ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ওষুধের তীব্র সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৫ মে ২০১৮

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ওষুধের তীব্র সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সাড়ে তিন কোটি টাকার দরপত্রে জটিলতার কারণে ভয়াবহ ওষুধসামগ্রী সঙ্কটে রয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সরবরাহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ, লিলেন সামগ্রী ও গজ-ব্যান্ডেজ শেষ হয়ে গেছে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত স্টোর কীপার রতন কুমার সরকার জানিয়েছেন, এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে জুন মাসে সকল প্রকার ওষুধ শূন্য হয়ে পড়বে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম সরকারী এ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, দরপত্রের জটিলতা নিরসনে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যশোরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলার রোগীদের আশা-ভরসার স্থল হলো যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। সরকারী এই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠনে প্রতিদিন শয্যার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড় চিকিৎসা সেবা নেন ৯ শ’ থেকে ১ হাজার রোগী। স্বনামধন্য হাসপাতাল হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় যশোরসহ নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা জেলার অধিকাংশ গরিব মানুষ এখানে আসেন। উদ্দেশ্য একটাই, অল্প খরচে উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়া। গরিব মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারীভাবে এই হাসপাতালে ৮৪ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ কর হয়। এর মধ্যে ইডিসিএল ৪৪ প্রকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্থানীয় অর্থে টেন্ডারের মাধ্যমে অবশিষ্ট ৪০ প্রকার ওষুধ কর্তৃপক্ষ কেনেন। বর্তমানে হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ দামী কোন ইনজেকশন, ওষুধ ,লিলেন সামগ্রী ও গজ-ব্যান্ডেজ নেই। সার্জারি, মেডিসিন, হৃদরোগ, গাইনি, অর্থোপেডিকস, শিশু, পেইং, লেবার ওয়ার্ডের একাধিক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, এসব ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে যৎসামান্য ওষুধ দেয়া হয়। প্রায় ওষুধ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে থেকে কিনে আনতে হয় তাদের। জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন সেফট্রি এ্যাকসন, সেফ্রাডিন হাইড্রোকরটিসন, ওমিপ্রাজল, মেট্রোনিডাজল, ক্যাসিন, ক্যাপসুল সেফ্রাডিন, ক্লিনডামাইসিন, এমোক্সাসিলিন, সেফিক্সিম, ক্লিনডামাইসিন, ওমিপ্রাজল ৪০এমজি ও নাভিতে দেয়া ইনজেকশন, ট্যাবলেট এ্যালবেনডাজল, কারভিস্টা, সেফুরএক্সিম, সিটিরিজিন, ইটোরাক, ইসোরাল, হিস্টাসিন, লপিরিল, লপিরিল প্লাস, লোসারটন, মন্টিলোকাস্ট, ন্যাপ্রোক্সিন, অফলোক্সাসিন, প্যান্টোনিক্স, স্যালবোটল, রাবিপ্রাজল, সিরাপ এ্যামব্রোক্স বি-কমপ্লেক্স, সেফুরএক্সিম, ডমপেরিডন, লবুপ্রোফেন, ড্রপ সিপ্রোসিন, কেমিক্যাল রি এজেন্ট, সার্জিক্যাল গজ, ব্যান্ডেজ, ক্যাথেটার, মাইক্রোপর, জিপসোনা, সফ্টরোল, ক্রেপ ব্যান্ডেজ রোল, সার্জিক্যাল গ্লোভস, সোফরাটোলা, বালিশ, বালিশের কভার, মশারি নেট, লংক্লথ, টেট্রন ক্লথ, এ্যাডোমিনালসিট শেষ হয়ে গেছে। কেননা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দরপত্রের মাল দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা হচ্ছে। তাই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দরপত্রের অনুমোদন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হওয়াই সঙ্কটের কারণ। এদিকে, দরপত্রের অনুমোদন না হওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমএসআরের ৬ গ্রুপের দরপত্র আহ্বান করে। ২৮ নবেম্বর দরপত্র জমা দেয়ার শেষদিন ছিল। মাল সরবরাহের গ্রুপগুলো হলো ক গ্রুপ ওষুধপথ্য, খ গ্রুপ- গজ- ব্যান্ডেজ ও তুলা, গ গ্রুপ- লিলেন সামগ্রী, ঘ গ্রুপ- সার্জিক্যাল ও যন্ত্রপাতি, ঙ গ্রুপ কেমিক্যাল রি এজেন্ট, ও চ গ্রুপ- আসবাবপত্র ও কিচেন সামগ্রী। যার মূল্য ছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা। ৩১ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৫২ টি সিডিউল কিনেছিল। কিন্তু দরপত্রের দিন সন্ত্রাসীদের বাধার কারণে অনেক ঠিকাদার দরপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হন বলে দাবি করা হয়েছিল। দরপত্রে বাধা দেয়া ও অনিয়মের দাবিতে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মামুন এন্টারপ্রাইজ, আতিকুর রহমান এন্টারপ্রাইজ ও মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তারা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৬ গ্রুপের কাজের জমাকৃত দরপত্র বাতিল পূর্বক পুনরায় দরপত্র আহ্বানের দাবি জানান। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ রওশন আনোয়ারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দু’জন হলেন খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক ডাঃ রেজা সেকেন্দার ও হিসাবরক্ষক সফররাজ খান। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটির সদস্যরা সরেজমিন তদন্ত কার্যক্রম করেন। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিলেও দরপত্র নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাননি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। হাসপাতালের স্টোর কীপার রতন কুমার সরকার জানান, পুরনো অর্থবছরের ওষুধ সামগ্রী দিয়ে কোন রকমে হাসপাতাল পরিচালনা হচ্ছে। যেসব ওষুধ স্টোরে আছে তা আগামী জুন মাসের প্রথম দিকে শেষ হয়ে যাবে। দরপত্রের জটিলতা নিরসন না হলে সরকারী এই হাসপাতাল ওষুধসামগ্রীতে ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়বে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশ মোতাবেক অবৈধ কর্মকর্তার আহ্বান করা দরপত্রটি এ্যাকটিভ করা যাবে না। এদিকে সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ফের দরপত্র আহ্বানেরও সুযোগ নেই। তাই বিকল্প পন্থা অবলম্বন করার জন্য গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের (অর্থ) কাছে লিখিত পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। এখনও কোন নির্দেশনা হাতে পাননি।
×