ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতে হিন্দু মৌলবাদী ত্রাস

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ২৩ মে ২০১৮

ভারতে হিন্দু মৌলবাদী ত্রাস

ভারতের হিন্দু দক্ষিণপন্থী বা মৌলবাদীরা ধর্মের পথ ধরে সমাজের মেরুকরণ ঘটানোর চেষ্টায় লিপ্ত এবং তার শিকার হচ্ছে অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা তো ঘোষণাই করেছিলেন যে ‘হিন্দুস্তানের অহিন্দুদের হয় হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষা অবলম্বন করতে হবে নয়ত হিন্দু ধর্মকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে হবে, হিন্দুধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে মহিমান্বিত করার চিন্তা মাথায় স্থান দেয়া চলবে না। অন্যথায় তাদের হিন্দু জাতির প্রতি সম্পূর্ণরূপে অধীনস্থ থাকতে হবে। তারা কোন অধিকার দাবি করতে, কোন সুবিধা ভোগ করতে এমনকি নাগরিক অধিকার পর্যন্ত পেতে পারবে না।’ এমন চিন্তা ধারার বহির্প্রকাশের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে। যেমন গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) সদস্যরা মধ্যপ্রদেশের বিদিশায় সেন্ট শেরিস কলেজে ‘ভারত মাতার’ বন্দনায় আরতি দেয়ার জন্য জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। ‘পুলিশ তাদের বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এবিভিপির সেই উচ্ছৃঙ্খল সদস্যরা বলে যে তাদের ভারত মাতার বন্দনায় আরতি দিতে চাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের মধ্যে দেশপ্রেমের সঞ্চার করা। এ্যালায়েন্স ডিফেন্ডিং ফ্রিডম নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি খ্রীস্টান সংগঠনের হিসাবে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত শুধু মধ্য প্রদেশেই হিন্দু উগ্রবাদী গোষ্ঠার হাতে খ্রীস্টানদের, ওপর ২১টি হিংসাত্মক হামলা এবং হয়রানি, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের শত শত ঘটনা ঘটেছে। ওই প্রদেশের সোয়া ৭ কোটি লোকের ১ শতাংশেরও কম হন খ্রীস্টান। ওপেন ডোরস ইউএসএ নামে আরেক সংস্থার হিসাবে খ্রীস্টানদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ৫০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এক বছর আগেও যেখানে ছিল ১৫ নম্বরে সেখানে ২০১৭ সালে তা লাফ মেরে ১১ নম্বরে উঠে আসে। ২০১৭ সালের প্রথম ৬ মাসে খ্রীস্টান নির্যাতনের ৪১০টি ঘটনা ঘটে। আগের গোটা বছরে এমন ঘটনা ঘটেছিল ৪৪১টির মধ্যে যাজকদের প্রহার, গির্জায় আগুন দেয়ার ঘটনাও আছে। ওপেন ডোরস বলে যে হিন্দু উগ্রবাদীরা জাতিকে ইসলাম ও খ্রীস্টানদের হাত থেকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে তারা হিংসার আশ্রয় নিচ্ছে আর সরকার এসব ঘটনাকে দেখেও না দেখার ভান করে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ওপেন ডোরস আরও বলেছে যে হিন্দু উগ্রবাদীদের আক্রোশের শিকার প্রধানত সেই সব হিন্দু যারা খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। তাদের আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে আসার জন্য সর্বক্ষণ চাপ দেয়া হচ্ছে। অনেক সময় জবরদস্তির আশ্রয় নিয়ে তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিকটস্থ কোন মন্দিরে, তারপর মন্দ্রোচ্চারণ করিয়ে গরুর গোবর বা মূত্র সারা গায়ে মাখিয়ে পরিশুদ্ধ করা হচ্ছে। এদিকে ওপেন ডোরস ইউকের হিসাবে গত বছর কমপক্ষে ৮ জন খ্রীস্টানকে হত্যা এবং প্রায় ২৪ হাজার খ্রীস্টানকে প্রহার করা হয়েছে। এতে করে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মাত্রা অনেক কেড়ে গেছে। মধ্য দিল্লীর একটি গির্জায় রবিবারের প্রার্থনা সভায় খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে একবার এক যাজক প্রার্থনা সমাবেশে বলেন, ‘গত বছর সারা ভারতে ১০টি গির্জা জালিয়া দেয়া হয়।’ বিজেপি ক্ষমতায় আসার অল্প দিন পরেই রাজধানী দিল্লীর দুটি গির্জায় হামলা চালানো হয়েছিল। একটি গির্জা আগুনে ভস্মীভূত হয়। অন্যটির পবিত্র বস্তুসমূই ভেঙ্গেচুরে ফেলা হয়। খ্রীস্টানরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন অভিমুখে মিছিল নিয়ে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাফাই গান এই বলে যে মুসলমান বা খ্রীস্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কোন নির্যাতন চালানো হচ্ছে না। ওপেন ডোরস ইউএসএ ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন মাত্রাকে ‘চরম’ বলে অভিহিত করেছে। এদের দেখা নির্যাতন-নিগ্রহের বিবরণ অনুযায়ী ৮৬ শতাংশ ঘটনায় সরাসরি সহিংসতার আশ্রয় নেয়া হয়। ৭৯ শতাংশ ঘটনায় গির্জার কর্মকা- ব্যাহত করা, ৭৬ শতাংশ ঘটনায় পারিবারিক জীবন ব্যাহত করা হয়। যাজকদের টার্গেট করে গ্রামছাড়া করার ঘটনাও ঘটেছে। খ্রীস্টানদের ওপর সামাজিক বয়কট চাপিয়ে দেয়া হয়। তাদের নলকূপ থেকে পানি নিতে, স্থানীয় দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতে বা চাকরি করতে দেয়া হয়নি এমন দৃষ্টান্তেরও অভাব নেই। চলমান ডেস্ক সূত্র : ফ্রন্টলাইন
×