ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মাদক দাও’ নইলে রেললাইনে মাথা দেব

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৫ মে ২০১৮

‘মাদক দাও’ নইলে রেললাইনে মাথা দেব

সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী, ২৪ মে ॥ মাদক দাও, নইলে রেললাইনে মাথা দেব। মাদকাসক্ত যুবকের এমন হুমকিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তার পরিবার। বুধবার রাতে শহরের পৌর ১০ নং ওয়ার্ডের কাজীপাড়া মহল্লার সকিনাপাড়ায় ঘটনাটি ঘটেছে। সূত্র মতে, তিন সন্তানের জনক রিক্সাচালক সাজিদ (২৯) ওই এলাকার ওমর আলীর (৭০) জামাতা। বাবা-মা না থাকায় বিয়ের পর থেকেই তিনি শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করে আসছেন। তবে রোজগারের টাকা মাদকের পেছনে ব্যয় করায় ৫ সদস্য ও সংসারে চরম অভাব দেখা দেয়। উপায় না পেয়ে তার স্ত্রী রুবিয়া (২৯) ভিক্ষা বৃত্তি পেশায় নেমে পড়েন। নেশায় অবসাদগ্রস্ত শরীর নিয়ে নিয়মিত রিক্সা চালাত না। এতে স্ত্রীর ভিক্ষাবৃত্তির টাকাও জোর করে নিত। পরিবারের সন্তানসহ প্রায় দিনই কাটত অনাহারে। জামাইয়ের আসক্তি অবস্থা বৃদ্ধ ওমর আলী হতাশ। কেউ তাকে ফেরাতে পারছে না। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে নেশার জগতে নিজেকে হারিয়ে প্রায় উম্মাদ বনে গেছে এ যুবক। তাই প্রতিদিন তার নেশা চাই। তবে সম্প্রতি এ জনপদে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতিতে মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যাপক গ্রেফতার ও ২১ মে রাতে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক বিক্রেতা নিহতের পর এ উপজেলার সকল মাদক বিক্রেতারা গা-ঢাকা দেয়। এতে নেশাদ্রব্য না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়েছে সাজিদ। বুধবার রাত সাড়ে ১০ টায় সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাদকাসক্ত সাজিদ মাদক না পেয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেন না। বাড়ির পাশের রেললাইনে বারবার আত্মহননের জন্য যায়। প্রতিবেশীরা দেখে বারবার ফিরিয়ে আনে। বাড়িতে আটকে রাখে। সাজিদ জানায়, সে উত্তরা আবাসন থেকে মাদক সংগ্রহ করে নিয়মিত সেবন করত। তবে এখন শহরের কোথাও কোন বিক্রেতা নেই। তাই এ অবস্থা হয়েছে তার। শুধু সাজিদ নয় পুলিশের এ মাদকবিরোধী অভিযানে আতঙ্কে কয়েক হাজার মাদকাসক্ত অনেকটা আত্মগোপন করেছে। ঘর থেকে বের হচ্ছে না। পাশাপাশি শহর, উপশহর কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রেতারা নেই। এতে মাদকের অভাবে তাই চরম শারীরিক কষ্টে পড়েছেন তারা। শহিদুল (৫৫) নামে এক মাদকসেবী জানান, দীর্ঘ ২০ বছর থেকে নিয়মিত গাঁজা খাইতাম। এখন পাচ্ছিনা। এতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। নান্টু (২৪) নামে এক কলেজছাত্র জানায়, নেশার উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের অভিযানের ভয়ে আড়ালে কোথাও অবস্থান করা যাচ্ছে না। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। তবে মাদকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি পুলিশের এমন তৎপরতা অব্যাহত থাকলে মাদকসেবীরা এ পথ ছেড়ে আলোর পথে আসতে বাধ্য হবে। তাই সুস্থদের সঙ্গে মাদকাসক্তরাও এমন মন্তব্য করেন। র‌্যাবের সোর্স থেকে কোটিপতি নিজস্ব সংবাদদাতা কেরানীগঞ্জ থেকে জানান, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। অভাব অনটন আর পারিবারিক অশান্তির কারণে এক সময় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সে। ভবঘুরে হয়ে রাস্তাঘাটে দিন যাপন করতে থাকেন। এরই মধ্যে র‌্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন। সোর্স হিসেবে কাজ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা কেনাবেচার সঙ্গে। ১০ বছরের ব্যবধানে ইয়াবা বিক্রির টাকায় গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালান্স, একাধিক বাড়ি। রয়েছে ৩টি টাইলসের দোকান। চলাফেরা করেন এলিয়েন গাড়িতে। শীর্ষ এ ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম মোঃ ইয়ামিন (৩৫)। বাবার নাম মৃত আবুল খায়ের। গ্রামের বাড়ির কুমিল্লায়। তবে বেড়ে উঠেেেছন কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন থানায় ইয়ামিনের বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতির একাধিক (৮/১০টি) মামলা রয়েছে। একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের আগস্টে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার ইয়াবাসহ ইয়ামিন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু পরে জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। মাদক ব্যবসার সুবিধার্থে ভাই আলামিন ও বোন সোনিয়াকেও ইয়াবা বিক্রিতে সম্পৃক্ত করে ইয়ামিন। গত বছরের ৩ মার্চ পুরান ঢাকার ইসলামপুর থেকে ৮ হাজার ইয়াবাসহ আলামিনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। বর্তমানে আলামিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছে। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারের ভেতরে মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করেন আলামিন। আর বাইরে থেকে কারাগারে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইয়াবা সরবরাহ করেন ইয়ামিন ও সোনিয়া। রাবি ক্যাম্পাসে মাদকের আড্ডা রাবি সংবাদদাতা জানান, গত ১৬ মে থেকে রমজান, গ্রীষ্মকালীন ও ঈদ -উল ফিতরের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ৩৯ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাস ছুটি হলেও এখনও টিউশন ও পরীক্ষার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ এই ছুটিকে ঘিরে ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিয়েছে। ফাঁকা ক্যাম্পাসে মাদকসেবীরা আখড়া গড়ছে, সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছিনতাই চক্র। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, ছুটিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সন্ধ্যা নামলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল। শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান মাঠ, মাদার বখস হলের পুকুর পাড়, শেখ রাসেল চত্বর, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের মাঝের পুকুর পাড়, জুবেরী মাঠ, চারুকলা প্রাঙ্গণ, বধ্যভূমি এলাকা মাদক সেবনের কেন্দ্রস্থল। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এসব জায়গায় মাদকের আড্ডা বসে। এদিকে ফাঁকা ক্যাম্পাসে ছিনতাই, এমনকি ছাত্রী উত্যক্তের মতো ঘটনাও বাড়ছে। গত ১৭ মে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে হলে ফেরার পথে প্যারিস রোডে আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীর ব্যাগ ছিনতাই চেষ্টা করে মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন দুর্বৃত্ত। ছিনতাইয়ে বাধা দিলে একপর্যায়ে তার হাতে ছুরি মেরে পালিয়ে যায় তারা। আমতলীতে হাত বাড়ালেই মাদক নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী বরগুনা থেকে জানান, হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মরণ নেশা মাদক। মাদকের কালো থাবায় ভাসছে আমতলী ও তালতলী উপজেলা যুব সমাজ। দুই উপজেলার মাদকের স্পট রয়েছে শতাধিকের ওপরে। এর মধ্যে আমতলী পৌর শহরে ২০ টি এবং উপজেলাগুলোর বিভিন্ন বাজারে ৮০টির বেশি স্পট রয়েছে। ফাতরার বন ও রাখাইন পল্লীকে ঘিরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মাদকের নিরাপদ ট্রানজিট। এখানে শতাধিক মাদক বিক্রেতা রয়েছে। অল্প দিনে বিত্তবান হওয়ায় আশায় অনেক শিক্ষিত তরুণ ও নারীরা এ পেশায় ঝুঁকছে। মরণ নেশা গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের নেশায় সয়লাব আমতলী ও তালতলী উপজেলা। এসব মাদকের বিষাক্ত ছোবলে হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ ও বয়স্কদের জীবন বিপন্ন। মাদকের টাকার সংগ্রহে যুব সমাজ জড়িয়ে পড়েছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। পুলিশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তা পারছে না। জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের পোস্ট অফিস রোড, ফেরিঘাট, বাঁধঘাট চৌরাস্তায়, ছুরিকাটা, বটতলা, খোন্তাকাটা, একে স্কুল, ওয়াপদা, মিঠা বাজার, পুরাতন লঞ্চঘাট, নতুন লঞ্চঘাট, সবুজবাগ এলাকা, আমতলী সরকারী কলেজ এলাকা, গরুর বাজার, মানিকঝুড়ি, ফকিরহাট, খলিয়ান, বান্দ্রা, পুজাখোলা, কল্যাণপুর, বিশ্বাসের হাট, মুন্সির হাট, টেপুড়া, অফিস বাজার, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া, তালুকদার বাজার, চালিতাবুনিয়া, রাওঘা, গাজীপুর বন্দর, কুকুয়া হাট, আমড়াগাছিয়া, সাহেব বাড়ী, আজিমপুর, মহিষকাটা, গোজখালী, চাউলা বাজার, শাখারিয়া, কলাগাছিয়া, গুলিশাখালী বাজার, খেকুয়ানী, আড়পাঙ্গাশিয়া, ঘোপখালী, সোমবাড়িয়া বাজার, পচাকোড়ালিয়া, কচুপাত্রা, ছোটবগী বাজার, গাবতলী, চরপাড়া, তালতলী বাজার, নয়া ভাইজোড়া, হরিণবাড়িয়া, কড়াইবাড়িয়া, ঝাড়াখালী, চাউলাপাড়া, আঙ্গারপাড়া, তালুকদারপাড়া, আগাঠাকুরপাড়া, লাউপাড়া, ছাতনপাড়া, নিউপাড়া, শানুর বাজার, বেহেলা, ফকির হাট, তেতুলবাড়িয়া, ও জয়ালভাঙ্গাসহ শতাধিক স্থানে হাত বাড়ালে মিলে মাদক। আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমতলী থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স।
×