ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফ্যাশন হাউসগুলো সেজেছে বর্ণিল সাজে;###;ঈদের কেনাকাটা

সিটি প্লাজা, উর্দু রোড ও ইসলামপুরে পাইকারি মার্কেট জমজমাট

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৫ মে ২০১৮

সিটি প্লাজা, উর্দু রোড ও ইসলামপুরে পাইকারি মার্কেট জমজমাট

রহিম শেখ ॥ জমে উঠতে শুরু করেছে ঈদের বেচাকেনা। শতভাগ প্রস্তুত রাজধানীর ছোট-বড় বিপণিবিতান, মার্কেট ও ফুটপাথগুলো। পোশাক আমদানিকারক থেকে শুরু করে উৎপাদক ও বড় বড় শপিংমলগুলোতে জমজমাট বাণিজ্যের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে খুচরা বাজারে ক্রেতার তুলনায় বিক্রি না বাড়লেও এখনও আলোচনায় পাইকারি মার্কেটগুলো। এসব মার্কেটে এখন তুমুল কেনাকাটা চলছে। একই সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে পছন্দসই জুতা, জামা-কাপড় ও কসমেটিকস, ইমিটেশন গহনা নিজেদের গোডাউনে মজুদ করেছেন আমদানিকারকরা। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশী পোশাক উৎপাদকরাও। ইতোমধ্যে দেশী ফ্যাশন হাউসগুলোও সেজেছে বর্ণিল সাজে। তবে অনেকে আবার ভারত থেকে পোশাক কিনে এনে হুবহু নকল করেস তৈরি করছেন বাড়তি লাভের আশায়। জানা গেছে, রমজান শুরু হলেও ব্যস্ত সময় পার করছেন কেরানীগঞ্জ, সিদ্দিকবাজার, পুরান ঢাকা ও সদরঘাটের পোশাক শ্রমিকরা। অনেক বিপণিবিতান ও সুপার শপে আবার ঈদ উপলক্ষে কর্মচারীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাড়তি চাহিদা সামলাতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খুচরা বিক্রেতারা প্রতিদিনই ভিড় করছেন পাইকারি মার্কেটগুলোতে। সরেজমিন পোশাকের পাইকারি বাজার সদরঘাটের শরীফ মার্কেট, বঙ্গবাজারের সিটি প্লাজা, উর্দুরোড ও ইসলামপুর ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে দোকানে পোশাকের স্তূপ। এসব দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাধারণত এসব মার্কেটে দেশে উৎপাদিত পাঞ্জাবি, শার্ট, পোলো শার্ট পাওয়া যায়। এসব পোশাকের অধিকাংশই নামীদামী ব্রান্ডের অবিকল নকল। পার্শ্ববর্তী এলাকার পোশাক কারখানা থেকে এসব পোশাক সাপ্লাই দেয়া হয় মার্কেটগুলোতে। আবার কয়েক পোশাক মালিক নিজেদের আইডিয়া দিয়ে নিজস্ব ডিজাইনের পোশাক তৈরি করে বিক্রি করেন নিজস্ব ক্রেতার কাছে। এসব পোশাকের দামও মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখে নির্ধারণ করা হয়। তবে এসব পোশাকের ডিজাইনেও আছে বৈচিত্র্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পোশাক কিনতে প্রতিদিনই আসছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পরে বড় প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে একসঙ্গে বেঁধে বাসের ছাদে, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, লঞ্চ কিংবা ঠেলাগাড়ি করে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার কুমিল্লার ব্যবসায়ী সেরাজুল ইসলাম দোকানের কর্মচারীদের নিয়ে কাপড় কিনতে এসেছিলেন ইসলামপুরে। তিনি জানালেন, মূলত দেশী পোশাকই তিনি এখান থেকে কিনে থাকেন। ইন্ডিয়ান পোশাকের জন্য আলাদা সাপ্লাইয়ার রয়েছে। এবার বাচ্চাদের ও নারীদের পোশাকে বৈচিত্র্য এসেছে বেশ। তাই শেষ মুহূর্তের পোশাক কিনতে এখানে আসা। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড়ের পাইকারি বাজার ছিল ইসলামপুরে। এখন আর সে রকম নেই, চিত্র পাল্টে গেছে। ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসার বড় অংশই এখন দেশী কাপড়ের দখলে। সারাদেশের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের পদভারে মুখরিত হয়ে পাঞ্জাবির বৃহত্তম পাইকারি বাজার পুরনো ঢাকার শরীফ মার্কেট। সারাদেশে একযোগে পাঞ্জাবি সরবরাহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার বিক্রেতারা। তারা জানিয়েছেন, দেশের মোট পাঞ্জাবির চাহিদার ৮০ শতাংশই সরবরাহ করে থাকে শরীফ মার্কেট। সেখান থেকে নগরীসহ সারাদেশে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। বঙ্গবাজারের সিটি প্লাজার পাইকারি পোলো শার্ট, পাঞ্জাবির দোকান শিরোনামহীনের স্বত্বাধিকারী জহিরুল ইসলাম রুমান জানান, এবার ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি বানানো হয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাঠপর্যায়ের ক্রেতার পছন্দ ও আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ম্যাগাজিন দেখে পোশাকের ডিজাইন করা হয়েছে। ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ টাকার ৬৫০ মধ্যে পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। পাঞ্জাবির কাপড়েও বৈচিত্র্য রয়েছে। সব শ্রেণীর ক্রেতাকে টার্গেট করেই পাঞ্জাবির ডিজাইন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, শব-ই-বরাতের পর থেকেই প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা আসছেন। খুচরা বিক্রেতারা কয়েক দফা পোশাক কিনে নিয়ে গেছেন। তবে রাজধানীর পীর ইয়ামেনী মার্কেট, পলওয়েল সুপার মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাস ও ইস্টার্ন প্লাজা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। মার্কেটগুলো এখনও জমে উঠেনি। তবে দোকানদাররা ঈদের প্রস্তুতি নিতে পোশাকের মজুদ শুরু করেছেন। এসব মার্কেটের দোকান মালিকদের মতে, ক্রেতার সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় বিক্রি বাড়েনি। কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশাবাদী এসব দোকানের বিক্রেতারা। এখন শুধু দোকান মালিকদের মাঝে সাশ্রয়ী মূল্যে কে কত বেশিসংখ্যক ডিজাইনের পোশাক তুলতে পারেন তার প্রতিযোগিতা চলছে। পলওয়েল সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম বলেন, এখানকার দোকান মালিকরা ঈদ উপলক্ষে চীন, থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের জামা-কাপড়, জুতা সংগ্রহ করেছেন। মোটামুটি ভাল প্রস্তুতি রয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের। উর্দুরোড অভ্যন্তরীণ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী রমজান গাজী বলেন, রেডিমেড ঈদ বস্ত্রের সরবরাহ করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এখানকার পোশাকই সারাদেশসহ রাজধানীর সব শপিংমল ও দোকানে যায়। সব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি নিয়ে গিয়ে খুচরা বিক্রি করেন। উর্দুরোডের পাইকারি ব্যবসায়ীদের প্রায় ৬০ শতাংশ বেচাবিক্রি রমজান শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে রমজানের বাকিটা সময় পাইকারি ও খুচরা বিক্রি এখানে দুটোই চলে সমান তালে। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা সিটি ঘুরে দেখা গেছে, নতুন ডিজাইনের পোশাক আর ঝলমলে সাজে সাজানো হয়েছে মার্কেটের দোকানগুলো। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে বিক্রেতারা আধুনিক সব পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন। এখানে ক্রেতাও যেমন, বিক্রিও তেমন। এখানকার বেশিরভাগ পোশাক ভারত, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে আমদানি করা নামীদামী ব্রান্ডের। দেশী ফ্যাশন হাউসগুলোও পিছিয়ে নেই। ঈদ উপযোগী নতুন সব রং ও ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছেন তারা। ফিউচার পার্কের আর্টিস্টির শোরুমে ম্যানেজার নাফিজ বলেন, এ বছর আমাদের থাকছে নতুন ডিজাইনের টি-শার্ট, পোলো শার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফরমাল শার্ট, শর্ট ও লং পাঞ্জাবি, প্যান্ট ইত্যাদি। সব শ্রেণীর ক্রেতাকে টার্গেট করে আর্টিস্টি পোশাকের ডিজাইন করেছে। নবরূপার ম্যানেজার সাদ্দাম হোসেন বলেন, এখন ক্রেতার তুলনায় বিক্রি খুব বেশি জমে উঠেনি। এ বছর নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, পাঞ্জাবি, শর্ট পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট, শিশুদের পোশাকসহ নানা উপহারসামগ্রী ও ঘর সাজানোর অনুষঙ্গ পৌঁছে গেছে।
×