ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সব সিটি নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন এমপিরা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৫ মে ২০১৮

সব সিটি নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন এমপিরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারছেন এমপিরা। এ বিষয়ে আচরণবিধিতে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কমিশনের সভায় এমপিদের প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে আচরণবিধি সংশোধনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি জানান সংশোধিত আচরণবিধি আগামী রবিবার ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে তফসিল ঘোষণা হওয়ায় ২৬ জুনের মধ্যে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রচার চালাতে পারবেন না তারা। এতদিন সংসদ সদস্যপদ লাভজনক বিবেচনা করে তাদের প্রচারে অংশ নিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। এখন কমিশন বলছে এমপিদের পদ লাভজনক নয়। তাই তারা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবেন। এই সংক্রান্ত সংশোধনী নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করেছে বলে জানান সচিব। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাবির পরিপেক্ষিতে গত মাসেই এমপিদের নির্বাচনে প্রচারের অংশ নেয়ার বিষয়ে আচরণবিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশেষ করে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখেই তড়িঘড়ি করে আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ১৫ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। একদিনে গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের এক রায়ে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরে আদালত এ বিষয়ে স্থগিতাদেশ উঠিয়ে নিলে ইসি আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন গাজীপর নির্বাচনের আগেই আচরণবিধি সংশোধনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে ইসি। তবে গাজীপুরে এমপিদের প্রচারের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানান ইসি সচিব। বৃহস্পতিবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে কমিশনের সভা শেষে সচিব সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ সদস্যরা কোন অফিস হোল্ড করেন না। সরকারী গাড়ি ব্যবহার করেন না। নিজের কেনা গাড়ি ব্যবহার করেন। তাদের জন্য কোন সরকারী কর্মকর্তাও যুক্ত নেই। সিটি কর্পোরেশন আচরণ বিধিমালায় বিভিন্ন ধরনের ১১টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব কমিশন করেছে বলে জানিয়ে বলেন, আগামী রবিবার তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল আগেই ঘোষিত হওয়ায় এই সংশোধনী চূড়ান্ত হয়ে ওই নির্বাচনে কার্যকর সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’ বলে মন্তব্য করেন ইসি সচিব। তিনি বলেন, ‘কোন নির্দিষ্ট সিটি কর্পোরেশন নয়, সব সংসদ সদস্যের জন্য এটা ওপেন থাকবে। লাভজনক পদ না হওয়ায় তাদের ওপর থেকে এই বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলো। তবে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে, বিদ্যমান আইনানুযায়ী সংসদ সদস্য পদে তাদের ইস্তফা দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন। গত ২০১৫ সালে দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়া না দেয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তৎকালীন কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নাম উল্লেখ না করে সরকারী সুবিধাভোগীদের প্রচারের (সরকারী যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বাদ দিয়ে) সুযোগ করে দিয়ে বিধির খসড়া তৈরি হয়। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে সরকারী সুবিধাভোগীদের সফর ও প্রচারে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও মন্ত্রী-সাংসদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি করা হয়। গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। বৈঠকের পর এইচটি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, সামনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের চলাফেরার ওপরে যাতে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, যাতে স্বাভাবিক কাজে বাধা না দেয় তা দেখতে বলেছি। আচরণ বিধি সংশোধনের দাবি জানিয়ে তিনি ওই সময় বলেন, আচরণবিধি নিয়ে বাস্তবে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আচরণবিধি যাতে আবার এমন হয়ে না দাঁড়ায় যে নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে। নির্বিঘেœ নির্বাচন করার জন্য যেটুকু দরকার সেটুকুই যেন তারা রাখেন। বাকিটি নয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সমস্যাগুলো আমরা আলোচনা করেছি। বলেছি, মন্ত্রীদের গতিবিধি, সিটি কর্পোরেশনে এমপিরা যেন এলাকায় যেতে পারেন। গাজীপুর-খুলনায় অনেক এমপি রয়েছেন, তাদের ওপর যেন নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা হয়। তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ করা হলে তো সব জিনিসই অচল হয়ে যাবে। তবে ওই সময় সিইসির সঙ্গে দেখা করে সিটি নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে বিরোধিতা করা হয়। আওয়ামী লীগের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইসির পক্ষ থেকে গত মাসেই আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এমপিরা কোন অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি না বা সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি না, এগুলো নিয়েই আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে আইন ও বিধিমালা সংস্কারে গঠিত কমিটির ওপর বিষয়টি পর্যালোচনার ভার দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার ইসির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ইসির স্টেকহোল্ডার। তাদের প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করেই সংশোধনীর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিটি নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারলেও সরকারী সুযোগ-সুবিধা তারা গ্রহণ করতে পারবেন না জানিয়ে বলেন, এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা ভোটের সময় ডাকবাংলো ব্যবহারের সুযোগ পাবে না উল্লেখ করেন।
×