ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্ভোগের শঙ্কা থাকছে ॥ ঈদে সড়কপথে ঘরে ফেরা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ মে ২০১৮

দুর্ভোগের শঙ্কা থাকছে ॥ ঈদে সড়কপথে ঘরে ফেরা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ঈদ আসন্ন। শুরু হয়েছে ঘরে ফেরার চিন্তা। বাস্তবতা হলো দেশের সড়ক-মহাসড়কের খবর খুব একটা ভাল নয়। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোও ভাঙ্গাচোরা। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে খবর ভাল নয়। বর্ষার কারণে সড়ক সংস্কার করাও কঠিন। এই পরিস্থিতিতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েই গেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) তথ্যানুযায়ী, আগের চেয়ে উন্নতি হলেও সড়ক-মহাসড়কের এক-চতুর্থাংশ এখনও ভাঙ্গাচোরা। সারাদেশে রাস্তার ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশের অবস্থা বেহাল। মহাসড়কের ৫৭ ভাগ ভাল হলেও সারাদেশে দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ, চলাচলের অযোগ্য। এক হাজার ৭৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। খুব খারাপ রাস্তার আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে। জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক এই ক্যাটাগরিতে সওজের অধীনে সারাদেশে প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের নবেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে সারাদেশের ১৭ হাজার ৯৭৬ কিলোমিটার রাস্তা জরিপ করে এইচডিএম। জরিপের ভিত্তিতে ২০১৭-১৮ সালের প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সারাদেশের ৫৩ ভাগ সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভাল। আগের বছরে ভাল ছিল ৩৯ ভাগ রাস্তা। তার আগের বছরে মাত্র ১৯ ভাগ রাস্তা ভাল ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাঙ্গাচোরা সড়ক মেরামত, পুনর্নির্মাণে আগামী পাঁচ বছরে প্রয়োজন ২১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে প্রয়োজন ১৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। এইচডিএমের আগের বছরের প্রতিবেদনে ১২ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। তবে চলতি অর্থবছরে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ এক হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। তবে আট জুনের মধ্যে ভাঙ্গাচোরা মহাসড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর ঢাকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ সবকটি সড়কেই কমবেশি দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ভোগের কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ফোর লেন প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গাচোরা আর যানজটের কারণে সামনের পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে। সিলেট, ময়মনসিংহ, মাওয়া সড়কেও দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন তারা। জানতে চাইলে বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী, বারৈয়ারহাট, কুমিল্লার কিছু অংশসহ কক্সবাজার সড়কের কিছু অংশ ভাঙ্গাচোরা। এ কারণে যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, ঢাকা-সিলেট রুটের গাউসিয়া, রুপসী, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের জুড়াইন, পোস্তাগোলা সড়কের অবস্থাও ভাল নয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল সহাসড়কে দুর্ভোগ পুরনো একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়ক সংস্কারের জন্য মাওয়া রুটের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়। তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বহাল অবস্থা বিরাজ করছে। দাউদকান্দি সড়কের বেহাল অবস্থার কথা জানিয়ে ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, আমরা চাই ঈদে যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি যাক। বাস্তব চিত্র বলছে সড়কপথে যাত্রীদের এবারও দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সোনারগাঁও, শনিরআখড়া এলাকায় দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদ যাত্রী শুরুর এখনও অনেক সময় আছে। জেলা সড়কের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ॥ এইচডিএমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা জেলা সড়কের। ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার জেলা সড়কের ১০ হাজার ৩৯৩ কিলোমিটার জরিপ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৯ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই খারাপ। আগের বছরে ৫৭৪ কিলোমিটার ছিল চলাচল অযোগ্য। ৬৫৮ কিলোমিটারের অবস্থা খারাপ। জেলা সড়কের ৫১ ভাগ ভাল। বাকিটা দুর্বল ও মোটামুটি। চার হাজার ২৪৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের তিন হাজার ৮২১ কিলোমিটার জরিপ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ ভাগই ভাল। আগের বছরে ৪২ ভাগ ছিল ভাল। ২৯৪ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই খারাপ। আগের বছরে চলাচল অযোগ্য ছিল ১৭০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক। সওজের অধীন ১০টি জোনের মধ্যে রাস্তা সবচেয়ে খারাপ বরিশালে। এ জোনের ৩২০ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা খুব খারাপ, যা এ জোনের প্রায় ৩০ শতাংশ রাস্তা। বন্যার দোষ ॥ সড়কের এক-চতুর্থাংশ ভাঙ্গাচোরার জন্য গত বছরের বন্যাকে দায়ী করেছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সওজ কর্মকর্তারা। সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত বন্যায় ও অতিবর্ষণে দেশের ২২টি জেলার ৬২ স্থানে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক বিলীন হয়ে যায়। ৬৭ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক বন্যায় তলিয়ে যায়। পাঁচ হাজার ১১৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এইচডিএমের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবেদনে ভাল, মোটামুটি, দুর্বল, খারাপ, খুব খারাপ; এই পাঁচ ভাগে তুলে ধরা হয়েছে রাস্তার অবস্থা। খারাপ রাস্তা বলতে বোঝানো হয়েছে- যেখানে পেভমেন্ট ভেঙ্গে গেছে, সড়কে বড় বড় ফাটল ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। খুব খারাপ সড়ক মানে সেখানে যান চলাচলে খুব সমস্যা হয়। এগুলো জরুরী ভিত্তিতে মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। এইচডিএমের গত বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৪০ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ছিল খুব খারাপ। চলাচল অযোগ্য রাস্তা এবার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছরে খারাপ রাস্তা ছিল এক হাজার ৯০০ কিলোমিটার। চলতি বছরে তা কমে হয়েছে এক হাজার ৭৩ কিলোমিটার। এইচডিএমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারাদেশের ৯ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা ভাল। যা জরিপকৃত সড়কের ৫৩ দশমিক ৬৩ ভাগ। তিন হাজার ৬০৪ কিলোমিটারের অবস্থা মোটামুটি। দুই হাজার ১১৫ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা দুর্বল। চলাচলের অযোগ্য সড়ক বাড়লেও সড়ক-মহাসড়কের উন্নতিও হয়েছে। ২০১৫-১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়ক-মহাসড়কের মাত্র ১৯ দশমিক ৬৪ ভাগ ছিল ভাল। ২০১৬-১৭ সালে জরিপকৃত ১৬ হাজার ২২০ কিলোমিটার রাস্তার ৩৯ ভাগ ছিল ভাল। এবার ভাল রাস্তা ১৪ শতাংশ বেড়েছে। সারাদেশের তিন হাজার ৮১২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের তিন হাজার ৭৬০ কিলোমিটার জরিপ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ১৪৮ কিলোমিটারের অবস্থা ভাল। আগের বছরে ভাল অবস্থায় ছিল এক হাজার ৯৭৭ কিলোমিটার। এবার ৮১৩ কিলোমিটারের অবস্থা মোটামুটি। ৩৭৬ কিলোমিটার দুর্বল। ১৮৩ কিলোমিটারের অবস্থা খারাপ। বাকি ২৩৯ কিলোমিটারের অবস্থা খুব খারাপ। আগের বছরে এমন চলাচল অযোগ্য মহাসড়ক ছিল মাত্র ৯৬ কিলোমিটার। ২০১৬ সালের ২ জুলাই চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অল্প সময়ের ব্যবধানে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট অংশ যান চলাচল অনুপযোগী। জায়গায় জায়গায় পেভমেন্টে (পিচ ঢালাইয়ে) ফাটল এবং পটহোল (গর্ত) দেখা দিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-টেকনাফ মহাসড়কের শুরুর দিকে কিছু অংশ খারাপ। যাত্রাবাড়ীতে কিছু অংশের অবস্থা দুর্বল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশিরভাগ সড়কেই ভাল নয়। কোন কোন অংশ যান চলাচলের অনুপযোগী। চার লেনের জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কও উদ্বোধন করা হয় ২০১৬ সালের ২ জুলাই। এ মহাসড়কেরও বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট অংশ যান চলাচল অনুপযোগী। জায়গায় জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের ১০৭ থেকে ১১১ কিলোমিটার অংশ দুর্বল ও খারাপ। ১০১ থেকে ১০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চার কিলোমিটারের অবস্থা খারাপ ও খুব খারাপ। নির্মাণের দুই বছরেই বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত চার লেনের মহাসড়কে ভাঙ্গনের কারণ বলা হয়নি প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, মহাসড়কের আয়ুষ্কাল ২০ বছর। দুই বছরে ভেঙ্গে যাওয়া অবিশ্বাস্য। নির্মাণ ত্রুটি ছাড়া দুই বছরে রাস্তা ভাঙ্গার কারণ নেই। বাংলাদেশের মতো বৃষ্টিবহুল দেশে বিটুমিনের বদলে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করা উচিত। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রকল্প পরিচালক আফতাব হোসাইন খানের অভিমত, দেশের প্রধান এই মহাসড়কের দুরবস্থার জন্য দায়ী মাত্রাতিরিক্ত যান চলাচল ও অতিরিক্ত ওজনবাহী যান চলাচল। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেভাবে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচল করে তাতে লোহা দিয়ে রাস্তা বানালেও টিকবে না। ট্রাকের ওজন বহনের ক্ষমতা ১৫ টন, মালিক-শ্রমিকদের দাবির মুখে ২২ টন পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু চলছে ৫০ টন মালামাল নিয়ে। তারপরও সড়ক টিকবে কী করে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাসড়কে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কিন্তু ঠিকাদার ব্যবহার করেন ৮০ থেকে ১০০ গ্রেডের বিটুমিন। নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের কারণে গরমে তা গলে যায়। এ কারণে সড়কে গর্ত ও ফাটল দেখা দেয়। দুদকের প্রতিবেদনে সওজকে সবচেয়ে অনিয়মগ্রস্ত সরকারী সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সওজের কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, মহাসড়ক ভাঙ্গার কারণ বিকল্প সড়ক না থাকা। পিচ ঢলাইয়ের ৪৮ ঘণ্টা ‘কিউরিং টাইম’ রাখতে হয়। এ সময়ে সড়কে যান চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু বিকল্প সড়ক না থাকায় বাংলাদেশে নির্মাণের পরই রাস্তা খুলে দিতে হয় যান চলাচলের জন্য। ঢাকা-সিলেট ॥ ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৪৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৯০ কিলোমিটার অংশই ভাঙ্গাচোরা। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার অংশে বেশি দুরবস্থা। এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে চায়না কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে ঘুষ সাধেন বলে অভিযোগ তুলেন সচিব নজরুল ইসলাম। যে কারণে চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। ঢাকা-খুলনা ॥ এ দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দূরত্ব ২৭১ কিলোমিটার। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া পর্যন্ত মোটামুটি যান চলাচলের যোগ্য। কিন্তু দৌলতদিয়া থেকে খুলনা পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা করুণ। এর মধ্যে যশোর-খুলনা অংশের ৩৩ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। রাজবাড়ী ও মাগুরা অংশে মেরামতের পরই আস্তরণ উঠে গেছে। এই মহাসড়কের আরেকটি অংশ টঙ্গী থেকে নরসিংদীর পাঁচদোনা পযন্ত। প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে গর্ত এতই বড় যে কয়েকটি কোম্পানি তাদের বিলাসবহুল বাসের চলাচলের পথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল ॥ সড়কপথে ঢাকা-বরিশালের দূরত্ব ২৩৮ কিলোমিটার। এই সড়কে আসল দুর্ভোগ পদ্মার ওপারে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাদারীপুরের কালকিনি পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগই খানাখন্দে ভরা। ইট-খোয়া দিয়ে কোন রকমে মেরামত করার পরও তা টিকছে না। এরপর বরিশালের গৌরনদী থেকে উজিরপুর পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দশা। আট জুনের মধ্যে সড়ক সংস্কারের নির্দেশ ॥ ঈদ সামনে রেখে ৮ জুনের মধ্যে সব রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যানজট নিরসন ও ভোগান্তি কমাতে পুলিশ, সড়ক ও জনপথ এবং স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন, রাস্তাকে চলাচল এবং ব্যবহার উপযোগী রাখতে হবে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে তবে বৃষ্টিকে অজুহাত করে রাস্তার মেরামত কাজ সঠিকভাবে হবে না এটা আমি শুনব না। সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সড়ক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করা নিয়ে আয়োজিত এক সমন্বিত সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ঈদযাত্রা হয়ত ভোগান্তিমুক্ত হবে না, তবে সহনীয় থাকবে- কাদের ॥ স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ॥ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আসন্ন ঈদযাত্রা হয়ত ভোগান্তিমুক্ত হবে না তবে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। মন্ত্রী মঙ্গলবার মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের মেঘনা সেতু সংলগ্ন জামালদিতে ব্রিজ কর্তৃপক্ষের অস্থায়ী কার্যালয়ে আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করা ও টোল প্লাজা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন। ঢাকার সঙ্গে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক । আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, পণ্য পরিবহন ছাড়াও দেশের লাইফ লাইনখ্যাত এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে দেশের প্রায় ১৭ জেলার মানুষ। তবে গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক যানজটে কার্যত অচল হয়ে পড়া এই মহাসড়কের যানজটের তীব্রতা এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ঈদ আসন্ন হওয়ায় যানজট নিয়ে চিন্তিত যাত্রীরা। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে স্বাভাবিক থাকবে পরিস্থিতি। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার সকালে মহাসড়কের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের মেঘনা সেতু এলাকায় আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করা ও টোল প্লাজা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদযাত্রা হয়ত ভোগান্তিমুক্ত হবে না তবে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, আগামী ঈদে ভাঙ্গা রাস্তার জন্য যাতে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি না হয় সেজন্য জুন মাসের ৮ তারিখের মধ্যে রাস্তা মেরামতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দরকার হলে দিনের পাশাপাশি সারারাতও মেরামত কাজ চলবে। এক্সেল লোড স্টেশনের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঈদের সময় টোল সংক্রান্ত ভোগান্তি বা দুর্নীতির তথ্য পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও ঈদের আগের চারদিন আর পরের চারদিন ২৪ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন চালু থাকবে। আর উল্টা পথে ভিআইপি আসলে তাদেরও আটকে দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এর আগে তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশ পরিদর্শন করেন। এ সময় সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান, সংসদ সদস্য লিয়াকত আলী খোকা, সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূইয়া, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুসহ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×