ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার পরিকল্পনার টার্গেট অর্জনে বড় চ্যালেঞ্জ বাল্যবিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৫ মে ২০১৮

পরিবার পরিকল্পনার টার্গেট অর্জনে বড় চ্যালেঞ্জ বাল্যবিয়ে

নিখিল মানখিন ॥ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বেড়েছে। কিন্তু পদ্ধতি ব্যবহারকারীর ড্রপআউটের উচ্চ হার এবং বাল্যবিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ড্রপআউটের হার এখনও ৩৫.৭ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়। আর বিবাহিতদের মধ্যে কিশোরী অবস্থাতেই গর্ভধারণ করেন শতকরা ৬৪ দশমিক ৩ ভাগ। গত কয়েক বছরে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের হার মাত্র ১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে প্রজনন হার প্রায় একই আছে। প্রজনন হার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার ২ দশমিক ৭। বর্তমানে প্রজননক্ষম সকল দম্পতি পরিবার পরিকল্পনার কোন না কোন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। কিন্তু পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার সন্তোষজনক হারে বাড়েনি। ১১.৭ শতাংশ দম্পতির মধ্যে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অসচেতনতার অভাবে অনেক দম্পতির বেশি সংখ্যক সন্তান নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। কিশোরী অবস্থায় সন্তান ধারণের জন্য দারিদ্র্য ও অশিক্ষাও এর পেছনে ভূমিকা রাখছে। মাঠকর্মীরা এখন আর বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন করেন না। পরিবার পরিকলল্পনা অধিদফতর জানায়, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সফল করে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে। আরও জোরালো করতে হবে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অস্বাভাবিক হার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচী বেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রতি বছর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতা শতকরা গড়ে ১ দশমিক ৫ ভাগ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার শতকরা ৫৫ দশমিক ৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। প্রজনন হার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার কমে বর্তমানে ২ দশমিক ৭ ভাগে নেমেছে। বর্তমানে প্রজননক্ষম সকল দম্পতি পরিবার পরিকল্পনার কোন না কোন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ১৯৭৫ সালের ৭.৭ শতাংশ থেকে ২০১০ সালে ৬১.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার সন্তোষজনক হারে বাড়েনি। ১৭.৬ শতাংশ দম্পতির মধ্যে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অপূর্ণ চাহিদার ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলাদের মধ্যেই অপূর্ণ চাহিদার হার সবচেয়ে বেশি। এ হার ১৯.৮ শতাংশ। এ বয়সীদের মধ্যে মাত্র ৩৭.৬ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়। আর বিবাহিতদের মধ্যে কিশোরী অবস্থাতেই গর্ভধারণ করেন শতকরা ৬৪ দশমিক ৩ ভাগ। এই হিসেবে দেশের ১ কোটি ৬০ লাখ কিশোরী প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেয়। শহরের তুলনায় গ্রামে কিশোরী অবস্থায় মা হওয়ার প্রবণতা বেশি। রাজশাহী বিভাগে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি শতকরা ৩২ দশমিক ৮ ভাগ এবং সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯ দশমিক ৭ ভাগ। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১ কোটি ৬০ লাখ কিশোরী প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেয়, যাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনেরই ইতোমধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের জনসংখ্যার শতকরা ২৩ ভাগই ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরী। যাদের মধ্যে আবার ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে হয় ৬৬ শতাংশের। এসব কিশোরীর আবার এক-তৃতীয়াংশ এবং ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সে তিন-চতুর্থাংশ কিশোরী সন্তান ধারণ করে। স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণের হারও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। শতকরা ৫ দশমিক ৭ ভাগ স্থায়ী এবং ৮ দশমিক ৬ ভাগ দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন।
×