ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপ ফুটবলের পতাকা তৈরির হিড়িক দেশজুড়ে

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৪ মে ২০১৮

বিশ্বকাপ ফুটবলের পতাকা তৈরির হিড়িক দেশজুড়ে

গোলাম মোস্তফা ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট-পাগলের দেশ। ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান এখন খুব নাজেহাল। র‌্যাঙ্কিংয়ের দিকে তাকালেই বিষয়টা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০২ দলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৭। কিন্তু তারপরও চার বছর পরপর যখন ফুটবলের মহাযজ্ঞ ফুটবল বিশ্বকাপ আসে তখন বাংলাদেশেও শুরু হয়ে যায় উত্তাপ। ফুটবল বিশ্বকাপের জোয়ারে মেতে ওঠে দেশের ১৬০ মিলিয়ন মানুষ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে পতাকা ব্যবসায়ীদেরও শুরু হয়ে যায় দেদার ব্যবসা। দেশের পতাকা কিংবা জার্সি না বানিয়ে তারা তখন মেসি-নেইমার-রোনাল্ডোদের দেশের জার্সি এবং ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির পতাকা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে পতাকা, জার্সি বানাতে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন পোশাকশ্রমিকরা। রাজধানী ঢাকার মেরাজনগরের বাসিন্দা কামাল হোসেইন। জার্সিতে প্রিন্ট করাই তার কাজ। এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানালেন, ‘গত দুই মাস ধরেই টানা কাজ করে চলেছি। এমনও দিন যাচ্ছে যে দুই ঘণ্টা ঘুমানোরও সময় পাইনি।’ ৪০ বছর বয়সী কামাল হোসেইন জানালেন, এই সময়টাতে কম্পিউটার থেকে চোখ তুলারও সময় নেই তার। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা দুই দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। ফুটবলে দুই দলেরই রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য। বাংলাদেশেও এই দুই দেশের সমর্থকদের সংখ্যা বেশি। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জয়ী স্পেন, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড কিংবা মরক্কো ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সমর্থক রয়েছে বাংলাদেশে। কামাল হোসেইন সাক্ষাতকারে আরও বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা হাজার হাজার পতাকা তৈরি করে থাকি। আজ এই সময়ের মধ্যেই আমরা ১১ হাজারেরও বেশি ছোট পতাকা তৈরি করে ফেলেছি।’ নারায়ণগঞ্জ জেলার পতাকা বিক্রেতা ফারুক মিয়া। আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেন তিনি। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতানো আর্জেন্টিনার জীবন্ত কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা এখন দলের বাইরে। তবে তার মতে, ম্যারাডোনার নেই তাতে কি মেসিই এখন আর্জেন্টিনার নতুন তারকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আর্জেন্টিনার প্রতি পাগলাটে প্রেমটা এখনও রয়ে গেছে আমার। ম্যারাডোনা এখন খেলেন না কিন্তু মেসিই এখন নতুন তারকা।’ গত সপ্তাহে ফারুক মিয়া ৫০০ পতাকা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। সেগুলো বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। ফারুক মিয়া জানান আরও ৫০০ পতাকা কিনে আনবেন তিনি। পতাকা তৈরিকৃত প্রতিষ্ঠানের মালিক সেলিম হাওলাদারের লক্ষ্য এবার কয়েক’শ হাজার পতাকা বিক্রি করা। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি ৮০ হাজারেরও বেশি পতাকা বিক্রি করেছিলাম। যার বেশিরভাগই বিক্রি করেছি বিশ্বকাপ চলার সময় অথবা শুরুর এক দুইদিন আগে। কিন্তু এবার এই মুহূর্তেই দৈনিক ২০০০ থেকে ২৫০০ বড় পতাকা এবং ১০ হাজার ছোট পতাকা বিক্রি করছি। যদিওবা বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনও কয়েক সপ্তাহ বাকি।’ সেলিম হাওলাদারের অর্ডারের তালিকাতেও লিওনেল মেসি আর নেইমারের দেশের পতাকার দাপট। তিনি বলেন, ‘ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয়। আর্জেন্টিনার ৫০ ফুট লম্বা পতাকা তৈরিরও অর্ডার পেয়েছি। আমাদের দেশে এই দুই দলের সমর্থকের সংখ্যাটাই বেশি। তারপর জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল এবং অন্যান্য দেশ।’ বাংলাদেশের ৪৫০০ ফ্যাক্টরিতে প্রায় চার মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক রয়েছেন যারা পতাকা তৈরির কাজ করেন। যাদের মাধ্যমেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ আয় করে থাকে বাংলাদেশ। সেলিম হাওলাদারেরই ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন নার্গিস আক্তার। ২৮ বছর বয়সী নার্গিস জানান, ‘আমি চাই পতাকা নিয়ে তৈরি হওয়া এই উত্তেজনা মাসের পর মাস থাকুক।’
×