ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ

শেরপুরে মতিয়াসহ ৬ নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, প্রতিবাদে ঝাড়ু মিছিল

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২১ মে ২০১৮

শেরপুরে মতিয়াসহ  ৬ নেতার বিরুদ্ধে  শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, প্রতিবাদে ঝাড়ু মিছিল

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ২০ মে ॥ প্রতিহিংসা ও জেদের রাজনীতির ধারাবাহিকতায় শেরপুরে এবার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁনসহ জেলা আওয়ামী লীগের ৬ নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শনিবার রাতে শহরের চকবাজারের অস্থায়ী কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী পরিষদের এক সভায় শেরপুর-২ (নালিতাবাড়ী-নকলা) আসনের সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর থেকে প্রত্যাহার এবং শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের দলীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ও নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপির পরিচালনায় নির্বাহী পরিষদের ওই সভায় ৭১ সদস্যের মধ্যে ৫২ জন সদস্য উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই সিদ্ধান্তসহ আরও জানানো হয়, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বাতিল এবং নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মোঃ বোরহান উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। কেন বা কোন প্রেক্ষাপটে ওই প্রত্যাহার ও বহিষ্কারের ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সে কথা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা না হলেও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল হাসান উৎপল জানিয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটি গঠনের পর থেকেই ওই নেতারা কমিটির সভা বয়কট করে আসছিলেন। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইতিপূর্বে শোকজ করা হলেও তারা কোন জবাব না দেওয়ায় দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেকই তাদের বিরুদ্ধে ওই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও সাংসদ চাঁনসহ ৬ নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি বৃহৎ অংশ। রবিবার দুপুরে তারই প্রতিবাদে শহরের খরমপুরস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের ওই বহিষ্কার ও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে তথাকথিত, অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ বলে উল্লেখ করে বলা হয়, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জেলা আওয়ামী লীগের এখতিয়ার বহির্ভৃত। এছাড়া সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি স্বাক্ষরিত এক পত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোন কমিটি বা কোন নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠলেও সেই কমিটি বাতিল বা সেই নেতাকে কোনক্রমেই বহিষ্কারের সুযোগ নেই কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ব্যতীত। অর্থাৎ ওই নির্দেশনা অনুযায়ী দলের কাউকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার একমাত্র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেরই রয়েছে। কাজেই জেলা আওয়ামী লীগের ওই সিদ্ধান্তই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। বিষয়টি চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও বিভ্রান্তিকরও। সেইসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান আতিককে ‘দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য ও রাজাকারের সন্তানদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা’ হিসেবে উল্লেখ করে তাকে দলীয় দায়িত্বসহ জাতীয় সংসদের হুইপ পদ থেকে অপসারণ, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়ায় শেরপুর সদর, শহর, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল এবং জেলার দলীয় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে হুইপ আতিকের দুর্নীতি-অপকর্মের তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনসহ জেলা আওয়ামী লীগের তথাকথিত সভার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি করা হয়। অন্যথায় সর্বস্তরের দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ‘দুর্নীতিবাজ’ হুইপ আতিককে অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর রুমান। ওই সময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানুয়ার হোসেন ছানু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক তাপস সাহা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, জেলা যুবলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইফতেখার হোসেন কাফি জুবেরী, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট ফারহানা পারভীন মুন্নী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম সম্রাটসহ বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর বিক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কর্মীরা রাস্তায় হুইপ আতিকের কুশপুতুল দাহ করে। পরে ঝাড়ুসহ এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়। এছাড়া রবিবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। একইভাবে শনিবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে নকলা উপজেলা সদরে। জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলাতেই দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী পরিষদের ওই সিদ্ধান্তকে তথাকথিত অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ বলে উল্লেখ করে শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের দলীয় সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক চাঁন বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুগতদের নিয়ে। কমিটি গঠনে তার যেমন মতামত নেয়া হয়নি, ঠিক তেমনি দলের অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের কমিটিতে নেয়া হয়নি। যে কারণে ওই কমিটি পুনর্গঠনের জন্য দলের ট্রাইব্যুনালে আপীল করা হয়েছে। সেই আপীল নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমরা সভায় অংশগ্রহণ করিনি বলে তাতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কিছু হয়নি। এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, যারা দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা লঙ্ঘন করে মতিয়া চৌধুরীর মতো একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নামে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। একই কথা জানান নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক মাস্টার ও নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ। তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে অপর নেতা শামছুন্নাহার কামাল বলেন, আমাকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে সরাতেই কোন প্রকার সম্মতি না নিয়েই জেলা আওয়ামী লীগে রাখা হয়েছে। কাজেই আমিও ওই কমিটির সঙ্গে নেই।
×