ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৮ কর্মচারী আটক

নিউমার্কেটে ১১ ফাস্টফুড দোকানকে সোয়া ৪ লাখ টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২১ মে ২০১৮

নিউমার্কেটে ১১ ফাস্টফুড দোকানকে সোয়া ৪ লাখ টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেটের ভেতরে ১১ ফাস্টফুড দোকানকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পচা-বাসি ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় খাবার রাখার অভিযোগে এসব দোকানকে জরিমানা করা হয়। এ সময় দোকানগুলোর ৮ কর্মচারীকে আটক ও জরিমানা আদায় করা হয়। অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রবিবার দুপুর বারোটা থেকে দুটা পর্যন্ত ডিএমপি’ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মসিউর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। ডিএমপি সূত্র জানায়, নিউমার্কেটের ভেতরে ফাস্টফুড বিক্রেতা ওয়েস্টার্ন ফুড, এ্যারোমা ফুড, কিং ফুড, ক্যাপিটাল ফুড, আল-আমিন ফুড, সৈকত ফুড, ক্যাপ্রি ফুড ও ফুডপার্ক নামের রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। রেস্টুরেন্টগুলোতে পচা ও বাসি খাবার ছাড়াও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় খাবার তৈরি ও সংরক্ষণ করা হতো। তবে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে প্রত্যেক রেস্তোরাঁ মালিক পালিয়ে যায়। ভ্রাম্যমাণ আদালত মালিকদের না পেয়ে প্রত্যেক রেস্টুরেন্ট থেকে একজন করে কর্মচারীকে আটক করে। এ সময় ১০ দোকানকে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মালিকরা জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে আটক প্রত্যেককে তিন মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে অভিযানের সময় তিনটি দোকান মালিক জরিমানার টাকা সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করে দেয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান জানান, ১১ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায় হলে আটক আটজনকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। তিনি জানান, রাজধানীর নিউ মার্কেটে পচা-বাসি, ফাঙ্গাস পড়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার বিক্রির দায়ে ৮ ফাস্টফুড দোকানকে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান জানান, অভিযানে ক্যাপিটাল, সৈকত, আল আমিন, ক্যাপরি, প্যানজি, ফুড পার্ক, এ্যারোমা কিংস ও ওয়েস্টার্ন ফুডকে জরিমানা করা হয়। অভিযানে ডিএমপি পুলিশের পক্ষে এসি ডিবি (দক্ষিণ) শামসুল আরেফিন ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ গিয়াসউদ্দিন ফারুকী নেতৃত্ব দেন। এছাড়া মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শাহিন ও কোষাধ্যক্ষ মোঃ জুম্মন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, রমজানের তৃতীয় দিনে রবিবার দুপুর পৌনে একটা গবঃ নিউমার্কেটের ফাস্টফুড দোকানে অভিযান চালায় ডিএমপি ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রথমে ডিএমপির ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান ২৫১/২৬২ নম্বর ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকানে ঢুকলেন। ফ্রিজ খুলতেই বেরিয়ে এলো তেলাপোকায় খাওয়া আপেল। একই দোকান থেকে ফাঙ্গাস পড়ে থাকা কাবাব উদ্ধার করা হয়। এরপর একে একে সৈকত, আল আমিন, ক্যাপরি, প্যানজি, ফুড পার্ক, এ্যারোমা কিংস ও ওয়েস্টার্ন ফুড নামক দোকান থেকে বাসি খাবার জব্দ করা হয়। দোকানিরা স্বীকার করেন তারা সুকৌশলে ক্রেতাদের পুরনো বাসি খাবার খাইয়ে থাকেন। একই সঙ্গে দেখা যায়, দোকানটিতে ফাঙ্গাস পড়া কাবাব, নষ্ট চিকেন ফ্রাইড রাইস। এসব দেখে ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান এক কর্মচারীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এসব ফাস্টফুড দোকানে পচা দই, ছত্রাক পড়া জালি কাবাব, পুরনো চটপটিতে ভরপুর। খাবার বাইরে রাখতেই ভন্্ভন্্ করে মাছি উড়তে দেখা যায়। এরপর ফুড পার্ক নামক একটি দোকানে প্রবেশ করে ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান দেখতে পান দোকানের সামনের কাচের সেলফে হাতেগোনা কয়েকটি চিকেন বন সাজানো। কাউন্টারের ভেতর প্রবেশ করে দুটি ফ্রিজ খুলে দেখেন ফ্রিজ খালি। এ অবস্থা দেখে মিডিয়াকর্মীদের ডেকে বলেন, আসেন জাদু দেখেন। তিনি বলেন, এ দোকানেই সবচেয়ে বেশি পচা-বাসি খাবার মিলবে। এ সময় তিনি ডিবি পুলিশের একজন সদস্যকে ডেকে আশপাশে তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেন। হঠাৎ করে ম্যাজিস্ট্রেটের চোখ পড়ে এক কোনার উপরে জলছাদে পর্দা টানানো। পর্দা সরাতেই বেরিয়ে আসে একের পর এক পচাবাসি খাবার। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান জানান, তিন বছরের দায়িত্ব পালনকালে পচা-বাসি খাবার নিয়ে এমন লুকোচুরি আগে দেখেননি। পাশের আরেক ফাস্টফুডের দোকান থেকে তেলের গ্যালন উদ্ধার করা হয়। তেলের গ্যালনে রাখা পদার্থ কি মবিল নাকি তেল জানতে চাইলে কর্মচারীরা তেল বলে জানান। এ সময় তিনি তেল বোলে ঢালতে থাকলে আলকাতরার মতো কালো গাঢ় বস্তু পড়তে থাকে।
×