ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার টেক্সাসের স্কুলে

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২১ মে ২০১৮

এবার টেক্সাসের স্কুলে

আমেরিকার স্কুলপর্যায়ে বন্দুকের গুলিতে হতাহতের খবর প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার একটি হাইস্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় ১৭ শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ক্ষত না শুকোতেই আবার গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটল। এবার টেক্সাসের সান্তা ফে হাই স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় কমপক্ষে ১০ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এবারও স্কুলের একজন শিক্ষার্থীই বন্দুক চালিয়েছে। তার বয়স ১৭ বছর। দেখা যাচ্ছে স্কুলে আক্রমণকারীরা সংশ্লিষ্ট স্কুলছাত্র। এমন একটি বীভৎস তথা অসুন্দর মনোভাবের উৎস অবশ্যই দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ। এই সমাজে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সমাজ বিচ্ছিন্নতা। ব্যক্তিস্বার্থ লোভ হিংসা নৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে সর্বস্তরে। সঙ্কট গ্রাস করছে মনন জগতকেও। এই সমাজে ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতিও লাভের নিরিখে বিচার করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই সমাজে জন্ম নিচ্ছে হতাশা ও ঔদ্ধত্য। এসবই জন্ম দিচ্ছে মানসিক বিপর্যয়ে। আমেরিকা বিশ্বের দেশে দেশে হানাহানি, রক্তপাত, কোটি কোটি ডলারের যুদ্ধ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। যা আসলে বন্দুক সংস্কৃতি তথা হত্যার সংস্কৃতি ছাড়া কিছু নয়। তারা তৈরি করেছে এমন আরও অসংখ্য হলিউডি ফিল্ম ও কমিকস চরিত্র। এ সংস্কৃতির বীজ এখন খোদ আমেরিকার সমাজজীবনকে গ্রাস করছে। পুঁজিবাদী সঙ্কটের গর্ভে জন্ম হচ্ছে এমন অসংখ্য মানসিক বিকারগ্রস্ত ঘাতকের। ইতিহাস থেকে জানা যায় সামান্য অসন্তোষের ফলস্বরূপ কথা কাটাকাটির জের ধরে দেড় শ’ বছর আগে আমেরিকার স্কুলে প্রথম গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের হামলা বাড়তে থাকে। আর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে গোটা জাতি বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। উল্লেখ্য, তখন আমেরিকায় চলছিল সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর কার্যকাল। তখনকার সামাজিক অবস্থার পটভূমিতে বন্দুকের মালিকানার দাবিও জোরদার হয়। যদিও তখন পশুপাখি শিকার এবং বন্য জন্তুর উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষার তাগিদে খামার মালিকরা আগ্নেয়াস্ত্র কিনতেন। যুগের চাহিদার সঙ্গে মানুষের রুচিবোধ, মনুষ্যত্ব ও ধ্যানধারণায় ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। এ্যাসল্ট রাইফেল এবং সামরিক বাহিনীর ব্যবহার্য আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতা বিদ্যালয়ে মানুষ খুনের মহড়ার সূচনা করেছে। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বার বার দেশে আগ্নেয়াস্ত্র আইন নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন। কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়নি। কারণ মার্কিন কংগ্রেসে এর পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন মেলেনি। পলিটিফ্যাক্ট পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে ১৯৬৮ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত বন্দুক বা পিস্তলের গুলিতে আমেরিকায় ১৪ লাখ মানুষ মারা গেছে। গত বছর অক্টোবরে দ্য গার্ডিয়ান একটি সংখ্যাতত্ত্ব প্রদান করে। সেখানে দেখা যায় বিগত ১০৬৬ দিনে আমেরিকায় ১০৫২টি গুলির ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন একটি করে দুঃসংবাদ। এ তো সাম্প্রতিককালের কথা। গত দুই দশকের চিত্র কী ভিন্ন ছিল আমেরিকায়? ২০০১ থেকে শুরু“করে ২০১০ সালের সংক্ষিপ্ত তালিকার দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, স্কুলে, পার্কে বা কর্মক্ষেত্রে আমেরিকায় গুলি চলেছে বছর বছর। এতে হতাহতের সংখ্যাটিও আশঙ্কাজনক। মার্কিন সমাজের অভ্যন্তরীণ চিত্র মাঝেমধ্যেই স্কুলে হতাহতের ঘটনার ভেতর দিয়ে খোলাসা হয়ে ওঠে। বহির্বিশ্বে মোড়লিপনায় ওস্তাদি দেখানোর নানা কসরত করতে দেখা যাচ্ছে নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। নিজ দেশের এই কঠিন সমস্যাকে তিনি কিভাবে মোকাবেলা করেন বিশ্ববাসী কৌতূহল নিয়েই তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
×