ স্থান পেয়েছে বেশ কয়েকটি সনেটও। আগেকার গ্রন্থগুলোতে বেশ কিছু শব্দের উপর তার দুর্বলতা পরিলক্ষিত হলেও এ গ্রন্থটিতে সতর্কভাবে তা থেমে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। কান্নার সিঁড়িতে গন্তব্য রেখা, দুঃখ কিংবা রোদন বালিকা প্রভৃতি কবিতায় একটা নিরীক্ষাধর্মী প্রয়াস লক্ষণীয়। কবি আল মাহমুদকে নিয়ে লেখা ‘নিসর্গের হাল’ কবিতাটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমধর্মী এবং সুখপাঠ্য কবিতা।
গ্রন্থটির আরেকটি কবিতা উল্লেখ করার মতো। কবিতাটির শিরোনাম ‘আলোর কবিতা।’ এর প্রথম কয়েকটি লাইন এ রকম-
‘কিছুটা পালাই
কিছুটা আবার ফিরে আসি অচেতনে
এভাবেই যাওয়া আসা
অযুত দুপুর আর শিশির রাতে
টুপ করে খসে পড়া ডুমুরের মতো
সময়তো কাছিম এক
শুধু হাঁটে ধীরলয়ে যেন কোনো
বনেদী ঘড়ির কাঁটা
রাত্রির দেয়ালজুড়ে প্রহরে প্রহরে
গভীর গোপনে বাজে ঢং ঢং
প্রাচীন ঘণ্টা যেন।’
জীবন নিয়ে যে নিরীক্ষা শাহীন রেজাতে প্রতি মুহূর্তে চলমান উদ্ধৃত কবিতাটিতে প্রকৃতভাবে তা শনাক্ত হয়েছে।
০১.
‘বাতাসে চুলের ঘ্রাণ
বাতাসেই বৃষ্টি বিলাস’
(বৃষ্টি বিলাস)
০২.
ভালবাসায় ঋণ থাকে না কখনো
শুধু প্রজাপতি রোদ কি কেমন শরীর মাতায়’
(ঋণ নেই ভালবাসায়)
০৩.
সুখ কি মোমের মতো কিছু
স্পর্শেই গলে যায়, নেমে আসে ধীরলয়ে
নিচে আরও নিচে অতঃপর শান্ত স্থির।
(সুখ)
এ রকম অসংখ্য পঙক্তি গ্রন্থটিকে যেভাবে ঋদ্ধ করেছে ঠিক সেভাবেই মূল্যায়িত করেছে এর রচয়িতা শাহীন রেজাকে।
‘না ক্রোধ না অগ্নি’ পাঠের পর ‘কবি ’ হিসেবে শাহীন রেজাকে এড়িয়ে যাওয়ায় কোন উপায় আছে বলে আমি মনে করি না। তারপরেও যেহেতু স্বীকৃতির মালিক ‘কাল’ আর টিকে থাকার দায়িত্ব ‘কবিতার’ তাই চূড়ান্ত অর্থে অন্য দশজনের মতো আমাদেরও থাকতে হচ্ছে প্রতীক্ষায়।
অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ‘না ক্রোধ না অগ্নি’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা শিকড়। প্রচ্ছদ এঁকেছেন কবি নিজেই। সুমুদ্রিত গ্রন্থটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা মাত্র।