ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৩ মে ২০১৮

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ পবিত্র মাহে রমজানের আজ ৬ষ্ঠ দিবস। মাহে রমজানের প্রধান শিক্ষা ও অনুশীলন হলো মানুষের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি। তাকওয়া মানে খোদাভীতি ও খোদাভক্তির মাধ্যমে আখিরাতের পুরস্কার ও শাস্তির কথা একশ’ ভাগ বিবেচনায় এনে দৈনন্দিন জীবন পরিচালিত করা। আল্লাহ তায়ালা পাক কালাম শরীফে সিয়াম সাধনা প্রবর্তনের মহিমা বর্ণনা করতে দিয়ে বলেছেন লা আল্লাকুম তাত্তাকুন। অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টির লক্ষ্যে সিয়ামকে ফরজ করা হয়েছে। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে এ মহা মূল্যবান গুণ ও বৈশিষ্ট্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়ার গুণই মানুষের ইহÑপরকালীন জীবনে সামগ্রিক সাফল্য বয়ে আনে। আল্লাহ বলেন : নিশ্চয়ই তাকওয়াবানদের জন্য রয়েছে সফলতা।’ (সুরা আন নাবা ৩১)। মানুষের ব্যক্তি জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ব্যক্তি চরিত্র গঠনে তাকওয়ার বিকল্প নেই। যে মুমিনের হৃদয়ে তাকওয়া আছে, সে কোন অবস্থাতেই প্রলোভনে পড়ে না নির্জন থেকে নির্জনতর স্থানেও পাপ কাজে লিপ্ত হয় না। কারণ, সে জানে সবাইকে ফাঁকি দেয়া গেলেও আল্লাহকে ফাঁকি দেয়া যায় না। তাই চরিত্র গঠনে তাকওয়া একটি সুদৃঢ় দুর্গস্বরূপ। তাকওয়া হচ্ছে ইবাদত বন্দেগীর মূল বস্তু। ইবাদতে আনুষ্ঠানিকতার কোন মূল নেই, যদি সেখানে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় না থাকে। যেমন আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা ‘আল্লাহর কাছে তোমাদের কুরবানির গোশত, রক্ত কিছুই পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু এ থেকে অর্জিত শিক্ষা সংযমের অভ্যাস তাকওয়া।’ (সুরা আলহাজ : ৩৭)। আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে ভয় না করলে, ইমানের পরিপূর্ণতা আসে না। তাই আল্লাহ তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়ে ঘোষণা করেন, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ না করে মৃত্যু বরণ কর না। (সুরা আল ইমরান : ১০২)। একইভাবে, আল্লাহর সান্নিধ্য, নৈকট্য ও সহায়তা লাভের জন্য তাকওয়া অবলম্বন করা অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, জেনে রেখ আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আল বাকারা : ১৯৪)। আল্লাহর কাছে তাকওয়াই হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা লাভের মাপকাঠি। আল্লাহ ঘোষণা করেন : তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাবান, যার মধ্যে বেশি তাকওয়া আছে।’ (সুরা হুজরাত ১৩)। তাকওয়া ব্যক্তি মানুষের চরিত্রে, তার আকিদা বিশ্বাসে, কাজকর্মে, আচার আচরণে, ইবাদত বন্দেগীতে এং দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার সৃষ্টি করে। তাই সে হয় সকল কাজে অতীব আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান। তাকওয়া মানুষের ইমানের মজবুতি ও পূর্ণতা এনে দেয়। যে ব্যক্তি যত তাকওয়া সম্পন্ন, তার ইমান তত বেশি মজবুত। সে জীবনে মরণে কখনও তাকওয়া থেকে এতটুকু বিচ্যুত হয় না। সে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে চলে এবং তাকওয়ার সঙ্গে জীবনযাপন করে। তাকওয়া মানুষকে জাহান্নামের ভয়াবহ কঠিন শাস্তি হতে মুক্তি দান করে। মহানবী (স.) এ বিষয়ে বলেন, জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল হলো আল্লাহর ভয়।’ তিনি আরও বলেন, সে দুটো চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। যে চোখ আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝরায় এবং যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারায় রত থেকে কাঁদে। (তিরমিযী শরীফ)। মুত্তাকিরা নিশ্চিতভাবে জান্নাত লাভ করবে, তাকওয়ার মানদ- অনুযায়ী কেউ কেউ দুটি উদ্যান লাভে ধন্য হবে। আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য দুটি উদ্যান রয়েছে। (সুরা আর রহমান : ৪৬)। সর্বোপরি তাকওয়াই আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়ার পাশে নিয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালবাসেন। (সূরা তওবাহ: ৪)। মাহে রমজান বহু দিক দিয়ে আমাদের মাঝে সে বৈশিষ্ট্যের সমাহার ঘটাচ্ছে।
×