ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বাংলা একাডেমিতে ‘নজরুল চিরবিদ্রোহী’- একক বক্তৃতা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৫ মে ২০১৮

বাংলা একাডেমিতে ‘নজরুল চিরবিদ্রোহী’- একক বক্তৃতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক বাঁধভাঙ্গা প্রতিভা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী আজ শুক্রবার। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বৃহস্পতিবার সকালে। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘নজরুল: চিরবিদ্রোহী’ শীর্ষক একক বক্তৃতা দেন মোরশেদ শফিউল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম এবং নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী লীনা তাপসী খান। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব ও ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। লিখিত প্রবন্ধ থেকে মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, নজরুল শুধু গান লেখেনইনি, নিজের ও অন্যদের লেখা গান সুর করেছেন। নিজ হাতে অনেক গানের স্বরলিপিও করেছেন। প্রশিক্ষক হিসেবে শিল্পীদের গানও শিখিয়েছেন। আবার তাঁর তত্ত্বাবধানেই রেকর্ড হয়েছে অনেক গান। বাংলা গানে তাঁর মতো এত সুর বৈচিত্র্যের পরিচয় তাঁর আগে বা পরে আর কেউ দিতে পারেনি। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে নজরুল বিদ্রোহী ছিলেন। তাঁর বিয়ে, পুত্রদের নামকরণ, পারিবারিক আচারপ্রথা সব কিছুর মধ্যে একটা দ্রোহ বা সমাজসংস্কারকে অগ্রাহ্য করার বিষয়ে লক্ষ্য করা যায়। প্রমীলাকে বিয়ে করে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের চক্ষুশূল হয়েছিলেন তিনি। তবে সঙ্গীতে নজরুলের অবদান অনেক। তিনি মঞ্চ ও চলচ্চিত্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। নাটক ও চলচ্চিত্রের জন্য গান লিখেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র ‘গোরা’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। মানুষই ছিল নজরুলের মর্মকথা। তার জীবন বিদ্রোহের আভায় ¯œাত, বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য। কবিতায় তিনি নতুন স্বরের উদ্গাতা, গদ্যে মননের সাধক, সঙ্গীতে ধ্রুপদী ও লোকধারার স্বার্থক সেতুবন্ধকারী, বেতার ও চলচ্চিত্রের জগতে স্বচ্ছন্দ্যবিহারী। ব্যক্তিত্বের অনমনীয় দৃঢ়তায় তিনি যেমন সাম্রাজ্যবাদ ও অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন ঠিক তেমনি সমকালীন সমাজের হিন্দু ও মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিজের জীবন ও সাহিত্য দিয়ে বিদ্রোহ করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার মতো অসাম্প্রদায়িক মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। আবার সাহিত্যে ও সঙ্গীতে প্রগতির কণ্ঠে তিনি স্বসম্প্রদায়ের মুসলমানদের জাগিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, নজরুলের জীবনকথা লিখতে গিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তির জালে আবদ্ধ করেছেন আমাদের। তাই এখন প্রয়োজন নজরুলকে তার প্রকৃত স্বরূপে আবিষ্কার ও চর্চা। সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম বলেন, শুধু ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি লেখার কারণে নজরুলকে বিদ্রোহী বলা হয় তা নয়। নজরুলের জীবন এক বিদ্রোহ, এক বিস্ময়। তাঁর মূল বিদ্রোহ ছিল অসাম্য, অন্যায়, কুসংস্কার ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে। মানুষের সামাজিক চেতনায়ও তিনি আঘাত করেছেন। মাত্র বিশ বছরের সাহিত্যিক জীবনে তিনি দুই হাতে লিখেছেন। লেখনীর যে ধারায় হাত দিয়েছেন, অনিন্দ্য সুন্দর ফুল ফুটিয়েছেন। ধরাবাঁধা জীবন ও সাহিত্যধারার বিপরীতে তিনি প্রাণের উদ্দাম আবেগে সামনে এগিয়ে চলেছেন, একই সঙ্গে আমাদেরও দিয়েছেন সামনে চলার দিশা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী লীনা তাপসী খান। তিনি গেয়ে শোনান ‘যাও মেঘদূত দিও প্রিয়ার হাতে’ ও ‘কালেমা শাহাদাতে আছে খোদার গতি’ গান দুটি। আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কবির সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
×