ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় সাবেক মহিলা ফুটবলারদের সংগঠন

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৪ মে ২০১৮

আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় সাবেক মহিলা ফুটবলারদের সংগঠন

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের ইতিহাস মাত্র ১৬ বছরের। অথচ তুলনামূলকভাবে পুরুষ ফুটবলের চেয়ে মহিলা ফুটবলের উন্নতির ধাপই সবচেয়ে উঁচুতে। মাত্র কয়েক বছর আগেও এদেশের মহিলা ফুটবল নিয়ে কারুর কোন উচ্চাশা ছিল না। অথচ আজ তাদের নিয়ে সুনীল স্বপ্ন দেখে এদেশের ফুটবলামোদীরা। মৌলবাদীদের হুমকি, প্রতিবেশী-সমাজের সমালোচনা-ভ্রƒকুটি এবং নিজ পরিবারের শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়েই আজ মহিলা ফুটবল পেয়েছে একটা শক্ত ভিত্তি। এ জন্য আজকের মারিয়া, কৃষ্ণা, সানজিদা, মনিকা, আঁখি, আনুচিংদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ দিতেই হবে সেসব অগ্রজ ফুটবলারদের, যারা গড়ে দিয়েছিলেন এদেশের মহিলা ফুটবলারদের ভিতটা। আজ সেসব ফুটবলারদের মনে রাখে ক’জনা? কে তাদের খোঁজ নেয়? কার শারীরিক বা আর্থিক অবস্থা কেমন? এসব কেউ জানে না। আর এই কারণেই আবারও একত্রিত হতে যাচ্ছেন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের (জাতীয় দলের বাইরের ফুটবলাররাও এতে যোগ দিতে পারবেন) সাবেক সেই ফুটবলাররা। আর সেটা এক নতুন সংগঠনের মাধ্যমে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন এই সংগঠনটির নাম হবে ‘বাংলাদেশ এক্স-ওম্যান ফুটবল প্লেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিইডব্লিউএফপিএ বা বিউফপা)’। যদিও প্রথমে নামকরণ করার কথা ছিল বাংলাদেশ মহিলা সোনালী অতীত ক্লাব। কিন্তু সংগঠনের বেশিরভাগের সিদ্ধান্তেই বেছে নেয়া হয় বিইডব্লিউএফপিএ নামটি। ইতোমধ্যেই (গত ১৪ মে) সংগঠনের কমিটি গঠন হয়ে গেছে। শীঘ্রই বা ঈদের পরেই সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে বিইডব্লিউএফপিএ। সাবেক মহিলা ফুটবলারদের সংগঠনটি নিয়ে যেন কোন ঝামেলা বা প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য নিজেদের কার্যক্রমের বিস্তারিত তারা অবহিত করে রেখেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), সোনালী অতীত ক্লাব এবং মহিলা ক্রীড়া সংস্থাকে। বিইডব্লিউএফপিএ’র কমিটি হচ্ছে ২১ সদস্যের। পদবিন্যাসগুলো হচ্ছে এরকম : একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, তিনজন সহ-সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, দু’জন যুগ্ম সম্পাদক, একজন কোষাধ্যক্ষ, একজন সাংগঠনিক সম্পাদক, একজন অফিস সম্পাদক, একজন ক্রীড়া সম্পাদক, একজন প্রচার সম্পাদক এবং আটজন কার্যকরী সদস্য। এর বাইরেও আরও ২৯ সাধারণ সদস্যও সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তার মানে সংগঠনটিতে এখন মোট সদস্য সংখ্যা ৫০। সারাদেশে এর প্রচার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। তখন এর সদস্য সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা। সাবেক ফুটবলার মাহমুদা শরীফা অদিতিই হচ্ছেন এই সংগঠনের সবার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রধান সমন্বয়ক ও উদ্যোক্তা। কমিটিতে কে কে আছেন, সেটা না জানা গেলেও এটা জানা গেছে এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ডালিয়া আক্তার, খুরশিদা খাতুন খুশি, রোজিনা খাতুন রোজী, মাকসুদা খন্দকার সুখি, রেশমা আক্তার আদরী, মালেকা পারভীন, মিরোনা মিরু, জয়া চাকমা, চম্পা চাকমাসহ আরও অনেকে। নতুন এই সংগঠনটির গঠনতন্ত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। যদিও এখন পর্যন্ত তাদের স্থায়ী কোন ঠিকানা বা অফিস নেই। তাই আপাতত তাদের কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে চলছে ধানম-ির মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে, পল্টনের শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং ফেডারেশন এবং শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে। সংগঠনটির লক্ষ্য অনেক। এদেশে যারা ফুটবল শুরু করেছিলেন তারা এখন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। কেউবা হারিয়ে গেছেন। তাদের খুঁজে এনে একত্রিত করাই হচ্ছে প্রথম লক্ষ্য। তাদের নিয়ে ফিটনেস ধরে রাখতে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলানো, কেউ দুস্থ ও অসুস্থ থাকলে তাকে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য করা, সম্ভব হলে বিদেশে ট্যুর করা... এসব লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে সংগঠনটি। আগামীতে তাদের লক্ষ্যের পরিধির বিস্তৃতি ঘটবে নিশ্চয়ই। সাবেক এই ফুটবলাররা ফুটবল না খেললেও অনেকেই এখন বিভিন্ন খেলার খেলোয়াড়। কেউ হ্যান্ডবলার, কেউ কাবাডি খেলোয়াড়...। এখন দেখার বিষয়, নতুন এই সংগঠনটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আগামীতে কতটা বাস্তবায়িত হয়।
×