ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অদৃশ্য কারণে এখনও গঠিত হয়নি বিটিআরসির মনিটরিং সেল

ইন্টারনেট প্যাকেজ ও অফারের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়া চলছেই

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২১ মে ২০১৮

ইন্টারনেট প্যাকেজ ও অফারের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়া চলছেই

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ও বিভিন্ন অফার মনিটর করতে গত বছরের শুরুতে বিটিআরসি ‘মনিটরিং সেল’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। অপারেটররা ইন্টারনেট প্যাকেজ ও অফারের নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের কয়েক হাজার অভিযোগ বিটিআরসিতে জমা পড়ায় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে তা বিটিআরসির কেউ বলতে পারছে না। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত ছিল মনিটরিং সেল যে কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করবে। তদন্তে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, আইন অনুযায়ী গ্রাহককে বড় অংকের টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে। মোবাইল অপারেটরগুলোকে এ বিষয়ে বিটিআরসি কয়েক দফা চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অপারেটররা তার কোন গুরুত্ব দেয়নি। এর আগে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এটা এক ধরনের অরাজকতা। গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে মনিটরিং সেল স্থাপন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন অপারেটরকে ছাড় দেয়া হবে না। গ্রাহক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) গত বছরের মার্চে বোর্ড সভায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার দিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। দিনের কোন অংশে কত পয়সা মিনিট বা সেকেন্ড, আবার কোন নির্দিষ্ট অংকের টাকা রিচার্জ করলে ‘এত মিনিটি ও এত এসএমএস ফ্রি’। এসব অফার পাঠিয়ে গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। গ্রাহকরা এসব অফার গ্রহণ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। একইভাবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। মোবাইল গ্রাহকরা এসব এসএমএসের কারণে এখন অতিষ্ঠ। এরপরও অপারেটররা কাজটি করেই যাচ্ছে। বিটিআরসি অপারেটরদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অফার দিয়েই যাচ্ছে। বিটিআরসির বোর্ড সভায় আলোচনা হয়, সাধারণ গ্রাহক কোন না কোনভাবে প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (ন্যূনতম সম্ভাবনা) বা আশঙ্কা রয়েছে এমন কোন প্যাকেজ বা অফার অনুমোদন দেয়া হবে না। গ্রাহকদের ফিটব্যাক ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোন প্যাকেজ বা অফারের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৭ দিন হতে হবে। তবে ঈদ, পূজা, বড়দিন ও নববর্ষ এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা আলাদাভাবে স্বল্প সময়ের জন্য (ন্যূনতম তিন দিন) অনুমোদন দেয়া হবে। যদি কোন অপারেটর বিশেষ দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কম অফার দেয় তাহলে ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন অফার বা প্যাকেজ গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে না। কোন অফার শেষ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাসিক অফার হতে হবে ন্যূনতম ৩০ দিন। মাসিক অফার ৩০ দিনের এক ঘণ্টা কম হলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে সব গ্রাহক বিটিআরসিতে অভিযোগ দিয়েছেন, তারা সমাজের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ। তারা বিটিআরসি পর্যন্ত আসার মতো সুযোগ তাদের রয়েছে। যারা খুব সাধারণ গ্রাহক তারা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হলেও বিটিআরসি পর্যন্ত আসতে পারছেন না। দেশে বর্তমানে ১৪ কোটির ওপরে মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে সাড়ে ৮ কোটি। প্রতিদিন যদি মোবাইল অপারেটররা এক টাকা করেও হাতিয়ে নেয়, তাহলে প্রতিদিন ১৪ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে চলে যাচ্ছে। মাসে প্রায় ৪শ’ ২০ কোটি টাকা গ্রাহকদের পকেট থেকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে এ হিসাব আরও বড় হতে পরে। বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন একজন গ্রাহকের কাছ থেকে কম করে হলে ৫ থেকে ৬ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন অফার ও প্যাকেজের নামে। তাহলে কয় হাজার কোটি টাকা মোবাইল অপারেটরা বিনা সেবায় নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে বিটিআরসি যত উদ্যোগ নিয়েছে ততবারই কোন না কোনভাবে এ উদ্যোগ বেস্তে গেছে।
×