ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২০ মে ২০১৮

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রত্যাশা

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এবার বাজেট ঘোষিত হবে নির্বাচনী বছরকে সামনে রেখে। তাই বাজেট নিয়ে মানুষের রয়েছে আশা, আকাক্সক্ষা, রয়েছে শঙ্কাও। প্রতিবছরই বাড়ছে বাজেটের আকার। বরাবরের মতো এবারও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁরও এটি শেষ বাজেট। সম্প্রতি সচিবালয়ে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন দিক ঠিক করতে সম্পদ কমিটির বৈঠক হয়েছে। বৈঠক সূত্রে, নির্বাচনী বছর হওয়ার কারণেই রাজস্ব সংগ্রহে সরকারের দিক থেকে নতুন নতুন পথ খোঁজা হবে না। ফলে রাজস্ব সংগ্রহ স্বাভাবিকভাবে যা বাড়বে, তাতেই সরকার সন্তুষ্ট থাকবে। এসব ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বৈঠকে জানিয়েছেন, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট হবে ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার। আগামী বাজেটে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এতে মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে মূল এডিপির আকারের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন যোগ করলে তা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে সূত্রগুলো জানায়। বৈঠকে এডিপির বাস্তবায়ন হার নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং এ জন্য নতুন উপায়ের চিন্তা করছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাস্তবায়ন হারের তুলনায় দ্বিতীয় ছয় মাসে যে হার দেখানো হয়, তা অনেকটা অবাস্তব বলেও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। আবার এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকেও অনেকে দায়ী করেন। কারণ অর্থ বিভাগ টাকা ছাড় করতে দেরি করে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তাহলে বাকি তিন মাসে কীভাবে এডিপির ৫৫ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব? আগামী অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকবে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির হার আগামী অর্থবছরের জন্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বিবিএসের মাসওয়ারি হিসাবে দেখা যায়, গত মার্চে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আগামী বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বাড়তে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় এ খাতে তেমন ভর্তুকি রাখতে হয়নি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকায় সম্পদ কমিটির বৈঠকে জ্বালানি খাতে বড় আকারের ভর্তুকি রাখার পরামর্শ এসেছে। এ ছাড়া আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারী কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ দিতেও ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। গৃহনির্মাণ খাতে জনগণকে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হলেও সরকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে নেয়া হবে ৫ শতাংশ। বাকি টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার। দেশের উন্নতি হলেও সমাজে বাড়ছে আয়বৈষম্য। সে জন্য জাতীয় বাজেটে এই বৈষম্য কমানোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কেমন চাই জাতীয় বাজেট ২০১৮-১৯’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আইসিএবি কার্যালয়ে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য এম শামসুল আলমের মতে- বৈষম্য বাড়ছে ঠিক। আরও বেশি বাড়লে তা হবে ভয়ঙ্কর বার্তা। তবে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ধরা হচ্ছে। এটা রক্ষা করতে হবে। প্রতিবছর দেশে ২২ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। সরকারী হিসাবে বছরে মাত্র ১৩ লাখ কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কাজেই আমাদের বেকারের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশের ৪ কোটি ৮২ লাখ লোক কোন কাজ করে না! একা সরকার কিংবা কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই কর্মসংস্থান সম্ভব নয়। বিপুল কর্মসংস্থান একমাত্র তখনই সম্ভব, যদি এই বিপুল তরুণ-তরুণীর ৫ থেকে ৭ শতাংশ নিজের কর্মসংস্থান নিজে করে, যদি তারা ‘চাকরি না খুঁজে চাকরি দেয়’। আর সেটি সম্ভব হবে, যদি আমরা তাদের জন্য উদ্যোক্তাবান্ধব একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি। বলা বাহুল্য, এমন কাজের সূচনা হতে পারে কেবল একটি উদ্যোক্তাবান্ধব বাজেটের পথ ধরে। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মহাসড়কে রয়েছে। বিভিন্ন সূচকে লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে গত এক দশকে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এমনটাই আশা করা যায়। লক্ষ্য রাখা দরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেন মধ্যস্বত্ব ভোগী বা সুবিধা ভোগীদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের সকল শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে বিস্তৃত থাকে। তাহলেই এ প্রবৃদ্ধি হবে টেকসই। দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্তদের সংসার চালানো। বছর পেরোলেই বেড়ে যায় বাসা ভাড়া। বাড়ির মালিকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলছে লাগামহীম। অনেক পরিবার প্রতি মাসের বাসা ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে ন্যূনতম সঞ্চয়টুকু করতে পারছে না। তাই বাসা ভাড়া বৃদ্ধির ওপর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আরোপ করা যেতে পারে। বর্তমান সরকার কৃষির ওপর শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কৃষির উন্নয়নে বাজেটে ধারাবাহিকভাবে নানা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু দুঃখের বিষয় যাদের ঘাম ঝড়িয়ে আমাদের এই সাফল্য, সেই কৃষকরা পাচ্ছে না ন্যায্য মূল্য। তাদের জন্য এবারের বাজেটে কৃষিঋণ মওকুফের ব্যবস্থা করলে অসহায় কৃষকরা হবে আরও উদ্যমী। জাতিকে শিক্ষিত করতে বরাবরই শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তাই শিক্ষা খাতে বাজেট অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বাস্তবায়নে আরও কড়াকড়ি হলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। মানুষের জীবন মানের উন্নয়নের পাশাপাশি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান, প্রস্তাবিত নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহকে দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নেয়া হোক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব হলে। সুফল পাবে দেশ ও দেশের জনগণ। ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হবে আরও উজ্জ্বল।
×