ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদে ঘরে ফেরা

সড়ক নৌ ও রেলপথে নানা প্রস্তুতি ॥ ২ জুন ট্রেনের অগ্রিম টিকেট

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৪ মে ২০১৮

সড়ক নৌ ও রেলপথে নানা প্রস্তুতি ॥ ২ জুন ট্রেনের অগ্রিম টিকেট

রাজন ভট্টাচার্য ॥ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে নৌ-সড়ক ও রেলপথে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। অগ্রিম টিকেট বিক্রির তারিখ নির্ধারণ থেকে শুরু করে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে টার্মিনালকেন্দ্রিক ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হচ্ছে। টিকেট কালোবাজারি রোধে থাকবে সতর্ক নজরদারি। এছাড়াও ছিনতাই, মলমপার্টি ও অজ্ঞানপার্টি ঠেকাতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। রাজধানীর কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হচ্ছে আগামী ২ জুন থেকে। এদিকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য আগামী সপ্তাহ থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের অগ্রিম বাসের টিকেট বিক্রি শুরু হতে পারে। আগামীকাল শুক্রবার এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতির বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ১৫ রোজার পর লঞ্চ ও বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হতে পারে। রেল মন্ত্রণালয়, বাস ও লঞ্চ এবং বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ২-৬ জুন ট্রেনের অগ্রিম টিকেট ॥ রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ট্রেনযাত্রীদের সেবা বৃদ্ধি ও দুর্ভোগ কমাতে ৯ জুন থেকে ঈদ ফেরত যাত্রীদের টিকেট বিক্রি হবে। ২-৬ জুন পর্যন্ত অগ্রিম ও ৯-১৩ জুন পর্যন্ত ফিরতি টিকেট বিক্রি চলবে। রেলওয়ে মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, আগামী ১৬ জুন ঈদ (সম্ভাব্য তারিখ) হচ্ছে এমনটা মাথায় নিয়ে রেলওয়েতে অগ্রিম টিকেট বিক্রির ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেই হিসেবে ২ জুন অগ্রিম ও ৯ জুন ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু করবে। তবে তিনি বলেন, এটি আমাদের প্রস্তুতি সভার সিদ্ধান্ত। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে টিকেট বিক্রি ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর সিদ্ধান্ত দেবেন। জানা গেছে, ২ জুন ১১ জুনের, ৩ জুন ১২ জুনের, ৪ জুন ১৩ জুনের, ৫ জুন ১৪ জুনের এবং ৬ জুন ১৫ জুনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে। ঈদ ফিরতি টিকেট ৯ জুন ১৮ জুনের, ১০ জুন ১৯ জুনের, ১১ জুন ২০ জুনের, ১২ জুন ২১ জুনের এবং ১৩ জুন ২২ জুনের বিক্রি হবে। প্রতি বছরের মতো এবারও টিকেট কালোবাজারি রোধে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। রেলওয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের পাশাপাশি কমলাপুর রেল স্টেশনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হবে। স্থাপন করা হবে সিসি ক্যামেরাও। এছাড়াও থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযোগ কেন্দ্র। যেখানে যাত্রীরা যে কোন অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করতে পারবেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, আমরা ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকেট বিক্রির সম্ভাব্য তারিখ পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে স্ব স্ব স্থানে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তিনি বলেন, এবার প্রায় ২৪টি কাউন্টার থেকে একযোগে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। টিকেট কালোবাজারি রোধে পুরো স্টেশনের সঙ্গে কাউন্টারের ভেতর ও বাইরে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপনা করা হচ্ছে। ছাদে যাত্রী ওঠা রোধে আমরা কঠোর হচ্ছি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল-সিলেট রুটে যানজটের কারণে রেলপথে যাত্রীদের চাপ থাকবে সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের খবরে খরমুখো যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংশ্লিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাছাড়া আট জুনের মধ্যে ভাঙ্গাচোরা সড়ক সংস্কার করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ সড়কের প্রধান সমস্যা হলো জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত। মহাখালী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত যেতে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা। ফলে এই দুই রুটে যাত্রীদের দুর্ভোগ মাত্রা ছাড়িয়েছে। তাছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা হলো, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে। সড়কের পাশে ড্রেনেজ নির্মাণ প্রকল্প বছরের পর বছর চললেও তা কবে শেষ হবে কেউ জানে না। সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক ডুবে যায়। ঝুঁকি না নিয়ে যানবাহনগুলো দুই লেন ব্যবহার না করে এক লেনে চলাচল করে। ফলে যানজট মাত্রা ছাড়াচ্ছে। বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত শুক্রবার ॥ ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত আসবে শুক্রবার। বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারও উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের জন্য বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে। এজন্য আগামী শুক্রবার সমিতির বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে টিকেট বিক্রি শুরুর সম্ভাবনার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, এ বছর সড়কপথে আরও দুর্ভোগ বাড়তে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট রুটে ধারাবাহিক যানজট হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি সমাধানের জন্য আবারও দৃষ্টি আকর্ষণ করব। মহাসড়ক যানজটমুক্ত করা না গেলে যাত্রীরা আতঙ্কের মধ্যে থাকবেন। অনেকেই বাড়ি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে পরিবহন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, বাড়তি ভাড়া রোধ ও টিকেট কালোবাজারি যেন কোন ভাবেই না হয় সেদিকে আমরা কঠোর নজর দেব। মালিক সমিতির তারিখ নির্ধারণের পর দেশের উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা কল্যাণপুর, গাবতলী, শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকার কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকেট কাটার সুযোগ পাবেন। দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা অগ্রিম টিকেট কিনতে পারবেন। এদিকে মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে এবারও বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে না। মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরের মতোই এবারও তারা অগ্রিট টিকেট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যাত্রীরা কাউন্টারে এসে সরাসরি টিকেট কেটে বাসে ওঠার সুযোগ পাবেন। টার্মিনালে ছিনতাই, মলমপার্টি রোধ ও বাড়তি ভাড়া ঠেকাতে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান তারা। ১৫ রোজার পর লঞ্চের টিকেট ॥ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো যাত্রীদের প্রধান ভরসা নৌ-পথ। তাই প্রতি বছরের মতো এ বছরও লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করবে বেসরকারী নৌ-যান মালিকরা। পাশাপাশি বিআইব্লিউটিসি বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু করার কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অগ্রিম টিকেট বিক্রির তারিখ ঠিক হয়নি। আগামী সপ্তাহে তারিখ ঠিক হলে ১৫ রোজার পর থেকে বিক্রি শুরু হতে পারে। সদরঘাট নদী বন্দরের কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকেট সংগ্রহ করার কথা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিআরটিসিও অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরুর কথা আছে। বিভিন্ন গার্মেন্টসসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ঈদ যাত্রায় বাস ভাড়া দেয়ার কথাও জানিয়েছেন বিআরটিসির কর্তকর্তারা। সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানিয়েছেন, প্রতি বছর আমরা রেশনিং পদ্ধতিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছুটি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। এভাবে ছুটি হলে সড়কে চাপ কম হয়। যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি ফেরার সুযোগ পান। এবারও আমাদের একই দাবি থাকবে। পর্যায়ক্রমে গার্মেন্টস শ্রমিকদের যেন ছুটি নিশ্চিত করা হয়।
×