ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে চরম গ্যাস সঙ্কট ॥ ভোগান্তিতে গ্রাহক

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৫ মে ২০১৮

চট্টগ্রামে চরম গ্যাস সঙ্কট ॥ ভোগান্তিতে  গ্রাহক

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম নগরীতে গ্যাস সঙ্কটে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন আবাসিক গ্রাহকরা। প্রতিদিনই দুপুরের পর থাকছে না গ্যাসের চাপ। এর ফলে রান্নার কাজ এবং রোজার ইফতার তৈরিতে কষ্টের মধ্যে পড়েছেন ভোক্তারা। একইসঙ্গে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে শিল্পক্ষেত্রে। চট্টগ্রামে চাহিদার অর্ধেক গ্যাসও সরবরাহ করতে পারছে না কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। উৎপাদন কম থাকায় এই ভোগান্তি বলে স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। আমদানি করা এলএনজি (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস) পাইপ লাইনে যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ সঙ্কট উত্তরণের সম্ভাবনাও নেই। চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪শ মিলিয়ন ঘনফুট। কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করতে পারে সর্বোচ্চ ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অর্থাৎ সরবরাহ করা গ্যাস চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এর ফলে গ্যাসের সঙ্কট আবাসিক, কমার্শিয়াল ও শিল্পক্ষেত্রে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্ট্যাগারিং চালাতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, খুলশী, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, পাথরঘাটাসহ বিরাট এলাকাজুড়ে বাসা বাড়িগুলোতে এখন গ্যাসের অভাবজনিত ভোগান্তি চলছে। গ্রাহকরা জানাচ্ছেন, দুপুরের পর থেকেই চুলা জ্বালানো যাচ্ছে না। কারণ গ্যাস নেই। এই রোজায় ইফতার সামগ্রী তৈরির জন্য বিকেলে গ্যাস থাকাটা খুবই জরুরী। কিন্তু ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে গ্যাস একেবারেই থাকে না। এরপর গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ অত্যন্ত কম, যা দিয়ে রান্নাবান্না করা খুবই কষ্টকর। কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহমেদ মজুমদার এ সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস নেই, সে কারণে সরবরাহ দিতে পারছি না। আশুগঞ্জ থেকেই সরবরাহ লাইনে এ সমস্যা। চাপ কম থাকায় গ্যাস এ পর্যন্ত আসছে না। আসলেও চাপ যা, তা দিয়ে কাজ সেভাবে চলছে না। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি পাইপ লাইনে যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সঙ্কটের সমাাধান হচ্ছে না। তবে এর জন্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ করা যাবে। তখন সঙ্কট কেটে যাবে। মহেশখালির মাতারবাড়িতে এলএনজিবাহী জাহাজ ইতোমধ্যে এসে পড়েছে। সরবরাহ লাইনও কমিশনিং করে রাখা হয়েছে। দৈনিক ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যুক্ত হবে পাইপ লাইনে। শুরুতে সর্বোচ্চ ২শ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ হবে। পরে তা ধীরে ধীরে ৫শ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হবে। কেজিডিসিএল এখন সেমুতাং ক্ষেত্র থেকে কিছু গ্যাস পাচ্ছে। এর সঙ্গে এলএনজি যুক্ত হলে সঙ্কট থাকার কথা নয়। বরং অতিরিক্ত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুত মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য এমএ লতিফ এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্যাসের অভাবে শিল্পায়ন যেমন বিঘিœত হয়েছে, তেমনিভাবে আবাসিক পর্যায়ে চলে আসছে ভোগান্তি। শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য গ্যাসের প্রয়োজন। দেশে পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় এলএনজি আমদানির দাবিও ছিল। শেখ হাসিনার সরকার তা উপলব্ধি করতে পেরে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই এলএনজি ইতোমধ্যেই এসে গেছে। এখন শুধু সরবরাহ হওয়ার অপেক্ষা। এক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা হবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাসখানের মধ্যেই গ্যাস সঙ্কট কেটে যেতে থাকবে।
×