ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ সদস্য আহত

মাদকবিরোধী অভিযানে আরও ১১ হত

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ মে ২০১৮

মাদকবিরোধী অভিযানে আরও ১১ হত

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে সোমবার দিবাগত রাতে ও মঙ্গলবার ভোরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বেপরোয়া মাদক ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গোলাগুলিতে আরও ১১ শীর্ষ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ১২ সদস্য। নিহতরা ইয়াবা, হেরোইন ও কোকেনের মতো মারাত্মক ধরনের মাদকের পাইকারি বিক্রেতা ছিল। নিহতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ২৯ শীর্ষ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলো। যেসব এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা নিহত হয়েছে, সেসব এলাকার মানুষ রীতিমতো খুশি। তাদের ভাষ্য, এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে। সারাদেশ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতারা জানান, কুমিল্লা ॥ জেলার কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে জেলার অরণ্যপুর এলাকায় গোয়েন্দা শাখা ও থানা পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলিতে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার মহেষপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে শরীফ (২৬) ও আদর্শ সদর উপজেলার শুভপুর গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে পিয়ার আলীর (২৮) মারা যায়। শরীফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক আইনে পাঁচটি ও পিয়ারের বিরুদ্ধে ১৩টি মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, একটি পাজেরো গাড়ি, ৫০ কেজি গাঁজা এবং ৫শ’ বোতল ফেনসিডিল ও বেশ কিছু ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। অভিযানে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রূপ কুমার, এসআই শাহ আলম, কনস্টেবল তানভীর এবং ডিবির এএসআই শাহীনুর আলম আহত হন। অন্যদিকে সোমবার দিবাগত রাতেই জেলার দেবিদ্বার বাগুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানকালে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে মাদক ব্যবসায়ী সাদ্দামের (২৪) বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলার আবদুল আজিজের ছেলে সাদ্দাম। সে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বিরুদ্ধে দেবিদ্বার থানায় মাদক আইনে ২টি মামলা আছে বলে থানাটির ওসি মিজানুর রহমান জানান। নীলফামারী ॥ মঙ্গলবার ভোরে জেলার সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সৈয়দপুর পৌর শহরের ইসলামবাগ মহল্লার আব্দুল হান্নানের ছেলে জনি হোসেন (২৭) ও নিচু কলোনি মহল্লার ইউসুফ হোসেনের ছেলে শাহিন আহমেদ (৩০) নিহত হয়। পুলিশ জানায়, নিহতরা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। নিহতদের বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় আটটি মামলা রয়েছে। পুলিশ জানায়, গোলাহাট এলাকার মাদক ব্যবসায়ী জসিয়ার রহমান ও নূর বাবুর কাছ থেকে তারা ইয়াবা, ফেন্সিডিল, বিদেশী মদসহ বিভিন্ন মাদক কিনে এলাকায় বিক্রি করত। জসিয়ার ও নূরবাবু সৈয়দপুর গোলাহাট বধ্যভূমির বিভিন্ন স্থানে মাদক লুকিয়ে রাখত। এ দু’জনকে গ্রেফতার করে গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় গেলে পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলি হয়। অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীদের ছোড়া বোমায় সৈয়দপুর থানার উপ-পরিদর্শক ওয়াদুদ রহমান ও কনস্টেবল মোকাররম হোসেন আহত হন। তাদের সৈয়দপুর উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল। ঘটনাস্থল থেকে চারটি ককটেল, চারটি দেশীয় অস্ত্র, একটি মোটরসাইকেল এবং এক শ’ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছ। পালিয়ে যাওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। চুয়াডাঙ্গা ॥ সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার রেলওয়ে স্টেশন রোডে পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলিতে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান সাধু (৫০) নিহত হয়। নিহতের বাড়ি উপজেলার হারদী গ্রামে। তার পিতার নাম ইমদাদুল হক। নিহতের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় ৪টি মাদক মামলা আছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও এক বস্তা ফেন্সিডিল উদ্ধার হয়েছে। লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। নেত্রকোণা ॥ সোমবার রাতে জেলার সদর উপজেলার বড়াইল বালুঘাটে পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলি হয়। গুলিতে জেলা শহরের উত্তর নাগড়া এলাকার বাসিন্দা কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ (৩৫) নিহত হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ১৩টি মামলা আছে। নেত্রকোণা সদর মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, গ্রেফতারের পর আমজাদকে নিয়ে অভিযানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। পুলিশও গুলি চালায়। বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে পড়ে আমজাদের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, আধা কেজি হেরোইন ও ৩০৫ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। অভিযানকালে সে ছাড়াও এসআই মামুন, মহসিন, মকবুল ও কনস্টেবল মালেক আহত হন। তারা নেত্রকোণা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। চট্টগ্রাম ॥ মঙ্গলবার ভোরে জেলার বায়েজিদ বোস্তামী থানার ঢেবার পাড়ে র‌্যাবের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলি হয়। র‌্যাব-৭ চান্দগাঁও ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কমান্ডার আশিকুর রহমান জানান, গোলাগুলিতে শুক্কুর আলী (৪৫) নামে এক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১০টি মামলা আছে। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও একটি ওয়ানশূটার গান উদ্ধার হয়েছে। ফেনী ॥ মঙ্গলবার ভোরে জেলা সদর উপজেলার লেমুয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে র‌্যাবের চেকপোস্টে তল্লাশির সময় মাদক ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুর (৪৯) সঙ্গে গোলাগুলি হয়। গোলাগুলিতে মঞ্জুর মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি ও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। র‌্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম জানান, মঞ্জু চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে ছিল। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় মাদক চোরাচালান ও ডাকাতির অভিযোগে একাধিক মামলা আছে। নিহতের লাশ ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, মঞ্জু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকাভুক্ত কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবার গডফাদার ছিল। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে গিয়েছিল। দিনাজপুর ॥ জেলার বিরামপুর উপজেলায় সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে অভিযানকালে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলি থেমে গেলে সেখানে অভিযান চালিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রবাল হোসেন (৩৫) নামে একজনের লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার, পাঁচটি ককটেল ও ৯৩ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার হয়েছে। নিহত প্রবাল বিরামপুরের দক্ষিণ দামোদারপুর (বাসুদেবপুর) গ্রামের খলিল উদ্দিনের ছেলে ছিল। তার বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় আটটি মামলা আছে বলে বিরামপুর থানার ওসি আব্দুস সবুর জানান। নারায়ণগঞ্জ ॥ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে জেলার আড়াইহাজার উপজেলার শিমুলতলী এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোলাগুলি হয়। র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর ইশতিয়াক জানান, গোলাগুলিতে বাচ্চু খান (৩৩) নামে একজন নিহত হন। সে রাজধানী ঢাকার উত্তরখান এলাকার আশরাফ খানের ছেলে ছিল বলে জানা গেছে। বাচ্চু টঙ্গী, গাজীপুর ও কালিয়াকৈর এলাকায় মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করত। আড়াইহাজার থানার ওসি এমএ হক জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার ইয়াবা ও দুটি গুলিসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। অভিযানে আক্কাস (৩৫) নামে এক র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। তাকে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ মঙ্গলবার ভোরে জেলার সোনারামপুর এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র‌্যাবের গোলাগুলিতে ধন মিয়া (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। র‌্যাব-১০ এর দায়িত্বরত অতিরিক্ত এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, ধন মিয়ার স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করা হয়েছে। ধন মিয়া জেলার মরিচাকান্দি গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে ছিল। তার বিরুদ্ধে থানায় চারটি মাদকের মামলা আছে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১২ হাজার ইয়াবা, মাদক বিক্রির প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও একটি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। এই দম্পতির ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছে।
×