ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসানচরে স্থানান্তর খবরে ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২১ মে ২০১৮

ভাসানচরে স্থানান্তর খবরে ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গারা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে আরএসও জঙ্গীরা। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার খবরে ভীষণ ক্ষুব্ধ তারা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোহাম্মদ শাহ কামাল বলেছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে নেয়া হবে। উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প পরিদর্শনে তিনি একথা বলেন। ত্রাণ সচিব বক্তব্য শেষ করে আশ্রয় শিবির ত্যাগ করার পর থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। ক্যাম্প কমিটির সদস্যরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে কোথাও নড়াচড়া না করতে জানিয়ে দেয়। শনিবার রাতে তারাবি নামাজের পর রোহিঙ্গা নেতারা বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পে গোপন বৈঠকে বসে। পৃথক ওই বৈঠক শেষে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা (আরএসও জঙ্গী) মুঠোফোনে কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী, কেরুনতলী, পুঠিবনিয়া ও মুচনি ক্যাম্পে জানিয়ে দেয়, যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি পূরণ হয়নি, এর মধ্যে তারা ভাসানচরেও যাবে না, মিয়ানমারেও প্রত্যাবর্তন হবে না। বালুখালী ক্যাম্প পরিদর্শনকালে ত্রাণ সচিব জানান, আগস্ট মাসের মধ্যেই নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে নেয়া হবে এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে। ইতোমধ্যেই তাদের সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সূত্র জানায়, গত বছরে আগস্টের শেষের দিকে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় বহু পুরনো রোহিঙ্গা নেতাকে অতি উৎসাহী হয়ে রোহিঙ্গাদের রিসিভ করতে দেখা গেছে। এরপর থেকে তারা বিভিন্ন সংস্থার ছদ্মাবরণে বিদেশি বিপুল অর্থ এনে রোহিঙ্গা সেবার নামে নয়-ছয় করেছে। এখনও রোহিঙ্গা জঙ্গীরা অনুপ্রবেশকারীদের অসহায়ত্বের কথা বলে বিভিন্ন ধান্ধা ফিকির করে যাচ্ছে। তারা বর্তমানে ধারণা করছে যে, সরকার যদি ক্রমান্বয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে বা ঠেঙ্গারচরে নিয়ে যায়, তাহলে তাদের চিড়া ভিজবে না পানিতে। উখিয়া-টেকনাফের মতো স্বাধীনভাবে ভাসানচরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কাছেও যাওয়া সম্ভব না। এতে সফল হবে না তাদের উদ্দেশ্য। রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের কথা বলে বিদেশী অর্থ এনে মালিক হওয়া যাবে না অঢেল টাকার। তাই তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও ভাসানচরে স্থানান্তর করার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে উঠেছে। সচেতন মহল বলে, সশস্ত্র সন্ত্রাসী কিছু রোহিঙ্গার কারণে অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গারা। নিজ দেশের সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করতে বহু রোহিঙ্গা তাদের সন্তানদের পাঠিয়েছে জঙ্গী তথা সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপ আল ইয়াকিনে। ইতোপূর্বেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আরএসও, এআরএনও, এআরইউ সহ বহু সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেছিল। রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর এ যুদ্ধাংদেহী অবস্থা দেখে মিয়ানমার সরকারের কাছে রোহিঙ্গারা চক্ষুশূল হয়ে ওঠে। ইতোপূর্বে সরকারী অফিস ও দেশটির বাহিনীর ওপর আরএসও জঙ্গীদের হামলে পড়ার পর মিয়ানমার সেনা বাহিনী যখন অপরাধীদের ধরতে অভিযানে নামে, তখনই রোহিঙ্গারা সোজা পথ ধরে অনুপ্রবেশ করেছে এদেশে। এরপর বিভিন্ন ঝামেলা সইতে হয় স্থানীয়দের। লাখ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বইতে হয়েছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা জঙ্গীরা ঘটনা সৃষ্টি করে মিয়ানমারে। সন্ত্রাসীদের সে ঘটনার জের ধরে নানা রকমের বোঝা বইতে হয় বাংলাদেশে। সচেতন মহল বলে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন দাবি পূরণ করবে মিয়ানমার সরকার। তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হয়ে ওই দাবিগুলো পূরণের কথা বলা যুক্তিযুক্ত নয়। নিজদেশে ফিরে নিয়ম অনুসারে নাগরিকত্বের আবেদন করতে রোহিঙ্গা নেতাদের প্রতি স্থানীয়রা অনুরোধ জানিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা বিদেশে অবস্থান করছে, তারা তো আসল বিষয়টি চোখে দেখে না। যেভাবে তাদের বুঝানো হয়ে থাকে, সেটিই আমলে নিচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করলে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা সহজে ওই জায়গায় যেতে পারবে না। পুরো দ্বীপটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এতে তাদের স্বার্থ হাসিল হবে না সন্দেহে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরোধিতা করছে কতিপয় চিহ্নিত রোহিঙ্গা জঙ্গী।
×