ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে সর্বস্ব হারিয়ে প্রতি ফ্লাইটেই ওরা আসছে ॥ যৌনদাসত্বের শিকার নারীরা!

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২২ মে ২০১৮

সৌদিতে সর্বস্ব হারিয়ে প্রতি ফ্লাইটেই ওরা আসছে ॥ যৌনদাসত্বের শিকার নারীরা!

আজাদ সুলায়মান ॥ প্রতিদিনই ফিরছে ওরা। কখনও দলবেঁধে, কখনও একাকী পালিয়ে। যে যেভাবে পারছে, ফিরছে। ফেরার অপেক্ষায় হাজার হাজার নারী। সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রদেশের বাসাবাড়িতে ওদের দিয়ে কাজের নামে অনৈতিক কাজ করানো হচ্ছে। সবাই মুখ খুলে বলতে পারে না। এ না পারাটাই পুঁজি করছে মানব পাচারকারীরা। সুযোগ নিচ্ছে ওদের মুখ থেকে যৌন নির্যাতনের কথা না ওঠায়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে- যারা ফিরছে সবাই যৌনদাসত্বের শিকার হয়েই। হজরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে নেমে গণমাধ্যম, মানবাধিকার কর্মী ও পুলিশের কাছে তারা যৌন নির্যাতনের ভয়ঙ্কর বর্ণনা দিচ্ছেন পরোক্ষে। কি আর বলব। মুখে বলার নয়, বুঝে নিন। রাতভর বাসায় যেভাবে নির্যাতন করা হয়, যেভাবে বন্দী জীবন কাটাতে হয়; সেটা বললে তো বাড়িতেও মুখ দেখানো যাবে না- বলছিলেন দিনাজপুরের মালিহা (ছদ্মনাম)। তার মতো এমন অন্তত কয়েক শ’ নারী সৌদি থেকে ঢাকায় ফিরেছে দু’সপ্তাহে। শুধু শনিবার ও রবিবার রাতেই ফিরেছেন দুই শতাধিক। আগামীকালও ফিরবেন আরও ৭৮ জন। এদের অভিযোগ নিয়ে সরকারের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তেমন কোন মন্তব্য করতেও অনিচ্ছুক। তবে এ ধরনের অভিযোগ সবক্ষেত্রে সঠিক নয় উল্লেখ করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, আমরা যে নির্যাতনের অভিযোগগুলো পাই তার ভিত্তিতে সৌদি সরকারকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রশ্ন করায় তারা আমাদের জানিয়েছে, ৪৫ শতাংশ নারী চুক্তি ভেঙ্গে দেশে ফিরে এবং সেটা ঘটে তিন মাসের ভেতর। যারা ফিরছে তাদের পক্ষ থেকে করা শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ সব সময় সত্য নয়। আমি নিজে সেটি জানি। অনেক সময় নারীরা বিদেশে যাওয়ার তিন মাস না পেরোতেই ফিরে আসার জন্যও এমন অভিযোগ করে থাকেন। তবে জনশক্তি ও কর্মস্ংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তারা সরকারী-বেসরকারীভাবে যাওয়া শ্রমিকদের দায় নেবে না। কিন্তু যে বিশালসংখ্যক নারী অবৈধভাবে যান, তাদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় পড়ে যায়। বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, প্রতিদিনই সৌদি আরব থেকে শ্রমিকশ্রেণীর নারী ফিরছে। তারা ইমিগ্রেশন কাউন্টারে কোন অভিযোগ না করলেও বাইরে গিয়ে সবই বলছে। কেউ স্ব্চ্ছোয় ইমিগ্রেশন কাউন্টারেই একাকি বলতে থাকে তাদের দুঃখের কথা। ফিরে আসা এমন শ্রেণীর নারীর সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। তিন দিনেই এসেছে তিন শতাধিক। রবিবার রাত সাড়ে ১০টায় আসছেন আরও ২১ জন। তাদের কজন হলেন- ঢাকার ময়না, গাজিপুরের ফজিলা, সিলেটের রেবা, মৌলভীবাজারের লিলি আক্তার, হবিগঞ্জের রবীনা ও খাইরন্নেসা, কেরানীগঞ্জের ঝর্না ও নবাবগঞ্জের সালেহা। রবিবার রাতে এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারা অবতরণ করেন। তারা সবাই অমানবিক নির্যাতন সইতে না পেরে সৌদির ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে (সেইফ হোম ) আশ্রয় নেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় এই নারী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এর আগে শনিবার সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন ৮৩ নারী শ্রমিক। ফিরে আসা এই নারী শ্রমিকের মধ্যে রয়েছেন টঙ্গীর মালিহা, রূপগঞ্জের সাথী, ভোলার জোসনা, কেরানীগঞ্জের মলিকা, বরগুনার শাহনাজ, কক্সবাজারের শাকিলা, দিনাজপুরের মনজুরা বেগম, ফরিদপুরের মাজেদা বেগম, নওগাঁর শম্পা ও কিশোরগঞ্জের জয়নাবা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা জানান, সৌদি আরবে প্রতিনিয়ত তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাকে আটকে রেখে ইলেকট্রিক শক দেয়ার পাশাপাশি রড গরম করে ছেঁকা পর্যন্ত দেয়া হয়। রাতে সাহেবের ইচ্ছামতো সবই করতে হয়। না করলে মাথার চুল কেটে দেয়া হয় যাতে ঘরের বাইরে অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করতে না পারে। দিনাজপুরের মনজুরা বেগম বলেন, আমার পাসপোর্টসহ ইজ্জত-সম্মান সব দিয়ে এসেছি। মালিকের নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের দূতাবাসে যাই। দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে আসি। একই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন রাজধানীর লালবাগের নারী শ্রমিক সুমাইয়া কাজল। তিনি বলেন, দুদিন কাজ করার পর মনে হয়েছে আমাকে ওরা কিনে নিয়েছে। আমি বিক্রি হয়ে গেছি। যা ইচ্ছা তাই করাত আমাকে দিয়ে। আমার মতো অনেক নারী এখনও সৌদিতে বন্দী আছে। অন্যের কথা কি কমু। নিজেরই মনে হচ্ছিল,আমি বিক্রি হয়ে গেছি। আল মনসুর ওভারসিজ আমাকে ওদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। দালালের খপ্পরে আমার আজ এই দশা। এর আগে গত শুক্রবার রাতে সৌদি আরবের দাম্মামের একটি ক্যাম্পে আটক থেকে দেশে ফেরার পর সুমাইয়া কাজল নামের এক নারী বলেন, কি বলব এসব। সব কথা বলতে পারব না। পত্রিকায় ছাপা হলে মুখ দেখাব কি করে। তারপরও ওদের শাস্তি চাই। আমার মতো যেন আর কোন মেয়ে মানুষ এভাবে বিদেশ না যায়। এরচেয়ে দেশে মানুষের বাড়িতে কাজ করাও অনেক ভাল। আসলে ওরা আমাদের মানুষ মনে করে না। জানোয়ার মনে করে। সারাদিন কাজ করার পর রাতে দেয় একটা রুটি। অনুরোধ করে ভাত চাইলে কোন কোন দিন ভাত দেয় আলাদা রান্না করা তরকারি দিয়ে। কাঁচা মাছের তরকারি খেতে হতো। কিভাবে কোন্ বাসায় এমন নির্যাতন করা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কোন এলাকায় ছিলাম তা কেউ জানায়নি। যে বাড়িতে ছিলাম সেই বাড়ির মালিকের নাম জানার কোন সুযোগ নেই। বাড়ির ছেলেমেয়ে সবাই খারাপ। ভাষা বুঝতাম না। ইংরেজীতে যতটা পারি কথা বলার চেষ্টা করেছি। সেটাও তারা বোঝে না। তিনতলা বাড়ির পুরো কাজ আমাকে একাই করতে হবে জেনে ভয়ে শিউরে উঠি। দুদিন কাজ করার পর মনে হয়েছে আমাকে ওরা কিনে নিয়েছে। আমি বিক্রি হয়ে গেছি। আল মনসুর ওভারসিজ আমাকে ওদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। দুদিন পর অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে চিকিৎসা না করিয়েই একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, আমার আল মনসুর ওভারসিজ এ্যান্ড ট্রাভেলস সৌদি আরবে মানুষ পাঠায়। সেখানে ট্রাভেলস এজেন্সির নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্যাম্পে রাখা হয় বাংলাদেশী নারী শ্রমিকদের। তারপর আকামা কার্ড (শ্রমিক পরিচিতি কার্ড) পাওয়ার পর এক মালিকের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। সেখানে তিনতলা বাসা ধোয়া ও মোছার কাজ করতে হতো। থালাবাসন ধুয়ে পরিষ্কার করাসহ যখন যে কাজ বলেছে কোন কথা না বলেই সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করতে হয়েছে। দুদিন কাজ করার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে আল খোবার এলাকার একটি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সুমাইয়া বলেন, আমরা কোথায় আছি জানার জন্য প্রীতি আপাকে ছবি তুলে ও ভিডিও করে পাঠাই। তার সহায়তায় আজ নিজ দেশে ফিরেছি। শাহজালাল বিমানবন্দরে বোনকে নিতে আসা সুমাইয়া কাজলের ভাই মোঃ সজল জানান- তার বোন গত ২৩ এপ্রিল সৌদি আরবে যান। তারপর তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। যখন খোঁজ পেলাম তখন সে অসুস্থ। তাকে আসতে দেয়া হচ্ছিল না। সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতির সহযোগিতায় তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তার সহযোগিতায় আজ বোনকে ফিরে পেলাম। ক্যাম্পেও নির্যাতন করা হয়েছে জানিয়ে সুমাইয়া বলেন,ক্যাম্পের ভেতরে উগান্ডার মেয়েদের পাহারায় বসিয়ে রাখত। আমরা দেশে আসতে চাইলে মারধর করত। লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে অনেককে। পিংকির মাজায় লাঠি দিয়ে মেরেছে ট্রাভেল এজেন্সির দালালদের নিয়োগ দেয়া উগান্ডার এক নারী। কিভাবে-কার মাধ্যমে সৌদি যাওয়া হয়েছিল প্রশ্ন করা হলে সুমাইয়ার ভাই বলেন- বনানীর গাফফার নামের এক দালালকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বোনকে সৌদি আরব পাঠাই। বাকি টাকা কাজ করে বোনের মাধ্যমে দিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে এমন পরিস্থিতি হবে তা বুঝতে পারিনি। গত সপ্তাহে দেশে ফেরা এক যুবতী জানান, তার বয়স কমিয়ে সেখানে পাঠানো হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সি স্টামফোর্ড (আরএল-১৩৫২) এর মাধ্যমে গত ২০ এপ্রিল সৌদি গিয়ে ২০ দিন গৃহকর্তার নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তার অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে সৌদিতে তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল ওই এজেন্সি। এর আগে এ মাসের শুরুতে ব্র্যাক মাইগ্রেশন তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে অভিযোগ দেন তার দুই মেয়ে। মেয়ে দুটোর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, রিক্রুটিং এজেন্সি স্টামফোর্ডের মাধ্যমে গত ২০ এপ্রিল সৌদি আরব যান তাদের মা; এরপর থেকে কোন যোগাযোগ নেই। এরপর গত ১ মে ইন্টারনেট নম্বর থেকে এক বাংলাদেশী ফোন করে জানান, তাদের মা মারা গেছেন। একথা শোনার পার তার দুই মেয়ে ওই এজেন্সির অফিসে যোগাযোগ করলে উল্টো তাদের হুমকি দেয়া হয় এবং মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সারাদিন অফিসে বসিয়ে রাখা হয়। এ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নারীর পাসপোর্ট তৈরি করেছিল ওই এজেন্সি। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্মসাল ১৯৭৫ হলেও পাসপোর্টে লেখা হয় ১৯৮২। তার মতো এমন অনেক নারীকেই গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে পাঠানো নারী শ্রমিকদের প্রায় সবারই বয়স কমিয়ে দেখানো হয়। নারীদের না পাঠানোর দাবি ॥ তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফেরা নারীর অধিকাংশই বিমানবন্দরে নেমেই সৌদিতে আর কোন নারী শ্রমিক না পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন। শ্রীমঙ্গলের মার্জিয়া (ছদ্মনাম) সাংবাদিকদের বলেন-কিছুতেই কোন বাংলাদেশী নারীকে সেখানে পাঠানো উচিত নয়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করে যারা নারী শ্রমিক পাঠানোর ওকালতি করেন তাদের মুখে থুথু মারি। ওরা আমাদের পাঠায় কেন? ওদের মা-বোনদেরকে পাঠিয়ে দেখুক কিভাবে তাদের দিয়ে কি কাম করায়। মানবপাচারকারী প্রতিষ্ঠান ও দালালদের উদ্দেশে তিনি বলেন- খুব বেশি নয়। ঢাকায় মাত্র ৫০/৬০ দালালই সারাদেশ থেকে গরিব ও অসহায় পরিবারগুলো বাছাই করে টার্গেট করে। কম পয়সায় পাঠানো আর ভাল বেতনভাতাদির স্বপ্ন দেখিয়ে আমার মা-বাবাকে রাজি করায়। তারপর সেখানে গিয়ে চাকরির নামে আমাদের যেভাবে বিক্রি করা হয়েছে তা মুখে বলার মতো নয়। নাজমা হাসি নামের এক নারী বলেন, আমি এক বছর ওমানে কাজ করার পর সৌদি যাই। আমি কিছুটা আরবী পারতাম। সেজন্য সৌদির ভাষা কিছুটা বুঝি। যে কারণে সেখানে আমার মতো নারীদের কিভাবে জিম্মি করা হয় সেটা সহজেই বুঝতে পারি। আসলে সৌদির অবস্থা এখন অনেক খারাপ। নারীদের নির্যাতন করা হয় নানা কারণে। বেতন চাইলেও মারধর, খাবার চাইলেও কিল-ঘুষি, সাহেবের কথামতো সব কিছু না করলেও বাপ-বেটার শিকার হতে হয়। আমার মতো হাজার হাজার নারীরই এই অবস্থা। তাদের দুঃখের সীমা নেই। এগুলো নীরবে মেনে নিয়ে শুধু পেটের দায়ে অনেকে মুখবুঁজে সহ্য করছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই কোন কোন মালিক ইচ্ছে করেই পুলিশে অভিযোগ করে ধরিয়ে দেয়। আমার ৩ মাসের বেতন দেয়নি। আমরা এই বিমানে এসেছি ৭০-৮০ জনের মতো। রিয়াদের কারাগারে আছে আরও ৪০ জনের মতো। জেদ্দায়ও আটক আছে অনেক নারী । নাজমার মতো আরেক অসহায় নারী চাঁদপুরের মৌমিতা। তিনি জানান, আরবদের ভাষা জানা ছিল তার। গত ১৪ এপ্রিল তিনি সৌদি আরব যান। সেখানে যাওয়ার পর তাকে ১৫ দিনের মতো বিমানবন্দরেই রাখা হয়েছিল। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে। যে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তাকে ফোন করে বিষয়টি জানালে সে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেয়। মৌমিতার ভাষ্য, আমাকে প্রথমে বলেছে এক হাজার রিয়াল বেতন দেবে। কিন্তু কাজের চুক্তি করার সময় দেখি ৮০০ রিয়াল। তারপরও কাজ করলাম। তবে মালিকের ব্যবহার ছিল খুব খারাপ। কথায় কথায় গালি দিত। আরবীতে বলত, মিসকিন, তোরা মিসকিন। আমাদের কিনে নিয়েছে, অনেক টাকা দিয়ে এনেছে, এসব কথা বলত। মারধরের সময় তার মালিক হাত দিয়ে কান বরাবর আঘাত করত। শেষ পর্যন্ত একদিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাসা থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে চলে যান। সেখানে খাবার থেকে শুরু করে সব রকম সহায়তা দূতাবাস থেকে করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার পাসপোর্ট মালিক রেখে দিয়েছে, ফেরত দেয়নি। দূতাবাস আউটপাস দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। যা বললেন ড. নমিতা হালদার ॥ এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এই যে মেয়েরা আসছে সেটা সরকারেরই বিশেষ প্রক্রিয়া। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাদের সেফ হোমে রাখছে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। যারা আসছে সেটা তো এই পদ্ধতিতেই। ড. নমিতা হালদার বলেন, সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এসব নারীকে ঈদের আগে বিশেষ ঘোষণায় দেশে পাঠানোর সুযোগ দিয়েছে। এখন অনেকেই তো অনেক কিছু বলছে। তাদের অভিযোগ অতীতেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখনও করা হবে। বছরই ধরেই তো প্রতি সপ্তাহে এক-দুটো অভিযোগ পাওয়া যায়। সবই এড্রেসড করা হয়। দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সিকে ডেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। অপরাধের ধরন দেখে শাস্তিও দেয়া হয়। উল্লেখ্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়-প্রতিবছরই সৌদিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন; যা মোট অভিবাসনের ১৩ শতাংশ। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিকদের অভিবাসনে বাধা দেয়া হলেও পরে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে তা কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশ। কিন্তু ২০১৬ সালে অভিবাসী নারী শ্রমিকের সংখ্যা নেমে আসে ১৬ শতাংশে এবং ২০১৭ সালে ১৩ শতাংশে। এর বাইরে কত নারী কী উপায়ে বিদেশ গেছেন সে পরিসংখ্যান নেই। প্রবাসী নারী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকা এবং এজেন্টদের ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে বিদেশে ঘটছে দুর্ঘটনা, মেয়েদের জীবন পড়ছে শঙ্কায়। এখনই যদি এক্ষেত্রে লাগাম টেনে ধরা না হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
×