ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ শাখার প্রকল্প নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ

বাংলাকে বিশ্বব্যাপী সহজ আর শুদ্ধরূপে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২২ মে ২০১৮

বাংলাকে বিশ্বব্যাপী সহজ আর শুদ্ধরূপে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ

ফিরোজ মান্না ॥ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবার বাংলা ভাষাকে বিশ্বব্যাপী সহজ ও শুদ্ধভাবে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলা যাতে বিশ্বের মানুষের কাছে আরও গুরুত্ব বহন করে তার জন্য ডাক ও টেলিযোগোযোগ বিভাগ ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধকরণ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের অধীনে ১৬ শাখা (কম্পোন্টেট) রয়েছে। মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক ও হোয়াটস্এ্যাপে বাংলা যুক্ত হওয়ার পরই মন্ত্রণালয় এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য জানিয়েছেন। মোস্তাফা জব্বার বলেন, মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ও ভারত উপমহাদেশে বাংলাভাষীদের সুবিধার্থে অত্যাধুনিক অনুবাদক প্ল্যাটফর্ম ‘মাইক্রোসফট ট্রান্সলেটর’ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে আরও আগে। পরে ফেসবুক হটসএ্যাপে বাংলা যুক্ত হয়। বিশ্বে বাংলাভাষীদের জন্য বড় ধরনের সুবিধা তৈরি করেছে। আমরা বাংলাকে শুদ্ধ করে প্রচারের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। প্রকল্পে একজন পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিছু লোক কাজও শুরু করেছে। বিশ্ব জুড়ে বাংলাকে ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাকে অনেক আগেই জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের কাছে আমরা বাংলাকে দাফতরিক ভাষা করার জন্য আবেদন জানিয়েছি। এটা সময়ের বিষয় মাত্র। যে কোন সময় জাতিসংঘ বাংলাকে দাফতরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে। এটা করার বিষয়েও মন্ত্রণালয়ের হাতে নেয়া প্রকল্পের ভূমিকা থাকবে। মন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের চলতে হবে। বাংলা ভাষাকে সহজ ও শুদ্ধভাবে প্রচার করার জন্য নানা ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা এসব সফটওয়্যার কিনছেন। অনেক দেশের মানুষ বাংলা ভাষা শিখছেন। সিয়েরালিয়নে তো দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বজুড়েই ভাষা শেখার একটা প্রবণতা রয়েছে। মানুষ যেমন ইংরেজী শেখেন-তেমনি বাংলাও অনেক জাতি গোষ্ঠী শিখছেন। মন্ত্রণালয়ের হাতে নেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষার প্রসার ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটে বাংলা যুক্ত হওয়ায় বাংলাভাষীদের জন্য সুবিধা আরও বেড়েছে। মাইক্রোসফট বাংলাদেশ অফিস সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মাইক্রোসফট ট্রান্সলেটরে বাংলা ভাষা যুক্ত করা হয়েছে। বিশে^র সব মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ভাষার বৈচিত্র্য হবে বিশ^জনীন। এতে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে না। বরং যোগযোগ আরও দৃঢ় হবে। বিশ^ব্যাপী সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তিগতভাবে যেন মোবাইল ফার্স্ট-ক্লাউড ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি অনায়াসে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ। স্থানীয়, পর্যটক কিংবা বিশে^র যে কোন মানুষ উইন্ডোজ, এ্যান্ড্রয়েড, কিন্ডল ও আইওএস ডিভাইসে মাইক্রোসফট ট্রান্সলেটর এ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। মোবাইল এ্যাপ কিংবা ওয়েবে গিয়ে মাইক্রোসফট ট্রান্সলেটর লাইভ ফিচারের মাধ্যমে নয়টি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করার সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীরা। গ্রাহক সহায়তা ও সেবা, ওয়েব লোকালাইজেশন বা স্থানীয়করণ, প্রশিক্ষণ বা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের উদ্দেশে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো অনায়াসে তাদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মাইক্রোসফটের ট্রান্সলেটর টেক্সট এপিআই যুক্ত করতে পারবে। প্ল্যাটফর্মটিতে বাংলা ভাষা যুক্ত করার ফলে বিশে^র অন্যান্য দেশ এখন বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। মাইক্রোসফট ট্রান্সলেটরে সমর্থনযোগ্য ষাটটিরও বেশি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় লিখিতভাবে যোগাযোগ করতে পারবেন বাংলাভাষীরা। সর্বোপরি, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। বিং-এর আউটলুক মাইক্রোসফট ট্রান্সলেটর, কর্টানা, এজ, শেয়ারপয়েন্ট ও ইয়ামারে মাইক্রোসফট ট্রান্সলেটর ইতিমধ্যে যুক্ত করা হয়েছে। ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট কিংবা পিডিএফ ফাইলে অনুবাদ করতে চাইলে ‘ডকুমেন্ট ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তা অনায়াসে করা যাবে। ‘ডকুমেন্ট ট্রান্সলেটর’ একটি ওপেন-সোর্স বা মুক্ত এ্যাপ্লিকেশন যা জিটহাব থেকে ব্যবহারযোগ্য। মূলত ষাটটির বেশ ভাষা থেকে যে কোন টেক্সট বা লিখিত ডকুমেন্ট বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা যাবে। পুরো পদ্ধতিটি অনেক কম সময়ে ও কম খরচে সম্পন্ন করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।
×