ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চলছে গোয়েন্দা নজরদারি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৫ মে ২০১৮

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চলছে গোয়েন্দা নজরদারি

শংকর কুমার দে ॥ রমজান মাসের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ওপর রাখা হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি। তাদের ওপর চালানো হচ্ছে পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান। গোয়েন্দা নজরদারি ও অনুসন্ধানের আওতায় আনা হয়েছে রাজধানীর ২৪৬ আমদানিকারক যারা বাজার সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিত। বাজারে পর্যাপ্ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মওজুদ থাকা সত্ত্বেও যাতে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মুনাফা লুটতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি বছরই রমজান মাসে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অধিক মুনাফার আশায় বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে তারা গলা কেটে পকেট ভারী করতে গিয়ে ক্রেতা সাধারণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে। নির্বাচনের বছরে যাতে কোন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট অধিক মুনাফা লাভের আশায় পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, রাজধানীর পাইকারি বাজারে বিশেষ করে আমদানিকারকরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মওজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারলে সারাদেশে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। সারাদেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে কোটি কোটি টাকার অধিক মুনাফা চলে যায় ব্যাজার সিন্ডিকেটের পকেটে। এতে করে রমজান মাসটিতে দ্রব্যমূল্যের চাপে নিষ্পেষিত হয় রোজাদারসহ সাধারণ মানুষজন। রমজানে রজাধানীর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠে নামছে গোয়েন্দারা। নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে তারা কাজ করবেন। এজন্য রাজধানীর ২৪৬ আমদানিকারকের ওপর পুরো রমজান মাসে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। বিভিন্ন সময় কারসাজি ও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই চক্রটির বিরুদ্ধে। রমজানে যাতে বাজারে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে মাঠে নজরদারিসহ কাজ করবে গোয়েন্দারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবার রমজান মাস আসলেই একটি চক্র ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে মূল্য বৃদ্ধি করে। এর ফলে সীমিত আয়ের মানুষকে পড়তে হয় চরম বিপাকে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নজরদারি ছাড়াও অনুসন্ধান চালাচ্ছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। রমজান মাস আসার আগেই থেকেই গোয়েন্দারা অনুসন্ধান ও নজরদারি শুরু করেছে। রাজধানীর পুরান ঢাকা, বাড্ডা, আশুলিয়াসহ বেশকিছু এলাকা ও চট্রগ্রামের পাইকারি বাজার, রাজশাহী, দিনাজপুর ২৪৬ জন আমদানিকারকের তালিকা তৈরি করেন। এসব আমদানিকারকরা চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, গুঁড়া দুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে থাকে। ওই তালিকা ধরেই অনুসন্ধান ও চালানো হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে বেশ কয়েকটি টিম অনুসন্ধান ও নজরদারি শুরু করেছে। তারা সাদা পোশাকে এসব আমদানিকারকের ওপর নজরদারি ও অনুসন্ধান করছে। আমদানিকারকরা কী পরিমাণ মালামাল আমদানি করছে, কোথায় তার মজুদ রাখছেন-এসবের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া গোপনে কেউ যদি মামামাল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বাজারে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের মজুদ ও সরবরাহ ভাল। বাজার কারসাজি না করলে রমজানে বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ার কোন আশঙ্কা নেই। ব্যবসায়ীর ওপর চাপ বা ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে না। ভোক্তা ও অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি ঠেকাতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভেজাল দ্রব্যের বিরুদ্ধে ও বাজার মনিটরিং-এর জন্য বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। এখন সাদা পোশাকে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে ও বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও নজরদারি করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, কোন আমদানিকারক কি পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন, ওই পণ্য কত দিনের মধ্যে বাজারে ছাড়বেন- এসব বিষয়গুলিই তদারকি করবে গোয়েন্দারা। কোনও আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে মালামাল মজুত করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি ও কালোবাজারের মাধ্যমে অধিক মুনাফা লাভের আশায় মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বা প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত বাজার পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে ও সহনশীল পর্যায়ে আছে। গোটা রমজান মাসই এভাবে বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নজরদারি, অনুসন্ধানসহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। রমজান মাসে মজুদ, কালোবাজারি, কারসাজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে সরকার। সরকার এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছে। রমজান মাস শুরুর আগেই বাজার মনিটরিং করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। নিত্য পণ্যের অবৈধ মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি মনিটর করা হচ্ছে।
×