ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তথ্যের ভিত্তিতেই চলছে সাঁড়াশি অভিযান;###;আন্তর্জাতিক মাফিয়া, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও পার্শ্ববর্তী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যোগসূত্র

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ॥ ছয় দিনের অভিযানে ১৮ জন নিহত

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ মে ২০১৮

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ॥ ছয় দিনের অভিযানে ১৮ জন নিহত

গাফফার খান চৌধুরী ॥ মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- পরিকল্পিতভাবে ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা চলছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এমন ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে মাদকপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিতি পাইয়ে দেয়ার কাজটিও চালিয়ে যাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। দেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটানো সম্ভব হলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ যেমন মেধাশূন্য হবে, তেমনি দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাবে, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়বে। সেই সুযোগে আন্তর্জাতিক মাফিয়া, স্বাধীনতাবিরোধী ও পার্শ্ববর্তী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো দেশের ভেতরে ঘাঁটি গেড়ে বসবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই সরকার মাদক নির্মূলে সারাদেশে যৌথ সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে গত রবিবার রাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৯ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র। এ নিয়ে গত ছয় দিনের অভিযানে সারাদেশে ১৮ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলো। নিহতদের অধিকাংশই ইয়াবা, হেরোইন ও কোকেনের মতো মারাত্মক মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা মাদকের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল। নিহতদের বিরুদ্ধে একাধিক খুন, অপহরণ ও মাদকের মামলা আছে। দেশকে মাদকমুক্ত না করা পর্যন্ত এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া এবং সর্বশেষ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের কারণে দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্ব দরবারে রীতিমতো জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এই ধারা ধরে রাখতে সরকারের তরফ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এমন সার্বিক উন্নয়নে সরকারবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীসহ পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশ মারাত্মকভাবে অখুশি। বাংলাদেশের উন্নয়নের এ ধারা নষ্ট করে দিতে চলছে নানামুখী অপতৎপরতা। তারই অংশ হিসেবে পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশ বাংলাদেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশটির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এ খাতে প্রচুর অর্থ খরচ করছে। তাদের এবং সরকারবিরোধীদের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলাদেশকে মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। মিয়ানমারে তাদের অর্থায়নে ইয়াবা তৈরির জন্য রীতিমতো ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। সেই ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত ইয়াবা নানাভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অলি-গলিতে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ইয়াবা। তাৎক্ষণিকভাবে এর মারাত্মক প্রভাব লক্ষ্য করা না গেলেও অদূর ভবিষ্যতে ইয়াবার কারণে দেশ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক বিপদে পড়তে পারে। কারণ ইয়াবা পাচার করে মাদক ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। চাহিদা যত বাড়ানো যাবে, স্বাভাবিকভাবেই অর্থ পাচারের পরিমাণও তত বাড়বে। সেই লক্ষ্য নিয়ে তারা বেপরোয়াভাবে দেশের ভেতরে ইয়াবা সরবরাহ করে যাচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হচ্ছে। যা দেশকে অদূর ভবিষ্যতে মেধাশূন্য করে ফেলবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই দেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, যশোর, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, নরসিংদী ও গাজীপুরে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধে রবিবার রাতে নয় মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। নিহতদের সবাই ইয়াবা, হেরোইন ও কোকেনের মতো অত্যন্ত দামি ও ভয়ানক মাদকের ব্যবসায়ী ছিল। যশোর থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, যশোরের খোলাডাঙ্গা, ম-লগাতির মাঝামাঝি স্থান ও তরফনওয়াপাড়ায় বন্দুকযুদ্ধে যশোরের শার্শার মহিষাখোলা গ্রামের মৃত হারুন-অর-রশিদের ছেলে পুত্র মুক্তাজুর রহমান মুন্না (২২), টেংরা উত্তরপাড়ার আব্দুর রহমান গাজীর পুত্র সিরাজুল ইসলাম (৪০) ও চৌগাছা উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের শুকুর আলি মোল্লার পুত্র শফিকুল ইসলাম (৩৫) নিহত হয়। ঘটনাস্থল তিনটি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলীর সন্যাসীতলার মাঠে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের ‘গোলাগুলি’তে জোনাব আলী (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। রবিবার রাত পৌনে ১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, দুটি কার্তুজ, ৩টি রামদা এবং ১ বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। নিহত জোনাব আলী উথলী আমতলা-দক্ষিণপাড়ার মরহুম মহসিন আলীর ছেলে। সে একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী তার নামে জীবননগর থানাসহ দামুড়হুদা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অন্তত ১১টি মাদক মামলা রয়েছে। রবিবার রাতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সবদুল ইসলাম ম-ল (৪৫) নামে এক মাদক চোরাকারবারি নিহত হয়েছে। নিহত সবদুল ইসলাম ম-ল নরেন্দ্রপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। ঘটনাস্থল থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ ইয়াবা এবং একটি হেলমেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিন র‌্যাব সদস্য আহত হয়েছেন। রবিবার রাতে রাজশাহী র‌্যাবের সঙ্গে নগরীর উপকণ্ঠ বেলপুকুর থানার ক্ষুদ্র জামিরা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে লিয়াকত আলী ম-ল (৪১) নামের শীর্ষ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। নিহত লিয়াকত আলী ম-ল জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের নামাজ গ্রাম এলাকার জাক্কার ম-লের ছেলে। তার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় মাদক, চোরাচালান ও অপহরণসহ ১১টি মামলা রয়েছে। সে রাজশাহী অঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। বন্দুকযুদ্ধের সময় দুই র‌্যাব সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, ২ রাউন্ড গুলি, একটি গুলির খালি খোসা, ৮২৩ পিস ইয়াবা এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়েছে। একই রাতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে র‌্যাব-১২ এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ডজনখানেক মাদক মামলার আসামি ও সব ধরনের মাদকের পাইকারি বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায়। ঘটনাস্থল থেকে মাদক, বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়। বন্দুকযুদ্ধে দুই র‌্যাব সদস্যও আহত হন। এদিকে সোমবার ভোরে নরসিংদীর পলাশ থানাধীন ঘোড়াশাল খালিশারটেক এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইমান আলী (২৮) নামে এক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হন। ইমান আলীর বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার নাগরিয়াকান্দি গ্রামে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা ছিল নরসিংদীর বিভিন্ন থানায়। পুরো জেলার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে অন্যতম ছিল ইমান আলী। সোমবার ভোরে গাজীপুর জেলার টঙ্গীর নিমতলীতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রনি ওরফে বস্তি রনি (২৮) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রনি এরশাদ নগর এলাকার হাফিজ মিয়ার ছেলে ছিল। তার বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যাসহ ১৪টি মামলা আছে। এর আগে গত শনিবার রাতে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ময়মনসিংহ, ফেনী, বরিশাল, যশোর, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ছয় মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। এদিকে সোমবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তরফ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ছয় দিনে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছরের শুরু থেকে গত ২১ মে পর্যন্ত ১০২ জন নিহত হয়েছে। উল্লেখিত সময়ে দুই হাজার তিনশ’ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসক বলেছে, মাদক প্রতিরোধে সরকারের কঠোর অবস্থানকে তারা স্বাগত জানায়। তবে কঠোর অবস্থানের কারণে আইন ও মানবাধিকারের নীতিমালার যাতে ব্যত্যয় না ঘটে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, দেশে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের আগ্রাসন ঠেকাতে জল ও স্থল সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে এবং দেশের ভেতরে একযোগে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ইয়াবা তৈরিতে ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপকরণ সিওড্রএফিড্রিন আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কাঁশির ওষুধ তৈরিতে বিকল্প রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে। মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়া ইয়াবা চোরাচালান বন্ধ করতে কোস্টগার্ড, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ), পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে একটি সম্মিলিত কৌশল ঠিক করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ইয়াবার চোরাচালান ঠেকাতে নাফ নদীতে মাছ ধরা পরীক্ষামূলকভাবে সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। ওই সময় জেলেদের সরকারীভাবে খরচ চালানো হয়েছে। মিয়ানমারে থাকা ইয়াবা তৈরির ল্যাবরেটরি বন্ধ ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারসহ নানা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন ফল হয়নি। ইতোমধ্যেই সরকারের আইন মন্ত্রণালয় ইয়াবাকে দেশের এক নম্বর মাদক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দুইশ’ গ্রামের বেশি ইয়াবা বহনকারীদের শাস্তি যাবজ্জীবনের পরিবর্তে মৃত্যুদ- করার আইন হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গবেষণা ও নিরোধ শাখার তথ্য মোতাবেক, বহনে সহজ, সহলভ্য, দামে সস্তা, সেবনের পর মুখে দুর্গন্ধ না হওয়ায় ইয়াবা হালে বেশি জনপ্রিয় নেশা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের ডিন ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ জানান, ইয়াবা সেবনে লিভার, কিডনি, হার্ট ও মস্তিষ্ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। দীর্ঘ সময় ইয়াবা ট্যাবলেট সেবনে মানুষের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ইয়াবা সেবনে শরীর শুকিয়ে যায়। শরীরের ঘা হয়। যা আস্তে আস্তে শরীরে ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। খ্যাতিমান অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান জানান, দেশের স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবার প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘিরে ইয়াবার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইয়াবাসেবী ছাত্রদের মানবিক গুণাবলী আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। তারা নেশার ঘুরে অনেক অনৈতিক ও অবৈধ কাজকে বৈধ বলে জ্ঞান করছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজে। স্বল্প সময়ের মধ্যে ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধ করা না গেলে, অদূর ভবিষ্যতে দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে মরণ নেশা ইয়াবা মারামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে। দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। আস্তে আস্তে মেধাহীন হয়ে পড়বে শিক্ষার্থীরা। ভবিষ্যতে দেশের ওপর সুদূরপ্রসারি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যেই ইয়াবার কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশ, জাতি, সমাজ, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ অনেক কিছুই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ভাষ্য মোতাবেক বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ। আগামী ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। যদিও প্রকৃতপক্ষে দেশে মাদকসেবনকারীর সংখ্যা অন্তত দেড় কোটি। এর মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত। বাকি ৫০ লাখ অনিয়মিত মাদকসেবী। একটি পর্যায়ে তারাও নিয়মিত মাদকসেবী হবে। মাদকসেবীদের মধ্যে ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মিয়ানমারের সীমান্তের সঙ্গে থাকা তিনটি জেলা ও সাতটি উপজেলার সীমান্ত পথে আসছে অধিকাংশ ইয়াবা। সম্প্রতি বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালীর জল পথে ইয়াবা চোরাচালানের নতুন রুট আবিষ্কৃত হয়েছে। মিয়ানমারের ১৫০টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ করে। সারাদেশে সরকার অনুমোদিত ১৬০টি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। মুন্সীগঞ্জে ৪ জন গ্রেফতার ॥ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযান চালিয়ে সোমবার ইয়াবাসহ ৪জন মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে সদর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো আধারিয়াতলার মৃত মুর্শেদের ছেলে মিলন (২৬), দেওভোগ এলাকার কাদির ম-লের ছেলে আবু ছালাম (৩৩), রনছ্ এলাকার সামাদ শেখের ছেলে রবি হোসেন ওরফে রবু (৩৬) ও পটুয়াখালীর পাঙ্গাশিয়া গ্রামের মজিব হালদারের ছেলে লিটন হালদার (৩৪)। অন্যদিকে মিরকাদিম পৌরসভার নৈদিঘির পাথর এলাকার আলম চান মিয়ার ছেলে বি কম হোসাইনকে (২৮) বাংলা মদসহ গ্রেফতার করা হয়।
×