ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিকরাই ট্রাফিক আইন বেশি লঙ্ঘন করছে ॥ সেতুমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৫ মে ২০১৮

রাজনীতিকরাই ট্রাফিক আইন বেশি লঙ্ঘন করছে ॥ সেতুমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মাদক কারবারিরা অস্ত্র নিয়ে মোকাবেলা করছে বলেই ‘এনকাউন্টার’ হচ্ছে এবং একে বিচারবহির্ভূত হত্যা বলা যায় না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এখানে এক পক্ষের হাতে অস্ত্র নেই। অস্ত্র আছে দুইপক্ষের হাতেই। যাদেরকে ধরতে যাচ্ছে, তারাও কিন্তু অস্ত্র নিয়ে মোকাবেলা করছে। তাহলে পুলিশ কি ওখানে জুঁই ফুলের গান গাইবে? তারা এটার কাউন্টার করবে না? আর কক্সবাজারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে মাদক পাচারের অভিযোগে ধরতে হলে তার আগে ‘প্রমাণ লাগবে’ বলে মন্তব্য করেছেন কাদের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে মাদক নির্মূলে যে অভিযান শুরু করেছে, তাতে প্রতি রাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছে বহু মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু যেভাবে তাদের দমন করার চেষ্টা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। আর জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম এরশাদ সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, মাদক স¤্রাট তো সংসদেই আছে। তাদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝোলান। সরকার নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করছে- বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে কাদের উত্তরে জানান, তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করেন না, কিন্তু সেটা ভিন্ন বিষয়। মাদক যারা ব্যবসা করে এদের একটা সিন্ডিকেট আছে, এদের সন্ত্রাসী আছে, এদের সঙ্গে অস্ত্রধারী আছে। যখন পুলিশ তাদের ধরতে যায়, তখন অস্ত্র নিয়ে মোকাবেলা করে, এনকাউন্টার হয়। এনকাউন্টারকে তো এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলা যাবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের গত সাড়ে নয় বছরের মেয়াদে কোন দল তাদের রাজনৈতিক সভায় মাদকের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি। একটি শব্দও আপনারা উচ্চারণ করেননি। কাজেই এই বিষয়ে কথা বলার কোন অধিকার আপনাদের নেই। কাদের বলেন, সবাই মিলে সোচ্চার হলে মাদকের বিস্তার এই ভয়ঙ্কর অবস্থায় আসতে পারত না। আজকে পুলিশকে মোকাবেলা করতে হতো না। আজকে অভিযান কেন হচ্ছে? জনস্বার্থে করা হচ্ছে একটা ভয়ঙ্কর অবস্থার অবসানের জন্য। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, দেশের মানুষ এই অভিযানে খুশি। আর সেজন্যই বিএনপির ‘গাত্রদাহ’ শুরু হয়েছে। এটা নিয়ে বিএনপি এত চিৎকার করছে কেন? তাদেরও বহু লোক জড়িত, তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। বিভিন্ন মহল থেকে আওয়ামী লীগের এমপি আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মাদক পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ আসার পরও কেন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রমাণ করতে হবে, প্রমাণ ছাড়া তো কাউকে ধরা যায় না, একজন এমপিকে চট করে ধরা যায় না। প্রমাণ হলে সে যদি অপরাধী হয় অবশ্যই তার শাস্তি হবে। কেবল বদি নয়, মাদকের সঙ্গে সরকারের আরও কোন প্রভাবশালী যদি জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে মন্তব্য করে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ, মাদক ব্যবসার সঙ্গে, ড্রাগ ডিলিংয়ের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, যত প্রভাবশালীই হোক, তাদের অবশ্যই এ অভিযানের আওতায় আনতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, বৃহস্পতিবারের অভিযানে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কারণে মোট ১ হাজার ২১৭ মামলা হয়েছে। মোট ৩১ লাখ ৫৪ হাজার আট শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহনের কাছ থেকে। তিনি জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে; আর ২৩ গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠিয়ে ৫২ জব্দ করা হয়েছে। হেলমেট পরেননি কেন ॥ মানিকমিয়া এভিনিউতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় সড়ক মন্ত্রী হঠাৎ হাঁক ছেড়ে ডাকলেন এক মোটরসাইকেল চালককে। বললেন, ‘এই হুজুর আপনাকে তো দেখে ঈমান আমনেওয়ালা মনে হচ্ছে। মাথায় টুপিও দেখছি, কিন্তু আপনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন...মাথায় হেলমেট পরেননি কেন? রাস্তায় হঠাৎ মন্ত্রীর প্রশ্নে যেন দিশেহারা মধ্যবয়সী মোটরসাইকেল চালক। উত্তরে বলেন, ‘স্যার হেলমেট আছে তো!’ এমন উত্তরে হেসে ফেলেন মন্ত্রী। বলেন, আপনি মরলে আমার কী হবে! ক্ষতি যা হবার তো আপনার পরিবারের। হেলমেট আছে কিন্তু মাথায় দেবেন না এটা ঠিক নয়। মাথায় দিন। নিরাপদে চলাচল করুন। এভাবেই মানিক মিয়া এভিনিউতে হেলমেটবিহীন চালকদের আটকে প্রশ্ন করেন ও বিআরটিএ কর্তৃক সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অভিযানকালে মন্ত্রী একাধিক কাভার্ডভ্যান, পিকঅ্যাপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, বাস ও মোটরসাইকেল আরোহীদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন। অভিযানকালে আরেক মোটরসাইকেল আটকানোর পর দেখেন দুই আরোহীর কারও মাথায় হেলমেট নেই। জিজ্ঞেস করলে জানতে পারেন রাজনৈতিক কর্মীর পরিচয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, রমজানে মানুষ যাতে আইন মানে সেজন্য অভিযান চলছে। অভিযানে নেমে দেখছি, নিয়ম লঙ্ঘন করা বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাই বেশি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছে। মোটরসাইকেল এখন সারাদেশে মূর্তিমান আতঙ্ক উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ দুজন উঠতে পারার নিয়ম। দ্বিতীয়জনকেও হেলমেট পড়ার নিয়ম। কিন্তু অভিযানে দেখছি, কোন কোন চালকের হেলমেট থাকলেও দ্বিতীয় যাত্রীর হেলমেট নেই। মোটরসাইকেলে তৃতীয় যাত্রী ওঠার কোন সুযোগই নেই আইনে। অথচ সেটাও দেখতে হচ্ছে রাস্তায় এসে। আর এসব করছে বেশি রাজনৈতিক কর্মীরা। দুঃখের বিষয় সাধারণ মানুষ কিন্তু ট্রাফিক আইন মোটামুটি মেনে চলে। কিন্তু যখনই ধরি, তিনজন উঠছে, কারাও হেলমেট নেই, শুনি পলিটিক্যাল। তারা রাজনৈতিক কর্মী। অথচ সাধারণ মানুষ এই ধৃষ্টতা কমই দেখান। আইনের প্রতি অন্তত ভয়ে শ্রদ্ধা দেখান। ওবায়দুল কাদের বলেন, আসল বিষয় হচ্ছে, মন-মানসিকতার পরিবর্তন না হলে, ডিসিপ্লিন্ড, আচরণ বিধি লঙ্ঘন, আইন-ভঙ্গ, নিয়ম না মানা, এসব বিষয় বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিআরটিএ অভিযান চালাচ্ছে।
×