নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২১ মে ॥ বাউফলে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। মাত্র ৮ থেকে ১০ জন লোক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে নির্বিঘেœ মাদক বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে খুচরা বা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাকে গ্রেফতার করলেও প্রধান হোতাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেননি। জানা গেছে, উপজেলার কালাইয়া, চন্দ্রদ্বীপ, কালিশুরী, কেশবপুর, দাশপাড়া ও বাউফল পৌর এলাকায় মাত্র ৮-১০ জন চিহ্নিত ব্যক্তির মাধ্যমে মরণ নেশা ইয়াবা ও গাঁজা সরবরাহ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কালাইয়া ২ জন, চন্দ্রদ্বীপ ১ জন, কালিশুরী ১ জন, কেশবপুর ১ জন, দাশপাড়া ২ জন ও পৌর শহরে ২ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। এরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মাদক ব্যবসা করছে। এক গ্রুপ পৌর সভাকেন্দ্রিক ও অপর গ্রুপ নিজ নিজ এলাকাকেন্দ্রিক ব্যবসা করছে। এদের আবার খুচরা ও ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতা রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করে মাদক বিক্রি করে। আবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ক্রেতার কাছে মাদক পৌঁছে দেয়।
এখানে এক ইয়াবা বিক্রি হয় আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকার মধ্যে। সরবরাহ কম থাকলে দাম একটু বেশি নেয়া হয়। এক পুড়িয়া (এক পোটলা) গাঁজা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। বাউফল শহরের কাগুজী পুল, বাসস্ট্যান্ড, মুসলিম পাড়া, নীলক্ষেত রোড, গোলাবাড়ি, গার্লস স্কুল রোড, হাই স্কুল রোড, হাই স্কুল অডিটরিয়াম, বকুলতলা, দাশপাড়া সাহাপাড়া রোড ফুলতলা, হাসপাতাল ঘাটলা, এমপির ব্রিজ, বাংলাবাজার, টিএ্যান্ডটি রোড, আতাহার গাজী ব্রিক ফিল্ডের সামনে, শেরে বাংলা সড়ক, বাংলালিংক টাওয়ারের কাছে, কালাইয়া কোটপাড়, গফুর মিয়ার দাগ, ল্যাড়া মুন্সীর পুল, বেইলি ব্রিজ, বটতলা, দাশপাড়া চৌমুহনী, বিলবিলাস বাজার, হোসনাবাদসহ উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক পয়েন্টে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করা হয়। সম্প্রতি বাউফল থানার পুলিশ কালাইয়া কোর্টপাড় থেকে জসিম প্যাদা নামের এক মাদক বিক্রেতাকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। ওই বিক্রেতা তার নিজের বাসায় বসে ইয়াবা বিক্রি করত। পুলিশসহ অন্যান্য ঝামেলা এড়াতে তার বাসার চারদিকে, সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে আগন্তুকদের গতিবিধি লক্ষ করা হতো। জসিম প্যাদা বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তার ব্যবসা চলমান রয়েছে। বাউফলের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন। পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অথবা প্রেমিকের প্ররোচনায় তারা মাদক সেবন করছেন। আর এই মাদক ক্রয়ের টাকার জন্য বেড়েছে নানা অপরাধ প্রবণতাও। পারিবারিক কলহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পৌর শহরের মাদক বিক্রেতা সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে। প্রথমে বিনা পয়সায় তাদের মধ্যে ইয়াবা সরবরাহ করে আসক্তি বাড়ায়। এরপর তাদের কাছে নগদ টাকায় ইয়াবা বিক্রি করে। এর প্রভাবে শহরে কয়েকটি পরিবারের মধ্যে মারাত্মক অশান্তি চলছে। টাকার জন্য ওই সব পরিবারের সন্তানরা বাবা-মাকে মারধর করে। বাড়িঘর ভাঙচুর করে। তারা লোকলজ্জার ভয়ে প্রকাশ করতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদিচ্ছা থাকলে মাদক নির্মূল করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
পটিয়ায় ইয়াবার ছড়াছড়ি
নিজস্ব সংবাদদাতা পটিয়া থেকে জানান, হঠাৎ করে চট্টগ্রামের পটিয়ায় ইয়াবার ছড়াছড়ি হয়েছে। উপজেলা ও পৌর সদরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এসব ইয়াবা মিলছে। মূলত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়ক পৌর সদর হয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক পথে দ্রুত পটিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ও মাদক বিক্রেতারা পটিয়ায় সক্রিয়। পুলিশ প্রায় সময় মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলেও পরবর্তীতে তারা জামিনে বেরিয়ে পুনরায় রমরমা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রবিবার রাত ১২টায় পটিয়া থানা পুলিশ পৃথক দু’টি অভিযান চালিয়ে ১৮ হাজার ইয়াবাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ ময়মনসিংহ জেলার পানিহরি গ্রামের মোঃ খোকন ড্রাইভারের পুত্র মোঃ আল আমিন ও কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সিরাজুল হকের পুত্র মোঃ ফয়সাল আহমদ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ৩৬ লাখ টাকা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়ক পটিয়া উপজেলা সদর হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন পরিবহনে করে পটিয়া সদর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ছে। উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, খরনা, শোভনদন্ডী, কচুয়াই, ভাটিখাইন, কুসুমপুরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট, হাবিলাসদ্বীপ, কোলাগাঁও, আশিয়াইশ, জিরি ছাড়াও পৌর সদরের কাগজি পাড়া, রেল স্টেশন এলাকা, গোবিন্দারখীল, পোস্ট অফিসের পিছনে, বাসস্টেশন এলাকাসহ অন্তত এক দেড়শ স্পটে পাইকারি ও খুচরা ইয়াবা বিক্রি চলছে। পটিয়া থানার উপ-পরিদর্শক চট্টগ্রামমুখী শ্যামলী পরিবহনের চেয়ার কোচ ও একটি খালি ট্রাকে অভিযান চালিয়ে ১৮ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেন। প্রায় সময় উপজেলার খরনা ইউনিয়নের রাস্তার মাথা এলাকা থেকে এসআই আরিফুর রহমান সরকার বিভিন্ন পরিবহন থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেন।