ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপরিণত বয়সে চলে গেলেন অভিনেত্রী তাজিন

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৩ মে ২০১৮

অপরিণত বয়সে চলে গেলেন অভিনেত্রী তাজিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আপন অভিনয় দক্ষতায় পরিণত হয়েছিলেন টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। মঞ্চনাটকেও ছিল তার সদর্প বিচরণ। টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় রেখেছিলেন মুন্সিয়ানার স্বাক্ষর। সব কাজ ফেলে রেখে যেন আকস্মিকভাবে অপরিণত বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন সেই অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। টিভি পর্দার একসময়ের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রীর বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর। রেখে গেছেন মা দিলারা জলিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী। রাত আটটা নাগাদ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাজিন আহমেদের দাফনের বিষয়ে পারিবারিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান, তার ফুপু প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান। তাঁর মরদেহ উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। তাজিনের পারিবারিক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালের দিকে রাজধানীর উত্তরার বাসায় হার্ট এ্যাটাক করেন তাজিন আহমেদ। এরপর তাকে দ্রুত রাজধানীর উত্তরার চীন-জাপান মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা অপারগ হলে এরপর বেলা ২টা ৩০ মিনিটে এ অভিনেত্রীকে নেয়া হয় উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে। এ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাজিন আহমেদের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে মিডিয়া ভুবনে। বিশেষ করে তার নাট্যাঙ্গনের সহকর্মীরা শূটিং বন্ধ রেখে তাকে শেষবারের মতো দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান। এ সময় হাপসাতালে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, অভিনেতা রওনক হাসান, নির্মাতা বদরুল আনাম সৌদ, সকাল আহমেদ, অভিনেত্রী জেনীসহ অনেকেই। জানা গেছে, যখন এ অভিনেত্রীর হার্ট এ্যাটাক হয় তখন বাসায় কেবল একজন মেকাপম্যান ছিলেন। এ মেকাপম্যান সর্বদা তাজিনের সঙ্গেই থাকতেন। ওই মেকাপম্যানই তাজিনকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার পর তার অবস্থা খুবই মুমূর্ষু বলে জানান ডাক্তার। এরপরই রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত ডাক্তাররা তার হার্ট চালু করতে শেষ চেষ্টা হিসেবে ইলেকট্রিক শকও দেন। কিন্তু তারপরও ফেরা হলো না এ অভিনেত্রীর। নিতে হলো চির বিদায়। ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন তাজিন আহমেদ। নোয়াখালীতে জন্ম হলে ও শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা জেলায়। পড়াশোনা শেষ করেছেন ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে। এই অভিনেত্রী ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। মা দিলারা জলির প্রোডাকশন হাউস থাকায় তার মাধ্যমেই অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন তাজিন। ‘শেষ দেখা শেষ নয়’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার অভিনয় যাত্রার সূচনা হয়। ১৯৯৬ সালে বিটিভিতে নাটকটি প্রচার হয়। এরপর তিনি অসংখ্য নাটক-টেলিছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের নাটক ‘নীলচুড়ি’তে অভিনয় করেও বেশ আলোচিত হন। সর্বশেষ তার অভিনীত ধারাবাহিক নাটকের নাম ছিল ‘বিদেশী পাড়া’। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি মিডিয়া থেকে দূরে ছিলেন। টিভির বাইরে দীর্ঘদিন থিয়েটারেও অভিনয় করেছেন তাজিন আহমেদ। নাট্যজন থিয়েটারের হয়ে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীতে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটকে অভিনয় করেছেন। এতে তিনি বলাকা চরিত্রে অভিনয় করেন। তার সর্বশেষ অভিনীত মঞ্চনাটক এটি। অভিনয়ের বাইরে লেখালেখির কাজেও যুক্ত ছিলেন তাজিন। লিখেছেন একাধিক নাটক। আর নিয়মিত মিডিয়ায় সময় দিতে না পারলেও উপস্থাপনায় ছিলেন বেশ দাপুটে। এনটিভিতে প্রচারিত ‘টিফিনের ফাঁকে’ অনুষ্ঠানে টানা ১০ বছর উপস্থাপনা করেন তিনি। একাত্তর টিভিতেও ‘একাত্তরের সকালে’ হাজির হয়েছেন তিনি। তাজিন আহমেদ রাজনৈতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)’-এ যোগ দিয়েছিলেন। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সম্পাদক (সাংস্কৃতিক) পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায় একাকী বসবাস করছিলেন তাজিন আহমেদ। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তার মেকাপ আর্টিস্টই তাকে দেখাশোনা করতেন। মূলত বিটিভিযুগীয় অভিনেত্রী ছিলেন তাজিন আহমেদ। ওই সময়ে বিটিভির দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় একটি নাম হয়ে উঠেন তিনি। জাহিদ হাসান, আজিজুল হাকিম, আজাদ আবুল কালাম, তৌকীর আহমেদ, টনি ডায়েসদের সঙ্গে জুটি বেঁধে নিয়মিতই একের পর এক নাটকে অভিনয় করতেন। শুধু অভিনয়ে নয়, মডেলিং করেও সুনাম কুড়িয়েছিলেন এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সাংবাদিকতার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
×