ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর ভোগ্যপণ্য বাজারের তেজিভাব কমে এসেছে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২২ মে ২০১৮

রাজধানীর ভোগ্যপণ্য বাজারের তেজিভাব কমে এসেছে

এম শাহজাহান ॥ রোজা শুরুর তিনদিনের মাথায় ঢাকায় সবজিসহ ভোগ্যপণ্য বাজারের তেজিভাব কমে এসেছে। দাম কমে ভিআইপি পণ্য বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০-৬০ টাকা। রোজা শুরুর দিন এই বেগুন কিনতে ভোক্তাকে ৮০-১০০ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। বেগুনের মতো শসা, টমেটো, কাঁচা মরিচ ও গাজরও জাত ও মানভেদে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। মজুদকৃত পণ্য বাজারে চলে আসায় বেশির ভাগ্য ভোগ্যপণ্যের দাম না বেড়ে অপরিবর্তিত রয়েছে। শীঘ্রই ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম কমার আভাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিতে ৫০ টাকা কমে ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। পেঁয়াজ, খেজুর, ছোলা, মুড়ি, চিনি, ডাল ও ভোজ্যতেলের দামও বাড়েনি। তবে সব ধরনের মাছ ও মাংসের দাম চড়া। সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। প্রতিকেজি গরু ৪৮০-৫০০, খাসি ৭৫০-৮০০ এবং ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের দেশী ও সামুদ্রিক মাছ। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও মাছের দাম। আর গরুর মাংসের দাম বাড়ানো হয়েছে সিন্ডিকেট করে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে গরুর মাংসের দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, রমজান সামনে রেখে এবার প্রচুর বিদেশী ফল আঙ্গুর, আপেল, খেজুর, আনার, নাসপাতি আমদানি হয়েছে। একই সঙ্গে আম, লিচু, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের দেশী মৌসুমি ফলে বাজার ঠাসা। এ কারণে ফলমূলের দাম বাড়েনি। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি আপেল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১৫০, মাঝারি মানের খেজুর ১২০-৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া প্রতি শ’ লিচু ২৫০-৩৫০ এবং প্রতিকেজি হিমসাগর আম ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটামুটি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় এবার রোজাদাররা ইফতারিতে প্রচুর পরিমাণ ফলমূল খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর ফলে তৈলাক্ত জাতীয় খাবার বিশেষ করে ভাজাপোড়া খাবারের চাহিদাও অন্যবারের চেয়ে কমে গেছে। চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে এ ভাজাপোড়া খাবার বর্জন ও অধিক পরিমাণে দেশী ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে সাধারণ রোজাদারদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে। এদিকে রোজার শুরুতেই পেঁয়াজের দাম একটু বাড়লেও এখন স্থিতিশীল রয়েছে। হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ কারণে জাত ও মানভেদে ৩৫-৫০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় আপাতত পেঁয়াজের দাম আর বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি ও মজুদ থাকায় ছোলা, চিনি, খেজুর, ভোজ্যতেল, ও ডালের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই। বরং পনের রোজার আগে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য বাজারে ছাড়া সম্ভব না হলে অনেক ব্যবসায়ীরা মুনাফা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তান বাজারের জামশেদ স্টোরের কর্মকর্তা আবদুল গনি মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, রোজা শুরুর আগে যেসব ছোলা, খেজুর, ডাল ও চিনি আনা হয়েছে তা এখনও বিক্রি করা হচ্ছে। রোজার শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে এসব পণ্যের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এরপর চাহিদা কমতে থাকে। অন্যদিকে ছোলা ও খেজুরের মতো পণ্য শুধু রমজানে বেশি চলে। অনেক ভোক্তা ইতোমধ্যে সারা মাসের বাজার করে ফেলেছেন। এ কারণে চাহিদাও কমতে থাকবে। এদিকে বেসরকারী পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণ ভোগ্যপণ্যের আমদানির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবি থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ট্রাকসেলে ভোগ্যপণ্য সামগ্রী কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ টিসিবির পণ্য সামগ্রী কিনতে পারছেন। এতে বাজারের ওপর চাপ কমেছে। টিসিবির তথ্যমতে, প্রতিকেজি ছোলা ৬৫-৮০, এ্যাংকর ডাল ৪৫-৫৫, মুগডাল ৯০-১৫০, ডাল নেপালী ১০০-১১০, ডাল দেশী ৯০-১০০, ডাল তুরস্ক কানাডা মোটা দানা ৫৫-৬৫, ডাল তুরস্ক-কানাডা মাঝারি মানের ৭০-৮০, ভোজ্যতেল খোলা প্রতিলিটার ৮৫-৮৮, বোতল পাঁচ লিটার ৪৮৫-৫২৫, পামওয়েল লুজ ৭০-৭২, পামওয়েল সুপার ৭৩-৭৫ টাকা ও চিনি ৫৮-৬২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চড়া মাছ ও মাংসের বাজার ॥ রোজা শুরুর আগে থেকে চড়া মাছ ও মাংসের বাজার। দেশীয় জাতের সব ধরনের মাছের দাম এখন বেশি। পুঁটি, ডেলা, মলা এমনকি কাচকি মাছের দামও বেশি। প্রতিকেজি রুই মাছ ২৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। আকার ও সাইজভেদে প্রতিকেজি চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের একটি ইলিশ কিনতে ভোক্তাকে খরচ করতে হচ্ছে ১২শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা। মাছের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। মাংসের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা এই ব্রয়লার মুরগি। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস দেশী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। এছাড়া পাকিস্তানী ও ককটেল মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিজোড়া ৫০০ টাকা পর্যন্ত। গত কয়েক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম চড়া। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তান বাজারের মুরগি বিক্রেতা হাবিবুর রহমান জানান, চাািহদার তুলনায় সরবরাহ কম। এছাড়া পাইকারি মার্কেটে যা আসছে তার দামও বেশি। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গরু ও খাসির মাংস বিক্রেতারা বলছেন, রোজা সামনে রেখে আগেই আস্ত গরু ও খাসির দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে গাবতলীর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ ও হাসিল ধার্যের হার কমানো হলে মাংসের দাম কমে আসবে।
×