ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তা এজেন্ডা নেই ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৫ মে ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তা এজেন্ডা নেই ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে দেশের মানুষের বহু প্রতিক্ষিত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কোন এজেন্ডা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিগত আট বছরে শেখ হাসিনা ভারত থেকে এক বালতি পানিও আনতে পারেননি। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একতরফাভাবে ভারতকে সবকিছু দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য পানির হিস্যা বুঝে পাচ্ছে না। তিনি বলেন, শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ভারত সফরে যাবেন। সেখানে তিনি একটি ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন ও একটি ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ করবেন বলেও গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে। কিন্তু তাঁর এবারের সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কোন এজেন্ডা নেই। রিজভী বলেন, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে কোন তথ্য জানাতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিগত আট বছর ধরে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে আসছে যে, তারা ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বছর যায় বছর আসে আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতকে সব কিছু উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছেন, বিনিময়ে কিছুই পাননি। রিজভী বলেন, মানুষ হত্যা করে কোন দিন মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এর পেছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি মাদক নির্মূল সরকারের উদ্দেশ্য নয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দল নিধনের জন্যই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে দেশজুড়ে বিচারবহির্ভূত মানুষ খুনের ধুমধাম চলছে। বেআইনী হত্যার মাধ্যমে দেশবাসীকে আতঙ্কিত করার ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে তা হলো একটি রক্তাক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়া যাতে তারা সরকারের অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহসী না হয়। রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাদক নির্মূল অভিযান চালিয়ে মানুষ হত্যা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করারই নীল নক্সা। মূলত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ অনিশ্চিত করে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার জন্যই দেশের জনপদ রক্তাক্ত করা হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যদি মাঠ সমতলের বদলে রক্তাক্ত হতে থাকে তাহলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে সাহসী হবে না। এটাই বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য। বিএনপির মুখপাত্র রিজভী বলেন, মাদকের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক এটা সবাই চায়, কিন্তু বিচারবর্হির্ভূতভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা নয়। তিনি বলেন, প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরা হচ্ছে না। বুধবারও সরকারের শরিক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদ বলেছেন, ‘মাদক সম্রাটরা সংসদেই আছে তাদের ধরে বিচার করুন।’ গণমাধ্যমেও মাদকের গডফাদারদের তালিকা প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু তাদের ধরা হচ্ছে না। রিজভী অভিযোগ করেন জগন্নাথ বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সজলকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। বুধবার রাতেও মাদক নির্মূলের নামে বিচারবহির্ভূতভাবে ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমগুলো, সোশ্যাল মিডিয়াসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বেআইনী মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনা করলেও এখনও থামছে না বিচারবহির্ভূত হত্যা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মাদক ব্যবসার চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়ঙ্কর অপরাধ। রিজভী বলেন, পুরনো কায়দায় বিরোধীদল নিধনের হাতিয়ার হিসেবে সজলকে তুলে নেয়া হয়েছে। কারণ সজল বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলনের একজন তরুণ নেতা, রাজপথের সাহসী সৈনিক। তিনি বলেন, বেছে বেছে বিরোধীদলের তরুণ নেতাকর্মীদের যেভাবে তুলে নেয়া, গ্রেফতার, গুম ও বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে তারই ধারাবাহিক শিকার হয়েছে মেধাবী ছাত্র নেতা সজল। এখনও সজলের খোঁজ পাওয়া না যাওয়ায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন তিনি বলেন, সজল নিখোঁজের ঘটনা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরুসহ দেশব্যাপী অসংখ্য গুমেরই নতুন চিত্র। একের পর এক মর্মস্পর্শী, অবিশ্বাস্য ও জীবন প্রবাহ রুদ্ধ করে দেয়ার মতই এসব ঘটনা। রিজভী বলেন, সজলকে গুম করা সরকারের একটি সিগন্যাল। এ ঘটনায় সামনে এক ভয়ঙ্কও নৈরাজ্যের আভাসই ফুটে উঠেছে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে নিখোঁজ ছাত্রনেতা ফয়সাল আহমেদ সজলের সন্ধান দাবি করছি। অবিলম্বে তাকে জনসম্মুখে উপস্থিত করাসহ তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ।
×